মো. রুবেল আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি (টাঙ্গাইল)
জীবিকার তাগিদে মানুষ কত রকমে পেশায় যুক্ত থাকেন, যমুনার পতিত চরাঞ্চলকে ঘিরে সম্ভাবনার আরেক দুয়ার খুলেছে কৃষক ও প্রাণিসম্পদের। যমুনার বুকে ঘাস চাষ করে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। টাঙ্গাইলের গোপালপুর ও ভুঞাপুর উপজেলার অংশে জেগে উঠা যমুনা নদীর বিভিন্ন চরে চাষ হচ্ছে উন্নত জাতের পাকচং, নেপিয়ার ঘাসসহ দেশীয় বিভিন্ন জাতের ঘাস। এতে মিটছে গবাদিপশুর খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা, কোন প্রকার রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণ ছাড়াই হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছে গরু, ছাগলসহ অন্যান্য গবাদিপশু।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, যমুনার তীরবর্তী গোপালপুর উপজেলার নলিন ও সোনামুই বাজারে বিক্রির জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন চরের ঘাস চাষীরা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘাস নিয়ে আসেন অন্তত ১০০-১২০জন ।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যানুযায়ী প্রতিদিন কেনাবেচা হচ্ছে দুই টন ঘাস ।
দুর্গম চর এলাকা থেকে যারা নৌকায় ঘাস নিয়ে আসেন, তারা সময়মতো নৌকায় ফেরৎ যেতে পাইকারের কাছে ঘাস বিক্রি করে চলে যান । যমুনা তীরবর্তী নলিন, সোনামুই, শাখারিয়া ও জগৎপুরাসহ অন্যান্য গ্রামের অনেক কৃষক যমুনায় ঘাস চাষ করে এনে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
প্রতি আটি পাকচং , নেপিয়ার ঘাস বিক্রি হয় চল্লিশ থেকে ষাট টাকায়, দেশীয় জাতের ঘাস বিক্রি হয় পনেরো থেকে বিশ টাকায়।
কৃষকের দেয়া তথ্যানুযায়ী, যমুনার উঁচু চরে চাষ করা ঘাস বছরের নয়মাস ভালো ফলন পাওয়া যায়, তীব্র শীতের তিনমাস ফলন কম হয়। প্রতি সাইকেল ঘাসচাষে সার, সেচ ও অন্যান্য খরচ হয় বিঘা প্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা এবং বিক্রি আসে দশ থেকে পনেরো হাজার টাকা। দেড় মাস পরপর ঘাস কেটে বিক্রির উপযোগী হয় বলে জানান কৃষকরা।
জগৎপুরা গ্রামের মমিনুল ইসলাম বিক্রি করছিলেন স্থানীয়ভাবে সুতা ঘাস নামে পরিচিত দেশীয় জাতের ঘাস। তিনি জানান এগুলো চাষে কোন খরচ নাই, চরে বীজ বুনে রাখলেই হয়। এগুলোর বিশ টাকা আটি বিক্রি হয়, ছাগলকে খাওয়ানোর জন্য মানুষ কিনে নেয়।
যমুনা তীরবর্তী শাখারিয়া গ্রামের ঘাসচাষী হারুন অর রশিদ বলেন, যমুনার চরে আট বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে খরচবাদে বিঘা প্রতি সাত-আট হাজার টাকা লাভ থাকে। বছরে নয়বার ঘাস কেটে আনা যায়।
জগৎপুরা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমি চরে দুই বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস লাগিয়েছি । ফলন ভালো হওয়ায় ভালো পরিমাণ একটি অর্থ আয় হবে ।
ঘাস ক্রেতা নলিন গ্রামের মাহবুব আলম জানান, নলিন বাজার থেকে ঘাস কিনে প্রতিদিন দুটো গরু লালনপালন করতেছি। এতে অনেক উপকৃত হচ্ছি। খড় কিনতে হচ্ছে না, ভুষি ও খাদ্য ছাড়াই গরু হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছে। গরু তৃণভোজী প্রাণী তাই ঘাস থেকে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি পাচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শরীফ আব্দুল বাসেত বলেন, চরাঞ্চলে উৎপাদিত পাকচং, নেপিয়ার, ভুট্টা ঘাস নলিন ও সোনামুই বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এটা প্রাণিসম্পদের জন্য শুভকর ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন।