কেমন আছেন নোয়াখালীর কৃতিসন্তান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রবীণ রাজনীতিক সাবেক এমপি ও আওয়ামীলীগ নেতা অধ্যাপক মোহাম্মদ হানীফ। জানার আগ্রহে একান্তে মুঠোফোনে খবর নিয়ে জানা গেল, তিনি অসুস্থ দীর্ঘদিন থেকে ঢাকা বসুন্ধরায় নিজ বাসায় ডাক্তারের চিকিৎসাধীন রয়েছেন।এমতাবস্থায় সকলের নিকট দোয়া চেয়েছেন সুদীর্ঘ এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এই নেতা।
জম্মঃ অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ ১৯৩৯ সালে নোয়াখালীর সদর উপজেলার অশ্বদিয়া ইউনিয়নে নানা প্রয়াত স্বনামধন্য সুফিসাধক শাহ্ আবদুস সামাদ খলিলপুরীর মাতৃলায়ে জন্মগ্রহন করেন।মাতুলালয়ে জন্ম হলেও অধ্যাপক হানিফের পৈতৃক নিবাস বর্তমান সোনাইমুড়ী উপজেলার ৮ নং সোনাপুর ইউনিয়নে। পিতাঃ বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন প্রয়াত মৌলভী মোহাম্মদ ইব্রাহিম। মাতা বাংলা আরবী শিক্ষায় স্বশিক্ষিত উলফতের নেছা।
অতি অল্পবয়সে পিতার মৃত্যুতে অধ্যাপক হানীফ লালীত পালিত ও শৈশবের কৈশোরে ছোট বেলায় বড় বোন ও বড় ভগ্নিপতির একান্ত সান্নিধ্যে ছিলেন।
শিক্ষাঃ শিক্ষা জীবনের প্রাথমিক পাঠ শুরু করেন প্রথমে স্থানীয় বারাহিপুর, কালিকাপুর ও অশ্বদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।পরবর্তীতে মৃধারহাট জুনিয়র হাইস্কুল থেকে আমিশা পাড়া, নোয়াখালী জিলা স্কুল, সর্বশেষ মাইজদী হরিনারায়ণপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৫৯ সালে মেট্রিকুলেশন,
১৯৬১ সালে চৌমুহনী এসএ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক,১৯৬৩ সালে একই কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেন। পরবর্তীতে আইন বিষয়ে এল এল বি পাস করে এ্যাডভোকেট শীপ লাভ করেন।
রাজনীতিঃ অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের শিক্ষা শান্তি প্রগতির রাজনীতির সাথে জড়িত হন এবং ১৯৫৮ সালে নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়ীত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনে জেলা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ও একই সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়ীত্ব পালন করেন। এসময় তাঁর নেতৃত্বে গড়ে তোলা আন্দোলনের ফলে নোয়াখালী জেলার সদর দপ্তর মাইজদীর পরিবর্তে ফেনীতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া রহিত হয়।
তিনি ১৯৬৪ সনে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি,১৯৬৫ সালে গঠিত ছাত্রলীগের গোপন সংগঠন বেঙ্গল লিবারেশন ফোর্সের (বিএলএফ) কেন্দ্রীয় সদস্য, ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ), ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজনগর ক্যাম্পের ক্যাম্প ইন চীফের দায়ীত্ব পালন করেন।
১৯৭২ সালে মেম্বার অব কনষ্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলী (এম সিএ), ডঃকামাল হোসেনের সাথে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণেতা কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য(এমপি) নির্বাচিত হন।১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত নোয়াখালী জোলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮১ থেকে ৮৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কৃষি সম্পাদকের দায়ীত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও একাধারে কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন।
পেশাঃ পেশাগত জীবনে তিনি বঙ্গবন্ধুর উৎসাহে ১৯৬৬ সালে কিছুদিন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ইত্তেফাকের সাব এডিটর এর দায়ীত্ব পালন করেন। একই সালে তখন পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি থাকাকালে তিনি নোয়াখালী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনায় করেন এবং ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্ণর মোনায়েম খাঁর আর্দশের রাজনৈতিক কারণে তিনি কলেজের অধ্যাপনার চাকুরী হারান।
ব্যাক্তিগত জীবনে একজন নিরঅহংকার বোধের মানুষ সদা হাস্য উজ্জল সদালাপী বন্ধুসুলভ এই নেতা স্বাধীন দেশে প্রথম নোয়াখালীর বৃহত্তর বেগমগঞ্জে কৃষি সমবায় সমিতি প্রবর্তন করে এতদাঞচলে কৃষি উৎপাদনে কৃষকদের মাঝে সুনাম অর্জন করায় তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে স্বর্ণ পদক পুরস্কার লাভ করেন বলে জানা যায়।
আমরা এই স্বনামধন্য নেতার দ্রুত সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
নোয়াখালী
01819686233
06/11/2020