আহসান হাবীব লায়েক জকিগঞ্জ সিলেট প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ দেশের প্রায় সকল শ্রেণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তি, পাবলিক পরীক্ষার ফরম ফিলাপ, উপবৃত্তি ইত্যাদি কাজে ডিজিটাল জন্ম সনদ আবশ্যক। জকিগঞ্জের সুলতানপুর ইউনিয়নের কাচারচক গ্রামের লিপি বেগম স্থানীয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার জন্ম নিবন্ধন কার্ড আছে তবে ডিজিটাল নয়, তাই তার পিতা রিয়াজ উদ্দিন সুলতানপুর ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারে উদ্যোগতা বদরুল হাসানের কাছে যান। তিনি মেয়ে লিপি বেগম স্ত্রী নাজমা বেগম এবং তার নিজের নিবন্ধনকৃত ডিজিটাল কার্ড চান। বদরুল হাসান ডিজিটাল কপির জন্য পাঁচশত টাকা দাবি করেন। অনেক কাকুতি মিনতি করে দিনমজুর রিয়াজ উদ্দিন তিনশত টাকা বদরুল হাসানকে প্রদান করে তিনটি ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন কার্ড আনেন। বাড়িতে এসে দেখেন ডিজিটাল কার্ডে মেয়ের নাম শিল্পি বেগম তার নিজের নাম রিয়াজ আহমদ এবং স্ত্রীর পিতার নাম কখাই মিয়ার স্থলে কামাই মিয়া লিখা রয়েছে। তিনটি কার্ডেই তিন ধরনের ভুল। বিষয়টির কারণ জানতে এবং সংশোধন করতে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায় পরিষদের ভলিয়ম বহিতে সঠিক তথ্য থাকা সত্ত্বেও ডিজিটালে ভুল লেখা হয়েছে। ইলাবাজ গ্রামের আখলাখ উদ্দিন জানান তার স্কুলগামী ছেলের ডিজিটাল কার্ডে কাহের আহমদ এর স্থলে ফাতের আহমদ, মেয়ে ফারহানা আক্তার বিউটি এর স্থলে শুধু ফারহানা আক্তার লেখা রয়েছে। এ পরিকল্পিত ভুল সংশোধনের জন্য বদরুল হাসান তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। সখড়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক মহিলা বলেন, আমার বিদ্যালয়গামি তিন জন সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদ ডিজিটাল করাতে বদরুল ইসলামের হয়রানির শিকার হই। বাধ্য হয়ে তাকে দুই হাজার পাঁচশত টাকা দিয়ে ডিজিটাল করাই। এর পর ও প্রতিটি কার্ডে একাধিক ভুল রয়েছে। গত ২২ জুন ২০২১ এবং ২৫ জুন ২০২১ সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার মস্তফা কামাল তার ফেইসবুক আইডিতে উদ্যোগতা বদরুল হাসানের পরিকল্পিত প্রতারনার বিষয় নিয়ে তথ্য নির্ভর দুটি লেখা প্রকাশ করেন। মুহূর্তের মধ্যে লেখাটি শতাধিক শেয়ার হয় এবং বদরুল হাসানের অপসারন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য অনলাইনে ভুক্তভোগীরা দাবী জানান। Dilwar Hussin Sojib নামে একটি আইডি থেকে লেখা হয়,”এই প্রতারক অপরাধির উপযুক্ত বিচার চাই।সে আমাকেও বলেছে দুই হাজার টাকা দিতে হবে, সে দুই দিনের ভেতর জন্ম নিবন্ধনের বয়স পরিবর্তন করে দেবে।”Sjeda Akther নামে আইডি থেকে মন্তব্য করেন,” বদরুলের সকল অনিয়মের সাথে জড়িত চেয়ারম্যান এ সব ভাগ নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছে চেয়ারম্যানকে এর তার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতির কারনে সচিব দীর্ঘদিন সার্ভার বন্ধ রাখেন এবং একটি স্টাম্পে স্বাক্ষর নিতে পুনরায় দায়িত্ব দেন। হাজার হাজার টাকা লুটিয়ে নিচ্ছেন চেয়ারম্যান ও বদরুল।” এ মন্তব্যের বিপরীতে Mohammad Mumitmumit নামে আইডি থেকে বলা হয়,” এটা সঠিক নয়”। Mamunur Rashid, নামে একটি আইডি থেকে লেখা হয়,” হাতের লেখা জন্ম নিবন্ধনে সঠিক ছিলো সবকিছু। রেকর্ড বইয়ে ও ঠিক আছে কিন্তু অনলাইনে নিবন্ধনের সময় সে ইচ্ছে করে বিভিন্ন ধরনের ভুল লিখা লিখেছে। তাই তারই পাতা ফাদে মানুষ অটোমেটিকলি পড়তেছে। আগে গাছ লাগাইছে এখন তার ফল খাইতেছে।” সাবেক মেম্বার মোস্তফা কামাল বলেন, ২০১০ সালে উদ্যোগতা বদরুল হাসান প্রতি কার্ড এক টাকার বিনিময়ে অনলাইন করেছে। তখন পরিকল্পিতভাবে প্রায় প্রত্যেকের তথ্যে কোন না কোন ভুল তথ্য দিয়ে অনলাইন করেছে, পরবর্তিতে মোটা অংকের টাকায় সংশোধনের হীন আশায়।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্যোগতা বদরুল হাসানের অবৈধ উপার্জনের ও নাগরীক হয়রানির বিষয়টি তদন্তে দেখা যায়, ইউনিয়নে প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যের ডিজিটাল কার্ডে বিভিন্ন ভুল রয়েছে। বিশেষ করে বিদেশগামিদের কাছ থেকে সংশোধনের নামে মোটা অংকের টাকা নেয়া হচ্ছে। অপর দিকে অসংখ্য শিক্ষার্থী সরকারের দেয়া উপবৃত্তির টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কিছু শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ছে। জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য একশত টাকা এবং নাম, ঠিকানা সহ অন্যান্য বিষয় সংশোধনের জন্য আবেদন ফি পঞ্চাশ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। এ ছাড়া সংশোধনের পর সনদের কপি বিনা ফিসে সরবরাহের কথা বলা হয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউ পি সদস্য বলেন, বদরুল ইচ্ছাকৃতভাবে এ সব ভুল করে আমাদের ও প্রশ্নের সম্মুখীন করছে। এ ব্যাপারে উদ্যোগতা বদরুল হাসানের মতামত জানতে তার ব্যাবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে রিসিভ হয়নি। চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন,” ই তথ্য সেবা কেন্দ্রে আসা মানুষের জন্ম নিবন্ধন করে দেয়ার সময় ভালো করে দেখার জন্য বলা হয়। অনেক জন্ম নিবন্ধন আমার দায়িত্বে আসার পূর্বে ভুল ইস্যু হয়েছে, এতে জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তিনি যে কোন সমস্যার ক্ষেত্রে তার সাথে কিংবা ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেন।উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে “ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার” (ইউডিসি) একযোগে উদ্বোধন করেন। ‘ জনগনের দোড়গোড়ায় সেবা’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে ইউডিসির যাত্রা শুরু হয়েছিল।ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউডিসি পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউডিসির কার্যক্রম সমূহ মনিটরিং করে থাকেন। এ কাজে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করেন ইউনিয়িন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। জেলা তথ্য কর্মকর্তা ইউডিসির প্রচার প্রচারনায় সম্ভবপর উদ্যেগ গ্রহণ করে থাকেন।