মাইদুল ইসলাম, জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করছিল এক কলেজছাত্রী। গত ৫ দিন ধরে এই অনশন অনড় রেখে অবশেষে তার দাবি পূরণ হলো। দু্ই পক্ষের সম্মতিতে কাবিননামা করার পর অনশন ভাঙেন ওই ছাত্রী।
শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাদুল্লাপুর শহরের রবি সাহার বাড়িতে কাবিননামা সম্পাদন করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে পুজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে সাদুল্লাপুর শহরের এক বাড়িতে বৈঠক করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই প্রেমিক জুটির বিয়ের জন্য কাবিননামার সিদ্ধান্ত নেয়।
সাদুল্লাপুর উপজেলার দায়িত্বরত হিন্দু রেজিষ্ট্রার অজিৎ কুমার মণ্ডল এই কাবিনমানা সম্পন্ন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, পুজা উৎযাপন পরিষদের নেতা রনজিত বকসী সূর্য, কুশধ্বস প্রামানিক, প্রভাত চন্দ্র অধিকারী, বাবলু সাহা, উত্তম সাহা, জয়ন্ত কুমার মণ্ডলসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা প্রভাত চন্দ্র অধিকারী বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য বৈঠক করা হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের সিদ্ধান্তে ছেলে শুভ সাহার ফুফু (পিসি)’র বাড়িতে ওই দুজনের বিয়ের জন্য কাবিননামা সম্পাদন করা হয়েছে। আগামী আষাঢ় মাসের প্রথম সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গতঃ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ওই ছাত্রী দুই বছর আগে রংপুর সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। একই কলেজে তার সহপাঠী ছিল সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর (সাহাপাড়া) গ্রামের দুলাল সাহার ছেলে শুভ সাহা। এক সময় দুজনের মধ্যে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে তারা। শুভ সাহা কথা দিয়েছিল এইচএসসি পাস করার পরই দুজনের বিয়ে হবে। পরীক্ষার সদ্য ফলাফলে দুজনই উত্তীর্ণ হয়। এরপর বিয়ের জন্য চাপ দেন ছাত্রীটি। কিন্ত টালবাহানা করতে থাকে শুভ সাহা। বাধ্য হয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি শুভ সাহার বাড়িতে ছুটে আসেন মেয়েটি। সেখানে বিয়ের দাবিতে তিন দিন অবস্থান চলাকালে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় শুভ সাহা।
এ পরিস্থিতি নিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে সালিশ বসে শুভ সাহার বাড়িতে। এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু পিতৃহারা ছাত্রীর মা ছাড়া নিজস্ব লোকজন না থাকায় সুযোগ নেন সমাজপতিরা। শুভকে দিয়ে বিয়ে হবে না মর্মে একক সিদ্ধান্ত নেন তারা। তবুও অনশন ছাড়েনি ছাত্রীটি। হয় বিয়ে না হয় আত্মহত্যা, এমন সিদ্ধান্ত অনড় রেখে প্রেমিকের বাড়িতে চলছিল তার অনশন।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে টনক নড়ে অনেকের। অবশেষে বিষয়টি নিরসনের জন্য তৃতীয় দফায় বৈঠক বসা হলে শুক্রবার রাতে দুই পরিবারের অভিভাবকদের সম্মতিতে প্রেমিক জুটির বিয়ের সিদ্ধান্তে কাবিননামা সম্পাদন করা হয়।
১৪ views