আন্দোলনের ১৩ম দিনে ও অনশনের দীর্ঘ ১৬২ ঘণ্টার বেশি সময় পর বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের হাতে অনশন ভেঙেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত ২৮ শিক্ষার্থী।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে সস্ত্রীক ক্যাম্পাসে এসে পানি পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ ৭ দিনের অনশন ভাঙান শাবিপ্রবির এই সাবেক শিক্ষক।
এসময় ড. জাফর ইকবাল বলেন, আমি এখানে আসতে চাইছিলাম না। কারণ তোমরা আমরা কথা না শুনলে তাই! তবে আমার ছেলে-মেয়েদের ওপর বিশ্বাস ছিল, তাই এসেছি। আমি সংকল্প করে এসেছি তোমাদের অনশন ভাঙিয়ে তারপর আমি সিলেট ছাড়ব। আমি চাই তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাও, তবে অনশন ভেঙে আন্দোলন করো। আন্দোলন আর অনশন ভিন্ন জিনিস! আমি এসেছি তোমাদের অনশন ভাঙাতে। পরে সকালে শিক্ষার্থীরা তার হাতে পানি পান করে অনশন ভাঙেন।
শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করেছিলাম যারা অনশন করতেছে তাদের যথাযথভাবে মেডিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছে। তবে এখানে এসে যা দেখলাম তা দেখে খুবই হতাশ হয়েছি। চিকিৎসা না দিয়ে ডাক্তাররা খুবই অমানবিক কাজ করেছেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে জাফর ইকবাল বলেন, এই কয়দিনে তোমরা দেশের সব মহলকে দেখিয়ে দিয়েছ। তোমাদের কথা সবার কাছে পৌঁছে গেছে। আমি নিজেও এখান থেকে ফিরে তোমাদের কথা পৌঁছে দেব। আমি চাই না তোমরা নিজেদের জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দাও। তাই তাড়াহুড়ো করে চলে এসেছি তোমাদের দেখতে আর অনশন ভাঙাতে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে টাকার অনুদান তুলে দিয়ে তিনি বলেন, আমি তোমাদের হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দিলাম। এখন দেখি আমাকে কে গ্রেফতার করে? আমি দেখতে চাই কারা আমাকে অ্যারেস্ট করতে আসেন।
এ সময় ড. ইয়াছমিন হক বলেন, আমার মনে হয় যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে তা নামসর্বস্ব। এখন প্রতিটি ঘণ্টা তোমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই তোমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন চালিয়ে যাও। তবে এজন্য তোমাদের বেঁচে থাকতে হবে। আমি এর আগে অনেক আন্দোলন দেখেছি এবং করেছি। তবে এমন নিষ্ঠুর আচরণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করতে দেখিনি!
শিক্ষার্থীরা বলেন, এতদিন আমাদের কথা শোনার মতো কেউ ছিল না। আমরা স্যার আপনাকে বিশ্বাস করি। আপনার আশ্বাসে আমরা অনশন ভাঙছি। তবে আমাদের কথা দিয়ে আপনারা তা ভাঙবেন না সে বিশ্বাস আমাদের আছে।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) আন্দোলনকারীরা তাদের সহপাঠীদের অনশন ভাঙার ঘোষণা দেন। তবে তারা চেষ্টা করলেও অনশনকারীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকেন এবং অনশন চালিয়ে যান। এর আগে শিক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করে তা সফলতার পথ পায়নি। অবশেষে শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে ড. জাফর ইকবালের ভরসা পেয়ে অনশন ভাঙতে সম্মত হন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে ভোর চারটায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সস্ত্রীক উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত ১৯ জানুয়ারি বিকেল তিনটা থেকে ২৪ শিক্ষার্থী আমরণ অনশন শুরু করেন। এর মধ্যে অনশনকারী এক শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্য অসুস্থ হওয়ায় অনশন ভেঙে বাড়ি ফিরে গেছেন তিনি। পরে গত রোববার সেখানে নতুন করে আরও পাঁচ শিক্ষার্থী যোগ দিয়েছিলেন।
উপাচার্যের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে অনশন ভাঙলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।