আজ শুক্রবার পবিত্র আশুরা। কারবালার শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনার এই দিনটি ধর্মীয়ভাবে বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও শোকাবহ একটি দিন। হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ আজ শুক্রবার (২০ আগস্ট)। আরবি ‘আশারা’ শব্দের অর্থ দশ।
হিজরি ৬১ সালের ১০ মহরম মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.) ও তার পরিবারবর্গ কারবালা প্রান্তরে শাহাদতবরণ করেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় তাদের এ আত্মত্যাগ মুসলিম উন্মাহর জন্য এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.), তার পরিবারের সম্মানিত সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহচররা বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালায় শহীদ হন।
ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য তাদের এই আত্মত্যাগ ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। কারবালার শোকাবহ ঘটনার স্মৃতিতে ভাস্বর পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী আমাদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে, প্রেরণা যোগায় সত্য ও সুন্দরের পথে চলার।
এটি একটি ঘটনাবহুল দিন। মহান আল্লাহ তায়ালা এ দিনেই আরশ, কুরসি, লওহ, কলম, আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং এ দিনেই আদম (আ.) কে সৃষ্টি করে তাকে বেহেশতে স্থান দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে শয়তানের প্ররোচনায় ভুলের কারণে এ দিনেই তাকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে আল্লাহ প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন।
হযরত নুহ (আ.) সাড়ে ৯০০ বছর ধরে তাওহিদের বাণী প্রচারের পর যখন সেই যুগের মানুষ আল্লাহর বিধিনিষেধ পালনে অস্বীকৃতি জানায়, তখন নেমে আসে আল্লাহর গজব। ফলে হযরত নুহ (আ.) এর সম্প্রদায় ধ্বংস হয়েছে। পবিত্র আশুরার দিনেই হযরত ইব্রাহিম (আ.) শত বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন।
তবে কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা ছাড়াও ইসলামের ইতিহাসে এই দিনে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। হযরত মুসা (আ.) ফেরাউনের জুলুম থেকে এই দিনে পরিত্রাণ লাভ করেছিলেন তার অনুসারীদের নিয়ে নীল নদ পার হয়ে। তাদের পেছনে থাকা ফেরাউন সদলবলে নীল নদে ডুবে যায়। এমন অনেক তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটেছিল এই দিনে।
আশুরার দিনে তাজিয়া মিছিল বের করা হয় শোকের আবহে। মূলত ইমাম হোসেন (রা.) এর সমাধির প্রতিকৃতি নিয়ে এই মিছিল হয়। আরবি ‘তাজিয়া’ শব্দটি শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এবার করোনার কারণে তা বাতিল করা হয়েছে।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলের উপনেতা জিএম কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীদে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। এখানে হানাহানি, হিংসা, বিদ্বেষ বা বিভেদের কোনো স্থান নেই। পবিত্র আশুরার এই দিনে আমি সাম্য, ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আসুন, আমরা সকলে পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]