এস,এম শাহাদৎ হোসাইন গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক শিরোমণিঃ করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁঁকির মধ্যেই মানুষের জীবিকার কথা চিন্তা করে সারাদেশের ন্যায় গাইবান্ধাতেও খুলে দেয়া হয়েছে বিপণী বিতান, মার্কেট ও দোকানপাট। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জমে উঠেছে কেনাকাটা। বৈশাখের প্রখর তাপ উপেক্ষা করে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দোকানগুলোতে ভিড় জমতে থাকে ক্রেতাদের। কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে সরকারের বেঁধে দেয়া বিধিনিষেধ মেনে মার্কেট খোলার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অনেক মার্কেটে। আগের তুলনায় মাস্ক পরার প্রবণতা বাড়লেও সামাজিক দূরত্ব মানতে উদাসীন ক্রেতা-বিক্রেতাগণ। গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, কোথাও মানা হচ্ছে না করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি। অনেক মার্কেটের প্রবেশদ্বারে রাখা হয়নি জীবাণুনাশক টানেল ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। বিপণী বিতানগুলোতে নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার। দোকানদারদের মুখে নেই মাস্ক। আবার অনেকেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার না করেই নাক মুখে হাত দিচ্ছেন। প্রতিটি দোকানে ভিড়। চলছে দরকষাকষি। করোনার সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে বড়দের সঙ্গে ভিড় করছেন ছোট শিশুরাও। শিশুদেরকে পোশাক ট্রায়াল দিতেও দেখা গেছে। একই পোশাক ট্রায়াল দিচ্ছেন একাধিক শিশু। এতে যেকোনো সময় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা। মাস্ক না পড়েই কেনাকাটা করতে দেখা গেছে অনেককে। ক্রেতারা এক দোকান থেকে যাচ্ছেন অন্য দোকানে। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বও। ব্যবসায়ীগণ বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মার্কেট খুলছেন তারা। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি তাই দোকানে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে । স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে দোকান খোলা রাখা সম্ভব হবে না। যে যেভাবে পারছেন স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারের বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। মিজানুর রহমান নামের এক বিক্রেতা বলেন, এখনো ঈদের বাজার জমে উঠেছে। তীব্র গরম আর রোজার কারণে ক্রেতা দিনের বেলায় আসতে চায় না। বিকালের পর ক্রেতাদের উপস্থিতি আরো বাড়ে। তবে মার্কেটের অধিকাংশ দোকানি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নারাজ। একই দোকানে একাধিক লোক একসঙ্গে ভিড় করেন। জিনিসপত্র নেড়েচেড়ে দেখেন। আবার একই জিনিস একাধিক লোকের পর্শ করতে হয়। এতে করে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে করে আমরা ব্যবসায়ীরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছি। কি করবো একদিকে জীবন, আবার অন্যদিকে জীবিকা। সামনে ঈদ। বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে বেচাবিক্রি করি। গাইবান্ধার সদর উপজেলার মৌজা মালিবাড়ী এলাকা থেকে শপিং করতে এসেছেন আনোয়ার বেগম। তার সঙ্গে ৪ বছরের শিশু শিমুল। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন মার্কেট বন্ধ থাকায় শপিং করা হয়নি। তীব্র গরমের মধ্যে শপিং করতে আসলাম, ভেবেছি লোকজন কম হবে। এখন দেখছি ক্রেতাদের ভিড়। তবে স্বাস্থ্যবিধি নেই। আমি মানলেও পাশের লোকজন তা মানছেন না। কোনো দোকান খালি নেই।সবখানেই একাধিক লোকের উপস্থিতি রয়েছে। একই পণ্য সবাই খালি হাত দিয়ে ধরে দেখছেন। ক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও দোকানিরা তাদের কাছে বিক্রি করছেন। নো মাস্ক নো সার্ভিসের কোনো বাস্তবায়ন নেই। এভাবে চলতে থাকলে করোনার সংক্রমণ আরো বেশি ছড়াতে পারে। মার্কেট কর্তৃপক্ষও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে উদাসীন। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না শহরের অভিজাত মার্কেট গুলোতেও। মার্কেটের প্রবেশদ্বারে স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি হলেও ভিতরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনীহা দেখাচ্ছেন ক্রেতা ও বিক্রেতাগণ। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হ্যান্ডমাইক নিয়ে ঘুরে ঘুরে প্রচার করলেও তা কাজে আসছে না। মার্কেটের প্রবেশ মুখে মাস্ক পড়ে প্রবেশ করাচ্ছেন নিরাপত্তা কর্মীরা । ভেতরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই মাস্ক খুলে রাখছেন। কেউ কেউ মাস্ক থুতনিতে ঝুলাচ্ছেন। অনেকেই দলবদ্ধ হয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। জান্নাতুল নাঈম রিয়া নামের এক নারী বলেন, বাহিরে তীব্র গরম। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাই ভেতরে ঢুকে একটু বিশ্রাম নিতে মাস্ক খুলে রাখছি। তিনি বলেন, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এটা জানি। তবে সবসময় মাস্ক আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। নামী দামি বিপণী বিতাণগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি ঢিলেঢালাভাবে চলছে। এসব স্থানে আইন কড়াকড়ি হলে আমিও মাস্ক খুলে রাখতাম না। আইনের ঘাটতি আছে বলেই স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানছেন না ক্রেতা ও বিক্রেতারাও। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ বলেনন, সরকার শর্ত দিয়ে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দিলেও তদারকির ঘাটতি রয়েছে। যথেষ্ট আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট করে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে দোকানপাট খুলে দিলে এমনটি হতো না। এখন যেকোনো সময় যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। শপিং করতে এসে ভাইরাস বহনও করতে পারে। মার্কেট ও শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। এছাড়াও ক্রেতাদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। যারা বিধিনিষেধ মানবেন না তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে জেল-জরিমানা করতে হবে। এ বিষয়ে গাইবান্ধা ইসলাম প্লাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ স¤পাদক মো. রনি সরকার বলেন, মার্কেটে প্রবেশ দ্বারে ক্রেতাদের হাতে জীবাণু নাশক ¯েপ্র করছি সেই সাথে শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা করেছি। অনেক ক্রেতা আছেন যারা নিজেরাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নারাজ । ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি ।