ওমর ফারুক, চাঁদপুর: সাগরের মাছ আহরণ নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ মাছের প্রাপ্যতা অনেক বেড়েছে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে একদিনেই ৩ হাজার মণের বেশী ইলিশ আমদানি হয়েছে চাঁদপুর মাছঘটে। যে কারণে মাছঘাটের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের ব্যস্ততাও বেড়েছে। তবে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর রূপালী ইলিশ চাহিদা থাকলেও আমদানি তুলনামূলক কম। বেশী দাম দিয়ে রূপালী ইলিশে স্বাদ নিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সাগরের ইলিশের আমদানি আরো কয়েকমাস থাকবে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।সোমবার (২৫ জুলাই) দুপুরে শহরের বড়স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখাগেছে সাগর থেকে বড় বড় ট্রলার মাছঘাটে এসে ভীড়েছে। ট্রলার থেকে ইলিশগুলো উঠানো হচ্ছে আড়তে। পঞ্চাশেরও অধিক আড়তের সামনে এসব ইলিশের স্তুপ করা হচ্ছে। বড় এবং ছোট সাইজের ইলিশ আলাদা করে দাম হাঁকডাক দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।জেলার আভ্যন্তরের এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এসব ইলিশ ক্রয় করছেন। এছাড়াও মাছঘাটের ব্যবসায়ীদের সাথে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ইলিশ ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। বিক্রি হওয়া ইলিশ প্যাকেট ও বক্স করে ট্রাকে করে পাঠানোর জন্য বরফ দিয়ে প্রস্তুত করছেন শ্রমিকরা। ইলিশের সাথে জড়িত সকল শ্রমকিই এখন খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মাছঘাট ঘুরে দেখাগেছে, পাইকারীর পাশাপাশি খুচরা ইলিশও বিক্রি করছেন কিছু ব্যবসায়ী। এর মধ্যে স্থানীয় রূপালী ইলিশই বেশী। কারণ চাঁদপুর মাছঘাটে রূপালী ইলিশের জন্যই বেশী আসেন ক্রেতারা।ঢাকা থেকে আজ সকালে লঞ্চ করে চাঁদপুর মাছঘাটে রূপালী ইলিশ ক্রয় করতে আসছেন ৫ যুবক। এদের মধ্যে শিপন ও আরিফুর রহমান মামুন বলেন, রূপালী ইলিশ পেয়েছি এবং বরফ ছাড়া। তবে দাম বেশী। ১ কেজি ওজনের ইলিশ ক্রয় করেছি ১হাজার ৭শ’ টাকা করে এবং দুই কেজি ওজনের ইলিশ দাম নিয়েছে ২হাজার ২শ’ টাকা করে।
চাঁদপুর শহরের আরেক ক্রেতা মোহাম্মদ হোসাইন জানান, মাছঘাটে অনেক ইশিল। তমে দাম অনেক চড়া। এককেজি ওজনের ইলিশ সাগরের ১৪শ’ টাকা কেজি এবং স্থানীয় রূপালী ইলিশ ১৭শ’ টাকা। আর দুই কেজি ওজনের ইলিশ ২হাজার ৭শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৩হাজার ২শ’ পর্যন্ত দাম চাওয়া হচ্ছে।ঘাটের বেশ কয়েকজন খুচরা ইলিশ বিক্রেতা জানান, লোকাল ইলিশ বিক্রি করি। আমাদের কাছে দেড় কেজি থেকে শুরু করে দুই কেজি ওজনের ইলিশ আছে। দেড় কেজির ওপরের ইলিশ প্রতি কেজি ১৮শ’ ৫০ টাকা। ৭শ’ থেকে ৮শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪শ’ টাকা কেজি। তবে ঘাটে ইলিশের যে বড় বড় স্তুপ আছে অধিকাংশ সাগরের। লোকাল ইলিশ কম ধরা পড়ছে।
মাছঘাটের শ্রমিক নিজাম বন্দুকশী জানান, গত কয়েকদিন মাছের আমদানি কমছিল। তখন দৈনিক আয় ছিল ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা। আজকে দু’দিন আয় হচ্ছে কমপক্ষে ১হাজার টাকা।
চাঁদপুর মৎস্য ও বণিক সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান ভুঁইয়া কালু জানান, আমরা এখন সাগরের ইলিশের উপর নির্ভরশীল। গত ৩দিন আগেও মাছঘাট ফাঁকা ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কারণে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। আমার জানামতে আজকে প্রায় ৩ হাজার মণের অধিক ইলিশ আমদানি হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন ইলিশের মৌসুম। আগে এই সময়ে চাঁদপুরের রূপালী ইলিশের আমদানি ছিল অনেক বেশী। নদীর নাব্য সংকট, ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন এবং নদীতে দুষণের কারণে খুব কম ইলিশ পায় জেলেরা। তারপরেও প্রতিদিন চাঁদপুর নৌ-সীমানায় কমপক্ষে ১ হাজার মণ ইলিশ দুই শতাধিক আড়তে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি হয়।
সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাজী শবে বরাত জানান, ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। রবিবার থেকেই সাগরের ইলিশের ভাল আমদানি আছে। গতকাল প্রায় ২হাজার মণের উপরে ইলিশ চাঁদপুর মাছঘাটে বিক্রি হয়ছে। গভীর সমুদ্রের মাছ হওয়ার কারণে অধিকাংশ ইলিশের সাইজ ছোট। ৪শ’, ৫শ’ ও ৬শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশই বাজারে বেশী। এগুলো প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ২২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা। মৌসুম হয়ায় আশা করছি এই ইলিশে আরো দুই মাস আমদানি হবে এবং দেশের মানুষ ইলিশ ক্রয় করতে পারবে।