আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের ‘হত্যার’ মাধ্যমে ‘নির্মূল’ করতে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। গতকাল শুক্রবার (০৫ মার্চ) কমিউনিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্যে আয়োজিত এক সরকারি সভায় এ নির্দেশ দেন দুতার্তে। খবর আল আল জাজিরার।
ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে বলেছি, যদি কখনো কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষ হয় তবে তাদের হত্যা করো। এরপর নিশ্চিত হও যাকে গুলি করা হয়েছে তার মৃত্যু হয়েছে কি-না। যদি মৃত্যু না হয়ে থাকে তবে সেখানেই তাকে হত্যা করো। তবে লাশগুলো যেন পরিবারের কাছে পৌঁছানো যায় সেটা নিশ্চিত করতে বলেছেন দুতার্তে।
মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি বলেন, মানবাধিকারের তোয়াক্কা করতে হবে না। এটা আমার নির্দেশ। আমি জেলে যেতেও রাজি আছি। এটা কোনো সমস্যা নয়।
কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে দুতার্তে বলেন, তোমরা সবাই দস্যু। তোমাদের কোনো আদর্শ নেই। এমনকি চীন এবং রাশিয়া, তারাও এখন পুঁজিবাদী রাষ্ট্র।
কমিউনিস্টদের হত্যার নির্দেশ দিলেও তাদের জন্য একটি সুযোগ রেখেছেন দুতার্তে। তিনি বলেন, যদি কমিউনিস্টরা বিরোধিতা বাদ দিয়ে অস্ত্র জাম দেয় তবে তাদের জন্য চাকরি, বাসস্থান এবং জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে।
১৯৬৮ সাল থেকে ফিলিপাইনে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের লড়াই চলছে। বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরে চলা মাওবাদী বিদ্রোহের মধ্যে এটি একটি। সেনাবাহিনী বলছে, ৫৩ বছর ধরে চলা বিদ্রোহে ৩০ হাজারেরও বেশি প্রাণহানি হয়েছে।
বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট ফিলিপাইনের সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে শান্তি চুক্তির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। বিদ্রোহীদের নেতা জোস মারিয়া সিসন এখন নেদারল্যান্ডসে স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় দুতার্তে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে বিদ্রোহ অবসানের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে সেনাবাহিনী ও কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাড়তে থাকে।
২০১৭ সালে সরকারি বাহিনী ও কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ হয়। দুতার্তে সে সময় শান্তি আলোচনা বাতিল করেন। পরে তিনি কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে প্রজ্ঞাপনে সই করেন।
গতকাল দুতের্তের হুঁশিয়ারির পর দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ের মাদকবিরোধী অভিযানের মতো সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকার ও মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে ওই সময়ে ৬ হাজার থেকে ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়।
সম্প্রতি ফিলিপাইনে জনসমক্ষে অথবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কমিউনিস্টদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করায় বেশ কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী, আইনবিদ ও চিকিৎসককে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা হত্যা করেছে। সূত্র: আল আল জাজিরা