রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || মঙ্গলবার | ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
ইশরাত মুহাম্মদ শাহ জাহান,মহেশখালী, কক্সবাজারঃ শুরুতে চার দিনে আক্রান্ত ১০৩ জন, এরপর ১১ জানুয়ারি ১০ জন, ১২ জানুয়ারি ২৪ জন, ১৩ জানুয়ারি ১৯ জন, ১৪ জানুয়ারি ৬২ জন। এভাবেই হুট করে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এভাবেই বর্তমান সরকারের ব্যয়বহুল প্রকল্প মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
সংক্রমণ রোধে প্রকল্পের একটি ইউনিটের নির্মাণকাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানানো হয়েছে।
সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসা দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে কর্মরত দেশি-বিদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।
প্রকল্পের ১৫টি ইউনিটে কাজ করছেন ১০ হাজারেরও বেশি দেশি-বিদেশি শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকেও পৃথক করে নমুনা পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ওই ইউনিটের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, সম্প্রতি ভারতে ছুটি কাটিয়ে সে দেশের অনেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের অনেকের আক্রান্ত হচ্ছেন।
প্রকল্পের ভেতরে রয়েছে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা, আইসোলেশন সেন্টার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। এরপরও প্রকল্পের ভেতর কর্মরত কোনো লোকজন যেন বাইরে যেতে এবং বাইরের কেউ যেন ভেতরে ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি তদারকির জন্য মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ভারত থেকে ছুটি কাটিয়ে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজে ফেরা কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের করোনা টেষ্ট করা হলে, তাদের পজিটিভ আসে।সেই থেকে বাড়তে থাকে এই সংখ্যা। কিন্তু প্রকল্প সংলগ্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে নেই কোন ধরনের সচেতনতা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাতারবাড়ীর কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প সংলগ্ন লাগোয়া বাজার সাইরারডেইল আর মগডেইল। বাজারে কোন ধরণের সচেতনতা বালাই নাই, নেই কারো মূখে মাস্ক। করোনার নতুন হটস্পট মাতারবাড়ী প্রকল্পে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পুরো কক্সবাজার ঝুঁকিতে পড়তে পারে এমনটাই মন্তব্য করেছেন মাতারবাড়ী সচেতন মহল। আবার অন্যদিকে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে রয়েছে কঠোর বিধি-নিষেধ।প্রকল্পে কোভিড-১৯ এর টিকা ছাড়া বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ রয়েছে।প্রকল্পের ভিতরে মাস্ক ছাড়া চলাচলও নিষেধ রয়েছে। তবে এই বিধিনিষেধগুলো করোনার পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার পর নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় নতুন করে ১০ জেলা কে রেড জোন এবং ৩২ জেলাকে হলুদ জোন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারমধ্যে হলুদ জোনে রাখা হয়েছে কক্সবাজার জেলাকেও।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাব সূত্রে জানা যায়, গত ৭ দিনে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১৬৯ জন। গত ১৪ জানুয়ারি আক্রান্ত হন সর্বোচ্চ ৬২ জন।এর আগের গত ১৩ জানুয়ারি আক্রান্ত হন ১৯জন। ১২ জানুয়ারি আক্রান্ত হন ২৪ জন, ১১ জানুয়ারি আক্রান্ত হন ১০ জন এবং গত ৬,৭,৮ ও ৯ জানুয়ারি এই চার দিনে ঐ প্রকল্পে করোনা আক্রান্ত হন ১০৩ জন।
এ নিয়ে মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডাঃ মাহফুজুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন,“ প্রকল্পে যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছে তারা সবাইকে আইসোলেশনে আছে।স্থানীয়দের সচেতন করার জন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও চেয়ারম্যানদের সাথে মিটিং করেছে এবং সরকারি ১১ দফা বাস্তবায়নের করার জন্য নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের বৃহৎ মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে ৬৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ইউনিট অর্থাৎ ৬০০ মেগাওয়াট এবং একই বছরের জুলাইতে দ্বিতীয় ইউনিট আরও ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। আর ২০২৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হওয়ার কথা রয়েছে।