জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা শ্রমিক পরিবারের
শেখ তোফাজ্জেল হোসেন, খুলনা সিটি প্রতিনিধিঃ করোনার ২য় ধাপে চরম কষ্টে দিন কাটছে খুলনার একের পর এক বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারী জুট মিল শ্রমিকদের, হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী পরিবারের দিন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে, মিলের শ্রমিক কলোনিতে চলছে নিরব বোবা কান্না , যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না।ফরিদপুরের গোয়ালপাড়া গ্রাম থেকে ১৯৭৮ সালে আসা মিরেরডাঙ্গা শিল্পাঞ্চলের এ্যাজাক্স জুট মিল তাঁত বিভাগে চাকরি নেন মোমরেজ সর্দার, দির্ঘদিন চাকুরি করার পর এ্যাজাক্স জুট মিলটি ২০১৪ সালের ২২ মে বন্ধ হয়ে যায়, মিলটি বন্ধ হলেও অন্য শ্রমিকের মত মিল মালিকের কাছে জুট মিল শ্রমিক মোমরেজের ৭ বছরেরও অধিক সময়ে চুড়ান্ত পাওনা বুঝে পায়নি।শনিবার দুপুরে শ্রমিকের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা বলার সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন নিজের জীবন যৌবন পার করলাম মিলে কাজ কওে, শেষ বয়সে এসে কাজ করার ক্ষমতা ইেন। মালিকের ৭ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে, টাকাটা দিলেও অন্য কিছু করে খেতে পারতাম ৫ জনের সংসার বড় ছেলে দিন মজুরির কাজ করে তার উপর সংসার নির্ভর করে, করোনার কারনে বড় ছেলেটার কাজ ও বন্ধ ,আজ ৩ দিন অতিবাহিত হলো বাড়িতে চুলা জ্বলেনা, আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন এভাবে ধুকে ধুকে মরার চেয়ে একবারে মরে যাওয়ায় ভালো। শিরোমনি শিল্পাঞ্চলের মহসেন জুট মিলটি দীর্ঘ ১৩ মাস লে-অফ থাকার পর ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই মিলটি বন্ধ ও মিলের ৬৬৭ জন শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করে মিলকর্তৃপক্ষ। শ্রমিক কর্মচারীদের প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। নানা অজুহাতে মিলের মালিক শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করছেনা, মিলের শ্রমিক কলোনিতে বসবাসরত স্পিনিং বিভাগের রাজ্জাক মিয়া জানান মিল বন্ধের পর গিলাতলা আবাসিক এলাকার বাসা বাড়ির ময়লা ভ্যানগাড়িতে টেনে মাস শেষে কিছু টাকা পেতাম তা দিয়ে কোনমতো সংসার চলতো কিন্তু করোনার কারনে সে কাজটিও বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন শুনেছি সরকার বিভিন্ন রকমের সাহায্য সহযোগিতা করছে করোনার কারনে, কিন্তু আমরা বন্ধকৃত জুট মিলের শ্রমিকরা তো কিছুই পেলামনা, খোজ নিয়ে জানা যায় খুলনার মহসেন, সোনালি, এ্যাজাক্স , আফিল, জুট স্পিনার্স সহ ব্যক্তিমালিকানা জুট মিলের হাজার হাজার শ্রমিক বর্তমানে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে,২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী আফিল মিলটি বন্ধ হয়। বর্তমানে শ্রমিকের মিল মালিকের কাছে প্রায় ৮ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। শিরোমনি বিসিক শিল্প এলাকার জুট স্পিনার্স মিলটি ২০১৬ সালে বন্ধ হয়, মিলটিতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ১২’শ শ্রমিক কাজ করতো, শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া পওনা রয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।বে সরকারি জুট মিলের শ্রমিকরা মনে করেন প্রধানমন্ত্রির হস্তক্ষেপ ছাড়া খুলনাঞ্চলের হাজার হাজার শ্রমিকের দুখঃ, দুর্দশা , অবসান হবেনা। খুলনা বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন বর্তমান সরকার শ্রম বান্ধব সরকার, ব্যক্তিমালিকানা মিলের সমস্যা নিরসনে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে, করেনাকালিন সময়ে বেসরকারি জুট মিলের শ্রমিকদের পাশে যাতে দাড়ানো যায় সে ব্যাপারে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।বেসরকারি পাট, সুতা, বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক গোলাম রসুল খান বলেন শ্রমিক -কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ না করে পাটকলগুলো বন্ধ রাখায় অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। বেকার হয়ে পড়া এসব মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের অনেকে ভিন্নভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও করোনার কারনে সকলের কাজ বন্ধ,অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন তারা। শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।শ্রমিক নেতারা অতিদ্রত খুলনা জেলা প্রশাসক এর মাধ্যমে করোনাকালিন সময়ে শ্রমিকরা সহযোগিতা পেতে পারে সে ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করেন