আশফাকুর রহমান রাসেল,চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ১৫ই জুন বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউপি নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণা চলছে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। প্রার্থীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট প্রার্থনা করছেন। চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী হওয়ায় চলছে তুমুল রেষারেষি। দুজনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন সচেতন ভোটারগণ।
এ নির্বাচনে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, সেফাউল মুলক মটর সাইকেল মার্কা ও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দুইবারের সফল চেয়ারম্যান নৌকা মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সরজমিনে ভোটরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধানে খুবই অল্প।
তবে জামায়াত বিএনপির অনেক ভোটারই বর্তমানে প্রেক্ষাপটে দলের চেয়ে উন্নয়নের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে বেনাউল ইসলামকে ভোট দিবেন বলে মন্তব্য করছেন। যদিও কট্টর জামায়াত বিএনপি এটি মানতে রাজী নন। কট্টরপন্থী বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন।
কানসাট ইউনিয়রে ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯ নং ওযার্ড ঘুরে কট্টরপন্থী বিএনপি ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, যদিও দলীয় প্রার্থী নেই তবুও এ অঞ্চলটি এক সময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল, বর্তমান জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিয়ে সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি।
সাধারণ ভোটের অভিমত হলো, যেহেতু বেনাউল ইসলাম দু’বার নির্বাচিত হয়ে দলবল নির্বিশেষে এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গোরস্থান, মন্দির, রাস্তাঘাট, ব্রীজ, সুবিধাভোগীদের বিভিন্ন ধরনের ভাতার ব্যবস্থা, কানসাট বাজারের ব্যাপক উন্নয়ন, রাস্তার যানজট কমানো, মাদক প্রতিরোধ, চুরি-ছিনতাইরোধ, মানুষের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রভুতি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সেহেতু তাকে আবারো নির্বাচিত করে এলকার উন্নয়নের পথকে সুগম করতে চায়।
অন্যদিকে জামায়াত সমর্থিত ভোটারদের অভিমত, জামায়াত বহু বছর থেকে সবক্ষেত্রেই বিএনপিকেই সমর্থন দিয়ে আসছে। এবার কানসাট ইউপি নির্বাচনে বিএনপির কোন প্রার্থী না থাকাই তারা মোটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী সেফাউল মুলককে ভোট দিবে এবং বিপুল ভোটের ব্যবধান বিজয় লাভ করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানান, আওয়ামী লীগের মধ্যে লবিং-গ্রুপিং থাকায় দলটি এ নির্বাচনে খুব জোরে হোঁচট খেতে যাচ্ছে। তারা আরো বলেন, দলে লবিং-গ্রুপিং থাকায় এখনো দলের অনেক নেতাকর্মী নির্বাচনে মাঠে নামেননি।
এ ব্যাপারে জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সেফাউল মুলক বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী থাকার পরও আমি মাত্র ৪শো ৬৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলাম। এবার বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। আমরা প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে দেশব্যাাপী বিএনপির সাথে ঐক্যমত থেকে নির্বাচন করে আসছি, তারই ধারাবাহিকতায় কানসাট ইউপি নির্বাচনেও বিএনপি দলের সকল নেতাকর্মী আমাকে সমর্থন দিয়েছেন এবং ভোটও দিবেন। সেহেতু আমি বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীরা বিভিন্ন ভাবে আমার কর্মীদের হুমকী ধামকী দিচ্ছে এবং তারা বাড়ির পার্শের ও মোহনবাগ ভোটকেন্দ্র দখলের পায়তারা করছে। আমি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করে আবেদন করেছি।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বেনাউল ইসলাম তাদের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারাই আমাকে ও আমার কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের হুমকী-ধামকী দিচ্ছে এবং ২০১৩-১৪ সালের মত নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন লবিং-গ্রুপিং নেই। সকল নেতাকর্মী মাঠে কাজ করছেন। গত ৫ বছরে এ ইউনিয়নে প্রায় ১১শ কোটি টাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এজন্য বিএনপির সমর্থকরাও আমাকে ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার সুযোগ দিবেন।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তাসিনুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক, জেলা নির্ববাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ ভোট কেন্দ্রগুলি পরিদর্শন করেছেন। নিরপত্তার জন্য র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আনসার মোতায়েন থাকবে। কোন ধরনের বিশৃংখলা ঘটার সম্ভবনা নেই।
উল্লেখ্য, আগামী ১৫ই জুন অনুষ্ঠিতব্য কানসাট ইউপি নির্বাচনে ৯টি ওযার্ডে ১০টি ভোট কেন্দ্রে ১০৭টি ভোট কক্ষে ১৬ হাজার পুরুষ ভোটার ও ১৫ হাজার ৪ শো ২৭ জন মহিলা ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।