ইউনুছ (কুড়িগ্রাম) জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার হাটবাজারে ইউরিয়াসহ অন্যান্য সার শূণ্য হয়ে পড়েছে। এক বস্তা সারের জন্য খুচরা বিক্রেতা ও ডিলারের ঘরে ঘরে ঘুরছে কৃষক। অনেক কৃষক আবার সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বসে থাকছে ডিলারের ঘরে। গত ৭দিন ধরে চরম সার সংকটে হতাশ হয়ে পড়েছে। সার সংকট ও সারের দাবি জানিয়ে গত ২৫ অক্টোবর সোমবার রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকতার্ বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন এলাকার কয়েকশ’ কৃষক। তদন্ত করে ডিলার ৩ জনকে শোকজ, খুচরা বিক্রেতা ৩ জনকে ৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন প্রশাসন। বর্তমানে আলু, সরিষা ও ভুট্টা চাষের মৌসুম। শুরুতে সারের প্রয়োজন হয়। কৃষক ক্ষেতে হালচাষ করে বসে আছে সারের জন্য। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার ঘরে সার শূণ্য থাকলে স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকতার্ চুপ করে বসে আছেন। ডিলারদের সার সরবরাহের বিষয়ে কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকতার্ কোনো তৎপরতা চালাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কৃষি বিভাগের নিরবতায় কৃষকদের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।রৌমারী উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অক্টোবর মাসে রৌমারীতে ৭’শ ৫০ মে: টন সারের চাহিদা দেয়া হয়েছে এর মধ্যে ২’শ ৪৫ মে: টন ইউরিয়া সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। রৌমারী উপজেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত ৯ জন ডিলার ও ৫৬ জন্য খুচরা বিক্রেতা রয়েছে যাদের মাধ্যমে প্রতি বস্তা ইউরিয়া ৮শ’ টাকা বিক্রিত মূল্যে কৃষকের কাছে সার তুলে দেয়ার কথা। গত ২৫ (অক্টোবর )সোমবার রৌমারী উপজেলার কর্তিমারী বাজারে একটি ডিলারের ঘরে গিয়ে দেখা গেছে সার শূণ্যতার চিত্র। ঘরে একটি মাত্র বস্তা পাওয়া গেছে। কৃষকের কাছে দাম চাওয়া হচ্ছে ১হাজার টাকা। সেখানে আরো ১২/১৩ কৃষক বসে আছে সারের জন্য। এসময় নুর হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, দুই বস্তা ইউরিয়া সার নিব। ৮’শ টাকার বস্তা এক হাজার টাকা করে দাম চাচ্ছে। দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করব, ক্ষেত তৈরি করা শেষ কিন্তু সার পাচ্ছি না। সুলতান মাহমুদ নামের এক কৃষক তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মানুষের মুখে শুনেছি ডিলাররা মিল গেটেই সার বিক্রি করে আসে। আর আমরা সার পাই।অনেক কৃষকই জানান, উপজেলায় বরাদ্দকৃত ২’শ ৪৫ মে: টন ইউরিয়া সার যদি ডিলার এলাকায় এনে বিক্রি করত তাহলে সারের এতো সংকট হওয়ার কথা ছিল না। ডিলাররা যমুনা ফার্টিলাইজার মিল গেট থেকেই চড়া দামে সার বিক্রি করে দিয়েছে। এর সঙ্গে কৃষি বিভাগও জড়িত রয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করে বলেন। তবে ডিলাররা ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রৌমারী উপজেলার বিসিআইসি ডিলার মোস্তাফিজুর রহমান সার সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, রৌমারীতে যে পরিমান সারের প্রয়োজন সে পরিমানে বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এ কারনে সার সংকট দেখা দিয়েছে। এই মুহুর্তে কৃষকের সারের প্রয়োজন কিন্তু তারা পাচ্ছেন না। এটা দ্রুত সমাধান করতে হবে। এ ব্যপারে রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকতার্ কাউয়ুম চৌধুরী বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উপজেলায় কি পরিমান জমিতে কোনো আবাদ হচ্ছে এবং কি পরিমাণ সার প্রয়োজন হতে পারে তা আপনারা আগে থেকে কি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন-এমন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘না, আসলে হঠাৎ করেই সারের সংকট তৈরি হয়েছে। এরকম তো হয় না। যা হোক বিষয় গুলো নিয়ে আমাদের ওপরের স্যারদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। সমাধান হয়ে যাবে দ্রুত। তাছাড়া তিনজন ডিলারকে শোকজ করা হয়েছে এবং সার চড়া দামে বিক্রি করার অপরাধে খুচরা তিন ব্যবসায়ীকে ৬ হাজার টাকা ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে।
৯ views