রনি আহমেদ, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি:কুমিল্লার দেবিদ্বারের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের তরুনী গৃহবধূ নিঝুম আক্তার শান্তা। বিয়ের পর স্বামীর অত্যাচারে একাধিকবার পিত্রালয়ে ফিরেও নিস্তার মিলেনি। উল্টো এখানে এসেও পাষন্ড স্বামী বাড়ি-ঘর ভাঙ্গচুরসহ জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকী,কখনোবা নিজে আতœহত্যার ভয় দেখিয়ে নিজের অভিভাবক নিয়ে এসে বা শ্বশুরালয়ের স্বজনদের কাছে মুচলেকা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আবারো অত্যাচার,নির্যাতন। আর এসব কিছুর জন্য থানায় মামলা করার ব্যর্থ চেষ্টায় আদালতে দুথদুটি মামলার পরও বিচার পায়নি । সবশেষে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের নির্মম নির্যাতনে মারা যাওয়ার পর তৃতীয় দফায় মামলাও থানা পুলিশ গ্রহন করেনি। ফলে আবারো বিচার প্রার্থী হতে আদালতে। সেখানে মামলা দায়েরের পর পুলিশ ব্যূরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্ত দেয় আদালত। এদিকে নিহতের পরিবারের সদস্যরা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে মামলার কোন অগ্রগতি না থাকায় হতাশ।
জেলার দেবিদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের প্রবাসী রুপ মিয়ার মেয়ে শান্তা। ২০১৩ সালে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে হয় কুমিল্লা মহানগরীর ৪ নং ওয়ার্ডের কাপ্তানবাজার এলাকার শুভ মিয়ার ছেলে সাজ্জাতুর রহমান শাওন এর সাথে। বিয়ের পর কয়েক বছর শান্তিতে থাকলেও ২০১৬ সালে শুরু হয় পারিবারিক অশান্তি। স্বামীর সাথে শ্বশুড়,শ্বাশুড়ি,দেবর,ননদসহ পরিবারের অন্যান্য স্বজনদের নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে পিত্রালয়ে ফিরে আসে। নিজ বাড়িতে এসে চিকিৎসা শেষে থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে বাধ্য হয়ে আদালতের স্মরনাপন্ন হয়। এসময় স্বামী ,শ্বশুড়,দু চাচা শ্বশুর জহির ও রকিবসহ শান্তার বাড়িতে এসে ভবিষ্যতে আর কোন নির্যাতন করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে দিয়ে স্বামী গৃহে নিয়ে যায়। এরপর আবারো কিছুদিন ভালো থাকার পর ২০২২ সালের মাঝামাঝি নির্যাতন করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এবারো চিকিৎসা শেষে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেযনি। ফলে বাধ্য হয়ে আবারো বিচার পেতে আদালতে যেতে হয়। নিহতের মা রানুয়ারা বেগমের আক্ষেপ, দুথদফা মামলার পরও কোন বিচার না পেয়ে তারা যখন হতাশ তখন স্বামী সাজ্জাতুর তার চাচার মৃত্যুসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আবারো মেয়েকে অনেকটা জোর করে গত ডিসেম্বরে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারী বাবার বাড়ি আব্দুল্লাহপুরের বাসায় বেড়াতে আসলে ১০ জানুয়ারী স্বামী এসে আবারো নিয়ে যায়। এরপরের ঘটনা সব ইতিহাস । শান্তার মা রানুয়ারা সাংবকাদিকদের জানান, ১২ জানুয়ারী কুমিল্লায় চিকিৎসার জন্য তার কথা ছিল। এজন্য মেয়ে শান্তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগও হয়। ১৩ তারিখ সকালে মেয়েকে ফোন দিলে স্বামী সাজ্জাত ফোন রিসিভ করে চিৎকার করে শান্তাকে গালাগালসহ মারধোর করার একপর্যায়ে ফোন কেটে দেয়। এরপর একাধিকবার কল করলেও সে আর রিসিভ করেনি। পরবর্তীতে ওই দিন দুপুর ১২ টায় পাষন্ড স্বামী সাজ্জাত শ্বাশুড়ি রানুয়ারাকে ফোন করে জানায়, শান্তা বিষ পানে আদতœহত্যা করেছে। পরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি প্রথমে থানা ও পরবর্র্তীতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গেলেও লাশ দেখার সৌভাগ্য হয়নি। রানুয়ারা বেগম আরো বলেন, এসময় থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও পুলিশ সেটা আমলে না নিয়ে উল্টো শান্তা বিষপানে আতœহত্যা করেছে মর্মে কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার চেস্টা চালায়।একপর্যায়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বাক্ষর না দিলে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে লাশ দিয়ে বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে কবর দেওয়ার হুমকীও দেয়। একই সময় কোতয়ালী থানা পুলিশের এসআই ছায়েদুল পাষন্ড স্বামীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে নিয়ে আপোষ করার প্রস্তাব দেয়। তখন নিহতের পরিবারের সদস্যরা লাশ বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মামলা করার আকুতি জানায়। পরবর্তীতে সবচেষ্টা ব্যর্থ হলে অনেকটা নিরুপায় হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে চাইলে পুলিশ বাধ্য হয়ে লাশ বুঝিয়ে দেয়। পরবর্তীতে বাড়িতে এনে লাশ গোসল করানোর সময় শান্তার দাদী অজুফা খাতুন মৃতের বাম চোঁখ গলিত,ডান কান বেশ অংশ কাটা,গলায়,মাথায় দাগের চিহ্ন দেখতে পায় বলে পরিবারের সদস্যদের জানান। এদিকে আবারো থানায় মামলার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে ভিকটিমকে সমাহিত করার ৩ দিন পর নিহতের পরিবার তার বিচার প্রার্থী হয়ে আদালতে তৃতীয় দফা মামলা করলে আদালত পুলিশ ব্যূরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)কে মামলাটি তদন্তের নিদের্শ দেয়। আর এভাবে দফায় দফায় পুলিশের দুয়ারে সাহায্য প্রার্থী হয়েও কোন সহায়তা না পেয়ে উল্টো ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার আগেই নিহতের পরিবারের সদস্যদের বিষপানে আতœহত্যার উল্টো অভিযোগপত্র বানিয়ে স্বাক্ষর নেওয়ার প্রচেষ্টায় হতাশ নিহতের পরিবার। তারা চান যত দ্রুত সম্ভব পুনঃ ময়নাতদন্ত করে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হেএব্যাপাওে এসআই শহিদুল্লাহ জানান, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগসত্য নয়। এদিকে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা( ওসি) শহিদুল মোর্শেদ চৌধুরী বলেন থানা থেকেই নিহতের পরিবারের সাথে প্রথম যোগাযোগ করা হয়েছে। কোন হয়রানির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]