অনলাইন @ নাম শুনলেই জিভে জল আসে। এই মিষ্টান্নের খ্যাতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার এই ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম ক্ষীরমোহন। এখন থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে অমৃত স্বাদের এই ক্ষীরমোহন উলিপুর থেকে উৎপাদিত হওয়া শুরু করে। সময়ের পরিক্রমায় দেশের মানুষের মন জয় করে এখন ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে ক্ষীরমোহন।
ক্ষীর ও মোহনের সংমিশ্রণে তৈরি হয় ক্ষীরমোহন। ক্ষীর হলো মিষ্টির রস। এক মণ দুধ জ্বাল দিয়ে এর সঙ্গে নানা ধরনের মসলা মিশিয়ে তৈরি করা হয় রস। মিষ্টির এই রসকে স্থানীয়ভাবে ক্ষীর বলা হয়। অন্যদিকে মোহন বলতে সাদা মিষ্টির অংশকে বোঝানো হয়েছে। দুধ ক্ষীরে পরিণত হলে ও মিষ্টির ভেতরে ক্ষীর ঢুকে গেলে তৈরি হয় অমৃত স্বাদের ক্ষীরমোহন।
নদীবেষ্টিত উলিপুরের গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিক উপায়ে বেড়ে ওঠা সবুজ ঘাস, লতা-পাতাসহ নানা গো-খাদ্য বাড়িতে পালা গাভিকে খেতে দেয়া হয়। তাই এই এলাকার গরুর দুধ খাঁটি দুধের গুনাগুণ সমৃদ্ধ। সেই দুধ থেকে তৈরি হয় এই জগৎবিখ্যাত ক্ষীরমোহন।
ঈদ,পূজা, বিয়ে বা যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান, অতিথি আপ্যায়ন, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার এক প্রথাগত রেওয়াজ সৃষ্টি হওয়া ছাড়াও ভোজনবিলাসী মানুষের কাছে এক প্রিয় নাম ক্ষীরমোহন। দিন দিন এর চাহিদা ও সুখ্যাতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে।
এক কেজি ক্ষীরমোহন তৈরি করতে তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি দুধ প্রয়োজন হয়। তাই গরুর দুধের ওপর নির্ভর করে ক্ষীরমোহনের বাজারমূল্য। বর্তমানে প্রতি কেজি ক্ষীরমোহন বিক্রি হয় ৩৮০ টাকা কেজি দরে। প্রতি দোকানে দিনে খুচরায় এক থেকে দেড় মণ ক্ষীরমোহন বিক্রি হয়।
বৃটেনের রাণী এলিজাবেথ থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি প্রশংসা করেছেন ক্ষীরমোহনের। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আপ্যায়ন করা হয় এই ক্ষীরমোহন দিয়ে। ক্ষীরমোহন খেয়ে ভূঁয়সী প্রশংসা করেন বঙ্গবন্ধু। রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথের কাছেও পৌঁছে দেয়া হয়েছিল ক্ষীরমোহন। তিনিও প্রশংসা করেছিলেন অমৃত স্বাদের এই খাবারটির।
আসল ক্ষীরমোহনের স্বাদ পেতে যেকোনো জায়গার দোকান হলে চলবে না, আসল স্বাদ পেতে হলে খেতে হবে উলিপুরের তৈরি ক্ষীরমোহন। সত্যিকারের তৃপ্তির ঢেঁকুর তখনই দিতে পারবেন, যখন চিনে নিয়ে সঠিক জায়গা থেকে আসল ক্ষীরমোহন কিনতে পারবেন।