‘ক্যান্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টের আগে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট কী সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধা-বিভক্ত ছিল?
টিম লিডার খালেদ মাহমুদ সুজন আর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর সাথে একাদশ সাজানো, লক্ষ্য-পরিকল্পনা তথা টার্গেট নির্ধারন নিয়ে কি হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর মত পার্থক্য আছে?
গুঞ্জন, গুজব নয়। তাদের কথা-বার্তাই বলে দিয়েছে তারা দুটি পক্ষ। সুজন-নান্নু একদিকে। আর দক্ষিণ আফ্রিকান হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো অন্যদিকে।
প্রথম পক্ষ প্রথম টেস্টের পর কথা বলেছিলেন খানিক রক্ষণাত্মক মেজাজে। নান্নু আর সুজনের কথা ছিল, জয়-পরাজয় বড় কথা নয়, এখন লক্ষ্য হলো ভাল ক্রিকেট খেলা। ধারাবাহিকভাবে পাঁচদিন ভাল ব্যাটিং ও বোলিং করার অভ্যাস করা।
টানা ভাল খেলতে পারলে পরাজয় এড়ানো যাবে। তারপর ধীরে ধীরে জয়ের সম্ভাবনাও তৈরি হবে; কিন্তু শেষ টেস্ট শুরুর আগে হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর মুখে শোনা গেল ভিন্ন কথা। তিনি বললেন, ‘রক্ষণাত্মক হলে চলবে না। খেলতে হবে জয়ের লক্ষ নিয়ে।’
একাদশ সাজানো দেখে মনে হলো কোচের কথামতই দল সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশ মাঠে নেমেছিল জয়ের লক্ষ্য নিয়েই। সাবেক অধিনায়ক ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক মোহাম্মদ আশরাফুল ‘সেই জয়ের চিন্তায় মাঠে নামার সিদ্ধান্তে’র কঠোর সমালোচনা করেছেন।
আজ দুপুরে টেস্ট হারের পর আশরাফুল বলেন, ‘ব্যাড লাক যে টসে হেরেছি। টস জিতলে হয়ত ডিফারেন্ট বল গেম হতো।’
এছাড়া আশরাফুলের মনে হয় লক্ষ্য নির্ধারনেও কিছু ত্রুটি ছিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের জয়ের পাশাপাশি ড্র’র চিন্তাও রাখা উচিৎ ছিল। দেশের বাইরে শ্রীলঙ্কার এই দলটির বিপক্ষে ৫ দিন খেলে দুই টেস্ট ড্র করতে পারলে আমি খুশি হতাম। আমার চোখে সেটা কৃতিত্ব বলেই গণ্য হতো; কিন্তু আমরা তা করতে পারলাম না।’
‘শেষ টেস্টে উইকেটের চরিত্র পাল্টানোর পাশাপাশি লঙ্কানরা একাদশে রদবদল করে বাড়তি স্পিনার নিয়ে মাঠে নেমেছে। আমাদেরও কৌশল পাল্টে ম্যাচ ড্র করতে ব্যাটসম্যান বেশি রাখা উচিৎ ছিল। এই ম্যাচের জন্য শুভগত হোম হতে পারতো বেস্ট চয়েজ। কিন্তু আমরা সে পথে হাটিনি। স্কোয়াডে থাকার পরও তাকে খেলাইনি।’
আশরাফুল আরও যোগ করেন, ‘এমনিতেই একজন ব্যাটসম্যান কম। তারওপর ব্যাটসম্যানরা কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেনি। ব্যাটসম্যানরা সেট হয়ে ২৫-২৬ থেকে ৪০’এর আশপাশে আউট হয়েছেন। কারো বড় ইনিংস নেই। সেটাই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।’
এই লম্বা ইনিংস খেলতে না পারার কারণ কী? লঙ্কানদের প্রায় ৫০০ রানের চাপ সহ্য করতে না পারা, প্রায় আড়াই দিন ফিল্ডিং করে ক্লান্ত- অবসন্ন হওয়া, নাকি মানসিক দুর্বলতা?
আশরাফুলের ব্যাখ্যা, ‘চাপ, ক্লান্তি, অবসাদ কিছুই না। আসলে আমাদের ব্যাটসম্যানরা দুই ইনিংসেই কম রানে অলআউট হয়েছে লঙ্কান স্পিনারদের কোয়ালিটি বোলিংয়ের কারণে। বাঁ-হাতি প্রাভিন জয়াবিক্রমা আর অফস্পিনার রমেশ মেন্ডিস দুজনই দারুণ বোলিং করেছেন।’
‘সন্দেহ নেই আমাদের মিরাজ ও তাইজুলের চেয়ে ওই দুই লঙ্কান অনেক বেশি ভালো মানের বোলার। দু’জনই নতুন বোলার। একজন অভিষেকে ১১ উইকেট দখল করলো। আর একজন মাত্র ২ টেস্টের অভিজ্ঞতায় পতন ঘটালো ৬ উইকেটের। তাদের বোলিংটাও হয়েছে অনেক ভাল। উইকেটের সহায়তা ছিল। তারপরও ওই দুজনই অনেক বেশি টার্ন করিয়েছে। নিঃসন্দেহে তারা অনেক ভাল বল করেছে। তাদের বলে অনেক বেশি টার্নও ছিল, আর তাতেই আমরা পর্যদুস্ত হয়েছি।’
অন্যদিকে নিজ দেশের স্পিনারদের মান নিয়ে অসন্তুষ্ট আশরাফুল, ‘আমাদের তাইজুল-মিরাজের অত কোয়ালিটি নাই। দু’জন বাচ্চা ছেলে এসেই কী স্পিন করিয়েছে! কিন্তু আমাদের মিরাজ-তাইজুল সে তুলনায় অভিজ্ঞ, অথচ বোলিং ক্যারিশমা কম।’
নিজ দেশের প্রথমশ্রেণির ক্রিকেটের মান বাড়ানোর জোর তাগিদ দিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘আসলে শ্রীলঙ্কার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের স্ট্রাকচার, স্ট্যান্ডার্ড যে আমাদের চেয়ে উন্নত, তার প্রমাণ এই দুই তরুণ স্পিনারের কোয়ালিটি স্পিন বোলিং। টেস্ট জাতি হিসেবে লঙ্কানরা যে আমাদের চেয়ে সমৃদ্ধ ও ওপরে, তা আরও একবার প্রমাণ হলো।’
‘ভাঙ্গাচোরা দল নিয়েও তারা ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে গেছে। কারণ তাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট অনেক সমৃদ্ধ। আর আমরা গড়পড়তা বছরে চার থেকে পাঁচটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে টেস্টে নেমে পড়ি। যা নেহায়েত অপ্রতুল। অন্তত পক্ষে ১৫ থেকে ২০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা দরকার সব টেস্ট প্লেয়ারের এবং সেটাও ফ্ল্যাট আর ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচে নয়। ফার্স্ট, বাউন্সি, স্পিন ট্র্যাক আর স্পোর্টিং উইকেটে। তাহলেই এমন টার্নিং উইকেটে মাথা তুলে দাঁড়ানো সম্ভব হবে, না হয় ঘুরে-ফিরে এসব পরিস্থিতিতে এমন ছন্নছাড়া পারফরমেন্স আর করুণ পরিনতিই ঘটবে।’
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]