আগামী ২৫ জুন বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ২৬ জুন থেকে যানবাহন চলাচল করবে এই সেতু দিয়ে। ইতোমধ্যে সেতুর দুইপাশের রাস্তা প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে নির্বিঘ্নে পদ্ম সেতু পারাপারের জন্য রাজধানী থেকে সংযোগকারী ‘বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ (১ম) বা পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি এখনো সংস্কার করা হয়নি। যার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুর কারণে পদ্মা সেতুগামী গাড়ি বিপাকে পড়তে পারে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা।রাজধানী থেকে যানবাহন অন্যান্য সেতু ছাড়াও বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু (১ম) দিয়ে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে দিয়ে মাওয়া যাবে। এরপর পর পদ্মা সেতু পার হয়ে জাজিরা প্রান্তে যাবে। যার ফলে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে এই সেতুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দীর্ঘ দুই বছর সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত স্থানটির ওপর বাঁশ ও লোহারপাত দিয়ে ব্যারিকেড ও রুম বানিয়ে রেখেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ। ফলে সেতুর এই অংশটুকু কতটা নিরাপদ হবে সেটাই এখন প্রশ্ন যাতায়াতকারীদের।
২০২০ সালের ২৯ জুন সকালে মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এমভি মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ রাজধানীর শ্যামপুর পৌঁছায়। এ সময় চাঁদপুরগামী এমভি ময়ূর-২ নামের একটি লঞ্চ পেছনের দিকে বাঁক নিতে গিয়ে এমভি মর্নিং বার্ড লঞ্চটিকে ধাক্কা দিলে লঞ্চটি ডুবে যায়। এ সময় লঞ্চটিতে প্রায় ৬০ যাত্রী ছিল। ডুবুরিরা ৩৪ লাশ উদ্ধার করেন। ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চ উদ্ধার করতে এসে উদ্ধারকারী লঞ্চটির ধাক্কায় পোস্তগোলায় অবস্থিত ‘বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ (১ম) এর কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ করে মুন্সীগঞ্জ জেলার সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ।গত ১৬ জুন সরেজমিন দেখা যায়, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ (১ম) বা পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতুটি দিয়ে শত শত যানবাহন চলাচল করছে। আর সেতুর ওপর ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায়ের কারণে যানজট লেগে আছে। অন্যদিকে সেতুটির কিছুটা সামনে গেলেই চোখে পড়ে সেতুর ওপর বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড ও লোহার পাত দিয়ে রুম বানিয়ে সড়কের এক লেন বন্ধ রাখা হয়েছে। সেতুর দুই পাশে দু’টি সিঁড়ি বানানো হয়েছে। অথচ দুই বছর পার হলেও সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি এখনো মেরামত বা সংস্কার করা হয়নি।
বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু দিয়ে পার হওয়ার সময় প্রাইভেট গাড়ি চালক মো. মামুন, করিম আলী ও ইদ্রিস হোসেন ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘প্রায় সময় এই সেতু পার হয়ে বিভিন্ন স্থানে যাই। সেতুতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায়ের কারণে সেতুটি সরু হয়ে যাওয়ার কারণে কিছুটা যানজট লেগে থাকে। সেতুটির বামপাশে প্রায় দুই বছর ধরে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড ও লোহার পাত দিয়ে রুম বানিয়ে রেখেছে। এখন পদ্মা সেতু চালু হলে যানজটের কারণে এই সেতু এলাকায় যাওয়া আসা মুশকিল হয়ে যাবে।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টোল আদায়কারী একাধিক ব্যক্তি ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুতে দুর্ঘটনার পর থেকে এদিক দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল কমে গেছে। কিছুদিন পর পদ্মা সেতু চালু হবে। এতে প্রায় দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যানবাহনের চাপ অনেক বেড়ে যাবে। ফলে যানজট তীব্র আকারে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কবে নাগাদ এই সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে মুন্সীগঞ্জ জেলার সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশের কাজ শেষ করেই ব্যারিকেড খুলে দেওয়া হবে। সেতুর দুই পাশে সিঁড়ি বানানো হয়েছে, প্রকৌশলীরা তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন, যাতে কোন প্রকার দুর্ঘটনা না ঘটে। আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে সংস্কার হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’ক্ষোভ প্রকাশ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘দীর্ঘ দুই বছর ধরে ‘বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ (১ম) বা পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত স্থানটির ওপর বাঁশ, লোহারপাত দিয়ে ব্যারিকেড ও রুম বানিয়ে রাখা হয়েছে। এটি স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে নির্বিঘ্নে চলাচলে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। সেতুটির ক্ষতিগ্রস্ত স্থানটি মেরামত করা জরুরি। আমি সেতু কর্তৃপক্ষকে অনেকবার অনুরোধ করেছি, কিন্তু কোন কাজ হয়নি।’
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]