শেখ মাহাবুব খুলনা জেলা প্রতিনিধি ,দৈনিক শিরোমণিঃ রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নতি সাধনে সর্বক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আর তাইতো কবি বলেছেন, -“বিশ্বের যা কিছু মহান গৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”। আদিকাল থেকেই আমাদের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক বা পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ দ্বারা নিয়ন্ত্রত। এ ধরনের সমাজে নারী-পুরুষ সম্পর্ক অধস্তনতা ও কর্তৃত্ব, নির্ভরশীলতা ও নিয়ন্ত্রণের ভিত্তিতে নির্ণয় হয়। এভাবে অসমতার ভিত্তিতে নিরূপিত সম্পর্কের কারণে নারী হয় বঞ্চিত, নিগৃহীত ও শোষিত। কালের বিবর্তনে অতীতের অবহেলিত জীবন থেকে নারী সমাজকে জাগ্রত ও তাদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে ও মানবের কল্যাণে বেগম রোকেয়া, নবাব ফয়জুন্নেছা মাদার তেরেসার মতো বর্তমান সমাজে এমনই একজন মহীয়সী নারী যিনি সমাজ ও নারীর কল্যাণে কাজ করে চলেছেন। একাধারে তিনি একজন সফল স্ত্রী, সফল মা, সফল ব্যবসায়ী, সফল মানবসেবী ও দক্ষ সংগঠক। তিনি হলেন সারমিন সালাম। ছোটবেলায় তিনি যখন স্কুলে পড়তেন ঠিক তখন থেকে নিজের খাবার সহপাঠীদের খেতে দিতেন। কারো কলম-খাতা না থাকলে নিজেরটা দিয়ে দিতেন। এমনকি কারো পরীক্ষা ফি ও বেতনের টাকাও তিনি দিয়ে দিতেন। একবারের একটি ঘটনা, সারমিন সালাম সবসময় যে রিকশায় যাতায়াত করতেন, সেই রিকশা চালকের ৮ বছর বয়সী মেয়ে সন্তান বিলকিসের অসুখ হলো। রিকশা চালক টাকার জন্য তার মেয়ে’র চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। সারমিন সালাম বিষয়টি জানতে পারেন। পরে তার মা ফিরোজা সালেহিনের প্রয়োজনীয় কিছু টাকা থেকে লুকিয়ে সেই রিকশা চালকের মেয়ের চিকিৎসার জন্য দিয়ে দেন। পরে তার মা ফিরোজা সালেহিন তাকে বকাঝকা করেন। এভাবেই তিনি স্কুল জীবন থেকে মানুষকে সাহায্য সহযোগিতে করতেন এবং মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হতেন।পরবর্তীতে দেশবরেণ্য কৃতি ফুটবলার ও উদীয়মান ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে হওয়ায় এ সকল কাজের পরিধি আরো বেড়ে যায়। স্বামীর সহযোগিতা, উৎসাহ আর অনুপ্রেরণায় তিনি মানব কল্যাণে নিজেকে মেলে ধরেন। একজন নারী তার সংসার জীবন থেকে শুরু করে নারীর কল্যাণ, কর্মজীবন ও জাতীয় জীবনেও যে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে সারমিন সালাম তার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ফলেই বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ায় সফল অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে তৈরি পোশাক শিল্প। আর এই তৈরি পোশাক শিল্পের অধিকাংশই নারী কর্মী। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘এনভয় গ্রুপ’-এর অধীনে রয়েছে ১৪টি গার্মেন্টস ও ১টি টেক্সটাইল শিল্প। যেখানে প্রায় বাইশ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী শ্রমিক কর্মরত আছেন। আর এই বিপুল সংখ্যক নারীদের দক্ষ করে তোলা থেকে শুরু নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ তৈরিতে এনভয় গ্রুপের পরিচালক হিসেবে সারমিন সালামের অবদান অগ্রগণ্য। এনভয় গ্রুপের পরিচালক হিসেবে এখানে কর্মরত সকল শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে চলেছেন। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের জন্য, মাতৃত্বকালীন ছুটি, দুগ্ধদান মহিলাদের ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার, শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। ফলে শ্রমিকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ তৈরি হওয়ায় কাজের প্রতি তাদের আরো উৎসাহ-উদ্দিপনা সৃষ্টি হয়। এবং শ্রমিকদের কাছে এনভয় গ্রুপের পরিচালক সারমিন সালাম ‘মানবতার মা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকার কথাটা ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এর প্রতিবেদনেও কিছুটা এসেছে। তাহলে দেখুন, নারীর অবদান আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কত বড়। আর এসকল জাতীয় জীবনের অর্জন বা কৃতিত্বের পিছনে নারী কর্মীবান্ধ সারমিন সালামের অবদান অনস্বীকার্য। তাইতো আদর্শ জননী রূপে একজন সফল নারী হয়ে মানবসেবী সারমিন সালাম স্বীয় কর্মে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে, কোটি মানুষের হৃদয়ে যুগযুগ নশ্বর পৃথিবীতে অবিনশ্বর হয়ে বহমান থাকবে।দেশবরেণ্য ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও সাবেক কৃতি ফুটবলার আব্দুস সালাম মূর্শেদী’র সহধর্মীণি সারমিন সালাম মানব সেবার ব্রত নিয়ে নিরলস ছুঁটে চলছেন। রূপে-গুনে অনিন্দ্য সুন্দর এ নারী তার সুন্দর মন, অমায়িক ব্যবহার ও সেবামূলক কর্মকান্ড দিয়ে আজ প্রশংসায় ভাসছেন। তিনি কারো কাছে প্রিয় ভাবী; কারো কাছে শ্রদ্ধেয় চাচিমা; তার মানব সেবায় আকৃষ্ট হয়ে কেউ কেউ তাকে ‘মানবতার মা’ স্বীকৃতি দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় ভাবেও মানবসেবা ও জনকল্যাণ মূলক কাজের জন্য খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে সালাম কে ‘মাদার অফ হিউম্যানিটি’ পুরস্কার দেওয়ার সুপারিশ পাঠানো হয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী, একজন দেশবরেণ্য ব্যবসায়ী, সাবেক কৃতি ও জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি সাধারণ মানুষের সাথে চলাফেরা করেন, শোনেন তাদের সুখ-দুঃখের কথা। দিন শেষে পরিবারকে সময় দেন। প্রিয় সহধর্মণীকে ভালোবেসে ‘বুড়ি ‘ বলে ডাকেন। তাঁকে উৎসাহ দেন। এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেন। একজন নারী, মা ও মানবসেবী হিসেবে তার অবস্থান সমানুপাতিক গতিতে বিদ্যমান। সালাম মূর্শেদী ও সারমিন সালাম দম্পতির এক মেয়ে ও দুই ছেলেসহ তিন সন্তানেক সফল করে গড়ে তোলার সিংহ ভাগ কৃতিত্বের দাবিদার মা সারমিন সালাম এর। একথা স্বামী সালাম মূর্শেদীও অকপটে স্বীকার করেছেন। কারণ ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধি হওয়ায় তিনি পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারেন না। ফলে সন্তান মানুষ করার বেশিরভাগ কৃতিত্ব মা সারমিন সালামের। আর মা হয়ে সারমিন সালাম অনেক চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়ে এই দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। তাদের এক মাত্র মেয়ে শেহরিন সালাম ঐশী যখন লন্ডনের ব্যারিস্টারি পড়তেন। তখন তিনি পরম মমতা মাখানো হস্তে মেয়ের পছন্দের খাবার রান্না করে প্রতি সপ্তাহে ছুঁটে যেতেন সুদূর লন্ডনে মেয়েকে দেখভাল করার জন্য। এভাবে সন্তানদের সঠিক পরিচালনা, উৎসাহ-অনুপ্রেরণা, আদর-ভালোবাসা ও বন্ধুসুলভ আচরণ দিয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে আজ সফল মানুষরূপে গড়ে তুলেছেন। তাইতো শেহরিন সালাম ঐশী দেশের সর্বকনিষ্ঠ ব্যারিস্টারের তকমা অর্জন করতে পেরেছেন। একাধারে তিনি তরুন সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেশের ব্যবসায়ী অঙ্গনে তিনি সুনাম অর্জন করেছেন। সম্প্রতি তিনি বিপুল ভোটে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইর পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। বড় ছেলে ইসমাম সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আজ সফল একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আর ছোট ছেলে আইয়ান সালামকে জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি গড়ে তুলছেন ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করে। শিক্ষা দিচ্ছেন পবিত্র কোরআন ও হাদিস। যাতে করে ধনী-গরিব ভেদাবেদ ভুলে মা-বাবার মতো সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে পারে এবং তাদের দুর্দিনে এগিয় আসতে পারে। তাদের একমাত্র মেয়ে ব্যরিষ্টার শেহরিন সালাম ঐশী তার মা সম্পর্কে বলেন, আমি আমার মায়ের কাছে চিরঋণী। আমার জীবনের সমস্ত অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া। পারিবারিক শিক্ষা থেকে শুরু করে একনিষ্ঠতা, নৈতিকতা ও বুদ্ধিমত্তা সব কিছুই পেয়েছি আমার মা’র কাছ থেকে। আমার কাজের প্রতি তার উৎসাহ-অনুপ্রেরণা ও ভালোবাসা আমাকে আজ ঐশী হিসেবে পরিচিতি করে তুলেছে। আমি বর্তমানে দেশের সর্বকনিষ্ঠ একজন ব্যারিস্টার, এনভয় গ্রুপের পরিচালক সহ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইর তরুণ পরিচালক। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে আমার মা’র কারণে। তিনি চেয়েছিলেন বলেই আজ আমি এখানে আসতে পেরেছি। সেজন্য হয়তো মা সম্পর্কে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, “তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো”। আর তাই আমরা তিন ভাই-বোন আজ সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছি। তাই আমার মা’কে নিয়ে কিছু বলতে গেলে বলতে হয়, প্রথম স্পর্শ মা, প্রথম পাওয়া মা, প্রথম শব্দ মা, প্রথম দেখা মা, আমার স্বর্গ তুমি মা। সর্বোপরি আমি বলবো, আমার মা একজন সফল নারী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।জাতীয় জীবনে অর্থনীতি, রাজনীতির পাশাপাশি নিজের সংসার জীবন ঠিক রেখে, নারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও কল্যাণে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিশেষ অবদান রেখে চলছেন বহুগুণে গুণান্বিত এই নারী। স্বামীর পাশাপাশি সারমিন সালাম মানবিক অনেক কাজ করে চলেছেন। সংসার জীবনে স্বামী সালাম মূর্শেদীর সাথে তার সুন্দর বোঝাপড়া রয়েছে। আর সেজন্য তাদের ভালবাসার বন্ধন অনেক অটুট। তাইতো সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব স্বামীর বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের সাহায্য করে চলেছেন। ফলে সালাম মূর্শেদীর যশ-খ্যাতির পিছনে স্ত্রী সারমিন সালামের অবদান কল্পনাতীত। তাইতো কবির ভাষায় বলতে হয়, “কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পূরুষের তরবারী; প্রেরনা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষী নারী”। সারমিন সালাম ১৯৬৯ সালে ২২ সেপ্টেম্বরে ঢাকার ধানমন্ডিতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা-মোঃ সালেহিন, মাতা-ফিরোজা সালেহিন। তিনি কৃতিত্বের সাথে ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। সারমিন সালাম একজন সাহিত্য অনুরাগী। কবিতা পড়তে ও লিখতে তার ভীষণ ভাল লাগে। মানবসেবায় আর জনকল্যাণে তার জীবনের পুরো সময়টা একটা ধ্রব জোতির ন্যায় আলো ছড়াবে বলে মনে করেন অনেকে। তিনি তার নামে বা বেনামে অনেক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ভাবে মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে চলছেন। কয়েকটি সামাজিক সাংস্কৃতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণে অত্যন্ত দক্ষ ও সাহসি ভূমিকা পালন করেছেন। যেমন, ‘সালাম মূর্শেদী সেবা সংঘ’, ‘সালাম মূর্শেদী ব্লাড ব্যাংক’, ‘ সালাম অক্সিজেন ব্যাংক’, ‘ সালাম মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ও পূর্ণবাসন কেন্দ্র। এছাড়াও, দুস্থ-অসহায় মানুষে চিকিৎসার জন্য যেমন, অর্ধ শাতাধিক চক্ষু রোগীকে চিকিৎসা প্রদান, চার জন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষকে নিজ অর্থায়নে চিকিৎসা প্রদান করেন তিনি। এছাড়াও, পাঁচ শতাধিক দুস্থ ও অসহায় মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে ছাগল ছানা ও সেলাই মেশিন প্রদান করেন। করোনায় বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘ ঘোষিত রূপসার ‘রিয়েল লাইভ আঁখি’কে তার স্বপ্ন পূরণের জন্য উদ্যোক্তা হতে প্রায় ১২ লক্ষাধিক টাকার গার্মেন্টস স্থাপনের মেশিনারিজ দিয়েছেন। এবং খুলনার তিন উপজেলা রুপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়ায় সাংবাদিকসহ গরিব, দুস্থ-অসহায় মানুষের বিপদাপদে তিনি সবসময় পাশে দাড়ান। এমনকি দলিত সম্প্রদায়কেও বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন সালাম।
৮ views