সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ প্রধান মিখাইল গর্বাচেভের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে। তবে এতে উপস্থিত ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি এসময় অন্য কাজে ব্যস্ত থাকবেন এমনটাই জানানো হয়েছিল তার কার্যালয় থেকে। ৯১ বছর বয়সে গত মঙ্গলবার একটি হাসপাতালে মারা যান এই নেতা। এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা।
খবরে জানানো হয়, মহাশক্তিধর সোভিয়েত ইউনিয়ন গর্বাচেভের আমলেই ভেঙে পড়েছিল। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নকে একত্র রাখার অনেক চেষ্টা করলেও, তার ভুলকেই এর পতনের প্রধান কারণ হিসেবে মনে করেন ইতিহাসবিদরা। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে নীতিগত নানা পরিবর্তন এবং সংস্কার এনেছিলেন। এরপরে প্রায় ৩১ বছর বেঁচে ছিলেন গর্বাচেভ। তাকে শনিবার সমাহিত করা হয়। এ জন্য কোনো ধরণের রাষ্ট্রীয় সম্মানও জানানো হয়নি তাকে,এমনকি প্রেসিডেন্ট পুতিনও তার শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন না।
তার মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হল অব কলামসে রাখা হয়েছিল সাময়িক সময়ের জন্য। এর আগে অন্য সোভিয়েত নেতাদেরও মৃত্যুর পর এখানেই শ্রদ্ধা জানাতে আনা হয়েছিল। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে সবসময়ই ‘ভূরাজনৈতিক দুর্যোগ’ বলে চিহ্নিত করে এসেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। খুব সম্ভবত সে কারণেই তিনি গর্বাচেভের শেষকৃত্যে থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি এক বার্তায় জানান, এদিন তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত থাকবেন। রুশরাও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের জন্য গর্বাচেভকে দায়ী মনে করেন। বিশ্বের সবথেকে ক্ষমতাধর দেশ থেকে দুর্বল দেশে পরিণত হয়েছিল রাশিয়া। যদিও পুতিনের হাত ধরে আবারও সুপার পাওয়ার হয়ে উঠেছে দেশটি।
রাশিয়ায় তাকে নিয়ে বিতর্ক থাকলেও পশ্চিমাদের চোখে গর্বাচেভ ছিলেন শান্তির দূত। কয়েক দশকের স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছিলেন তিনি। এ জন্য তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও দেয়া হয়। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি একত্র হওয়ার সময় তিনি কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত ছিলেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিও করেছিলেন এই সোভিয়েত শাসক। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। আর এতেই দেশের মধ্যে ভাঙনের জন্ম হয়। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙে পড়া ঠেকাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন এই নেতা, কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তার ক্ষমতা দখলের মাত্র ৬ বছরের মাথায় ১৯৯১ সালে ভেঙে পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন।
এ কারণে অনেক রুশই এখনও তাকে ক্ষমতা করতে পারেনি। যেই পশ্চিমা নেতারা তার পদক্ষেপে হাত তালি দিয়েছিল, তারাও তার শেষকৃত্যে যোগ দিতে আসেননি। এর পেছনে যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও রয়েছে। তবে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান মস্কো সফর করেছেন গর্বাচেভের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। তার পুতিনের সঙ্গে কোনো বৈঠকের সম্ভাবনা নেই বলে ক্রেমলিনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। তিনি শুধু গর্বাচেভকে ‘গুডবাই’ জানাতেই মস্কো গিয়েছেন।