মাইদুল ইসলাম,গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি:গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধ। মারপিটে সাধারণ ও গুরুতর জখম,শ্লীলতাহানি,বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের। মামলার অভিযোগে উত্থাপিত বিষয়বস্তু নিয়ে এলাকায় তোলপাড়। মিলছে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটী ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটী গ্রামের আঃ মান্নানের পুত্র আশরাফ আলীর সাথে একই গ্রামের প্রতিপক্ষ মৃত কলিম উদ্দিনের পুত্র আনিছুর রহমানগংদের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। আশরাফ আলী মামলার অভিযোগে দাবী করেন,পশ্চিম ছাপড়হাটী মৌজার জেএল নং-১০০,সিএস খতিয়ান নং-৩৫০,আরএস খতিয়ান নং-৫৩৩,দাগ নং-২৭৩ এর ৩২ শতক জমি পৈত্রিক ও ক্রয় সূত্রে মালিক। উক্ত জমিতে বসতবাড়ীসহ দোকানঘর রয়েছে। প্রতিপক্ষ আনিছুর রহমানগং উক্ত জমির মিথ্যা দাবী করে গত ৩০-০৩-২০২২ ইং তারিখ সকাল আনুমানিক ৯ টায় আকষ্মিক হামলা করে বাড়িঘর ভাঙ্গচুর,মারপিট করে সাধারণ ও গুরুতর জখম, শ্লীলতাহানি, চুরি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। এতে বাধা দিতে গিয়ে আশরাফ আলীসহ ৬ ব্যক্তি আহত হন। এ ঘটনায় আশরাফ আলী নিজে বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ আনিছুর রহমানসহ ২০ ব্যক্তিকে আসামী করে গত ০২-০৪-২০২২ ইং তারিখে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা (নং-০৫) দায়ের করেন।
এ দিকে দায়েরকৃত এ মামলার অভিযোগে উত্থাপিত বিষয়বস্তু নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হওয়ায় মিলছে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। প্রশ্ন উঠেছে ঘটনার আসল নেপথ্য রহস্য নিয়ে। অনেকেই বলছেন,মামলায় তফসীল বর্ণিত বিতর্কিত জমি যদি পৈতৃক ও ক্রয় সূত্রে বাদী আশরাফ আলী মালিক হন তবে ২০০২ সালে প্রতিপক্ষ আনিছুর রহমানগং এ জমি কবলা দলিল মূলে এ.টি.এম মাহবুব আলমের নিকট বিক্রি করলেন কি ভাবে? আর কি ভাবেই বা জমি ক্রেতা এ.টি.এম মাহবুব আলম প্রায় ২০ বছর ধরে এ জমি নিজের ভোগদখলে রেখেছেন। এ জমি চৌমুহনী বাজার সংলগ্ন হওয়ায় ব্যবসা বানিজ্যের সুবিধার্থে ক্রেতা এ.টি.এম মাহবুব আলম মাটি ভরাট করে ইটের প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
সেইসাথে ব্যবসায়ীঘর নির্মাণে জমির উপরে ইট সংরক্ষণ করে রেখেছেন। যা এখনও দৃশ্যমান। বাদী আশরাফ আলী যদি প্রতিপক্ষ আনিছুর রহমানগংদের ওয়ারিশ হয়ে থাকেন তিনি পারতেন এ জমির উপরে বাটোয়ারা মামলা দিতে। কিংবা জমি বিক্রির বিষয় অবগত হবার সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞ আদালতে টাকা দাখিল করে মামলা দিতে। তিনি এসবের কিছুই করেননি। বাদী আশরাফ আলীর দাবীমতে, তফসীল বর্ণিত বিতর্কিত জমিতে যদি পূর্ব থেকে বসতবাড়ীসহ দোকানঘর থেকে থাকে তবে কতটি ঘর? কোন ঘর কোন দুয়ারি? ঘরগুলোর অবস্থানসহ কত বছর ধরে জমি ভোগদখল করে আসছেন তা মামলার অভিযোগে উত্থাপন করা উচিত ছিলো। এ-ও প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিপক্ষ আনিছুর রহমানগং যদি বসতবাড়ীতে হামলা করে থাকেন তবে হামলার সময় আশরাফ আলীসহ পক্ষীয় লোকজন আত্মরক্ষায় চিৎকার দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতেন। অথচ হামলার শিকার হয়ে একের পর এক আহত হলেও চিৎকার না দেয়ার নেপথ্য রহস্য কি? বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ।
এ হামলায় যদি বাদী আশরাফ আলীসহ ৬ ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়ে থাকেন সেখানে শুধুমাত্র বাদী আশরাফ আলী হাসপাতালে ভর্তি হলেন অন্যরা ভর্তি না হবার কারণই বা কি? আশরাফ আলী বা কোন হাসপাতালে ভর্তি হলেন? তা মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা উচিত ছিল। শুধু তাই নয়, যেহেতু এই বিতর্কিত জমিটি চৌমুহনী বাজার সংলগ্ন জনসমাগম এলাকায় একারণে বসতবাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করা হলে আশরাফ আলীর উচিত ছিলো চিৎকার দেয়া সেইসাথে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনাসহ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা কিন্তু তিনি তা করেননি।
সত্য সত্যিই যদি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে থাকে তবে বাজারের লোকজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষী হবার কথা। সেখানে বাদী আশরাফ আলীর বাড়ীর আশেপাশের নিকটতম লোকজন সাক্ষী হলেন কি করে বিষয়টি হাস্যকর ও রহস্যজনক। বাদী আশরাফ আলীর নিজস্ব লোকজন থাকতে গাইবান্ধা সদর উপজেলার মৌজা মালিবাড়ি গ্রামের জনৈক আবু বক্করকে দিয়ে থানায় এজাহার দাখিলের উদ্দেশ্যেই বা কি? তবে কি আবু বক্কর গ্রাম্য ভূঁইফোড় টাউট বাজ দেওয়ানি? বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত?
বিজ্ঞাজনদের ধারণা, পুলিশ প্রশাসন তৎপর হলে সঠিক তদন্তে বেড়িয়ে আসবে ঘটনার নেপথ্য রহস্য। সেইসাথে মিলবে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]