মাইদুল ইসলাম,গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: "নদীর একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে এইতো নদীর খেলা,সকালবেলা আমীর রে ভাই ফকির সন্ধ্যা বেলা"। পৃথিবীতে সুখ-দুঃখের পরিক্রমায় মানুষের জীবনও নদীর মতো প্রবাহমান।বলছিলাম,প্রমত্তা তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে নিঃস্ব ৩ অসহায় ভূমিহীন পরিবারের কথা। সর্বস্বান্ত নিঃস্ব এই অসহায় পরিবার গুলোর এখন শেষ ঠিকানা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ওয়াপদা বাঁধ। ভাঙ্গনের ২০ বছর অতিবাহিত হলেও আজবধি হয়নি এদের ভাগ্যের পরিবর্তন। মেলেনি স্থায়ী আবাসন।
ধার-দেনায় এক চিলতে জমি কিনলেও তাও বিক্রেতার দখলে। অর্থাভাবে মামলা করতে না পারায় নিরবে নিভৃতে কাঁদছে তাদের বিচারের বাণী।জানা গেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের লালচামার সরকারপাড়া গ্রামে একসময়ে বসবাস করতো মৃত.আব্বাস আলী কবিরাজের পুত্র মোজাম্মেল হক কবিরাজ ও মৃত.খলিলুর রহমানের পুত্র আজাহার আলী,ওয়াদুদ মিয়া। প্রভাব-প্রতিপত্তি আর সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটতো তাদের। কিন্তু বিধি বাম, প্রমত্তা তিস্তা নদীর ৫ দফা ভাঙ্গনে কৃষিজমি,বসতভিটা,ফসল,গবাদি সম্পদ,গাছপালা,গৃহ সামগ্রী সবকিছুই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নিঃস্ব,রিক্ত,সর্বস্বান্ত এই পরিবারগুলো ভূমিহীনের কাতারে সামিল হয়ে তাদের এখন শেষ ঠিকানা এ ইউনিয়নের লালচামার বাজার সংলগ্ন ওয়াপদা বাঁধ।
ভাঙ্গনের ২০ বছর অতিবাহিত হলেও আজবধি ভাগ্যে মেলেনি স্থায়ী আবাসন। জমিজমা না থাকায় দিনমজুরের কাজই তাদের একমাত্র পেশা। এ পেশায় সামান্য আয়ে কোন রকমে সংসার চলে তাদের। এভাবে আর কতদিন ? তাই সংসারের শেষ সম্বল হাঁস-মুরগী,গরু-ছাগল বিক্রির অর্থ দিয়ে ২০১৮ সালে ৩ পরিবার মিলে কেনেন ২৮ শতক জমি। এতে দেখেন সুখের স্বপ্ন, খুঁজে পান মাথা গুজিবার ঠাঁই। ভুক্তভোগী এই ৩ পরিবারের দাবী, এবারে নদী ভাঙ্গন নয়। জমি ভোগদখলে থাকা অবস্থায় জমি বিক্রেতা একই উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের সীচা গ্রামের মৃত. ঝনু শেখের পুত্র কাচু মামুদ ব্যাপারী ও কাচু মামুদ ব্যাপারীর পুত্র পরস্পর যোগসাজশে গত ১৯-১২-২০১৯ ইং তারিখ সকাল আনুমানিক ১০ টায় আকষ্মিকভাবে জমি বেদখল দিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ করেন। বর্তমানে এ বাড়িঘরে অবস্থান করছেন আঃ করিম নামের জনৈক ব্যক্তি।
এ ব্যাপারে জমি ক্রেতা মোজাম্মেল হক কবিরাজ গত ১-০৬-২০২০ ইং তারিখে অফিসার ইনচার্জ সুন্দরগঞ্জ থানা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।অভিযোগের প্রেক্ষিতে এস.আই জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিরসনের জন্য চন্ডিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফুলমিয়াকে অনুরোধ করেন। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান ফুল মিয়া উভয়পক্ষ কে নিয়ে সালিশি সভার আয়োজন করেন। এতে উভয়পক্ষের জবানবন্দি এবং কাগজপত্র পর্যালোচনা করে অভিযোগের সত্যতা পান। কিন্তু এ জমির উপর বিজ্ঞ আদালতে ২৮/১৭ অন্য বাটোয়ারা মামলা থাকায় তা নিরসন করা সম্ভব না হওয়ায় বিজ্ঞ আদালতের সহায়তা গ্রহনের লিখিত পরামর্শ দেন।
এ দিকে, ইউপি চেয়ারম্যানের এমন পরামর্শে জমি ক্রেতা মোজাম্মেল হক কবিরাজ,আজাহার আলী ও ওয়াদুদ মিয়া অর্থাভাবে মামলা করতে পারছেন না। অপর দিকে, বাঁধ সংষ্কার কাজ শুরু হওয়ায় ইতোমধ্যে বাড়িঘরও সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় মাথায় যেন বাজ পড়েছে। এমন কোন স্বহৃদয় ব্যক্তি নেই যার জমিতে আশ্রয় নিয়ে খুঁজে পাবেন মাথা গোঁজার ঠাঁই।
এমন উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় এক দিকে বুক ফাটা আর্তনাদ অন্য দিকে জমি কিনে প্রতারিত হবার দায়ে নিরবে নিভৃতে কাঁদছে তাদের বিচারের বাণী। তাদের একটাই দাবী জমি চাই না ! চাই টাকা ফেরৎ। এলাকার সচেতন মহলের মন্তব্য, ২০১৭ সালে যদি জমির উপরে বাটোয়ারা মামলা থাকে তবে জেনেশুনে ২০১৮ সালে কাচু মামুদ ব্যাপারী জমি বিক্রি করলেন কি করে ? জমি দখলের নেপথ্য রহস্যই বা কি ? বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ ও রহস্যজনক। ইউপি চেয়ারম্যান ফুল মিয়া বলছেন, জমি ক্রেতাগণ অসহায় নদীভাঙ্গা মানুষ। আমিও চাই তারা ন্যায় বিচার পাক। এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগী অসহায় ভূমিহীন এই ৩ পরিবারসহ এলাকার সর্বস্তরের জনগণ। আমরাও চাই তাদের পুনঃ পুনঃ সফলতা।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]