এস এম শাহাদৎ হোসাইন গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ বিজ্ঞানের যুগের অজ্ঞতার যুগের কবিরাজির মাধ্যমে চিকিৎসা চলছে। ১০ বর্গফুট জায়গা বাঁশ দিয়ে ঘেড়া। চারকোনায় চারটি কলাগাছ, উপরে ছামিয়ানা। ছামিয়ানার নিচে সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা। তিনি মাঝামাঝি স্থানে বসা। পাশে ঝাড়– হাতে এক কবিরাজ। তিনি নেচে নেচে গান গাইছেন। নাচ গানের তালে বৃদ্ধার চারদিকে ঘুরছেন। এরপর বৃদ্ধাকে ঝাড়–দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছেন মাথা থেকে পা পর্যন্ত। তার নেচে নেচে সঙ্গে ঘুরছেন কয়েকজন কিশোরী। তাদের পরনে হলুদ শাড়ি। তারাও কবিরাজের সঙ্গে সুর মিলিয়ে নাচ গান করছে আর বৃদ্ধার মুখমন্ডল মুছে দিচ্ছে তাদের শাড়ির আঁচল দিয়ে। এসব দৃশ্য উপভোগ করছে প্রতিবেশীরা। গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের নশরৎপুর গ্রামের কবিরাজ ফুল মিয়া নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় অপচিকিৎসা দিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ফুল মিয়ার তেমন লেখাপড়া নেই। এক সময় তিনি গাইবান্ধা শহরে কুলির কাজ করতেন। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নিজ বাড়িতে কবিরাজি করছেন। প্যারাইসিস রোগিদের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন তিনি। প্রতি রোগিকে ৩০ থেকে ৫০ মিনিট ঝাড় ফুঁক দেন। এ জন্য একজন রোগির কাছ থেকে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত ফি নেন। ঝাড় ফুঁকের সময় তার সঙ্গে ৫/৬ জন কিশোরী থাকেন। তারা সবাই ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তাদেরও কিছু সম্মানি দেন কবিরাজ। এক কিশোরী বলেন, এতে তাদের আনন্দ লাগে, রোগিরাও ভালো হয়। এ পর্যন্ত কতজনকে চিকিৎসা দিয়েছেন তার কোনো হিসাব কবিরাজের কাছে নেই। কুসংস্কারকে বিশ্বাস করে দূর-দূরান্ত থেকে রোগিরা এখানে আসছে। তারা সুস্থ হয় কি না এলাকাবাসী জানেন না। কবিরাজ ফুল মিয়ার বলেন, তার কাছে আসা সব রোগিই সুস্থ হয়। রোগিকে তিনি গ্যারান্টি দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। তার মতে, ঝাড় ফুঁক করতে অনেক সময় লাগে। এ সময় রোগিরা বিরক্ত হন। ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন। তাই বিনোদনের মাধ্যমে ঝাড় ফুঁক করা হয়। ঝাড়–র ব্যবহারের কারণ কি, জানতে চাইলে কবিরাজ বলেন, ঝাড়–টি বান (দোয়া তাবিজ) করা। এটি রোগির শরীরে ছুঁয়ে দিলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। কবিরাজের কাছে আসা ওই বৃদ্ধার এক আতœীয় বলেন, এই কবিরাজের কাছে ঝাড় ফুঁক নিয়ে অনেকে সুস্থ হয়েছে শুনে তারা এখানে এসেছে। নশরৎপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক আব্দুস সোবহান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কবিরাজ ফুল মিয়া এভাবে অপচিকিৎসা দিচ্ছেন। তার খপ্পরে পড়ে নিরীহ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। রোগ তো ভালো হচ্ছেই না বরং তারা টাকা পয়সা নষ্ট করছেন। গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. আ ক ম আখতারুজ্জামান বলেন, গ্রামাঞ্চলে এসব কুসংস্কার এখনো আছে। এ ধরণের অপচিকিৎসার কোনো ভিত্তি নেই। স¤পূর্ণ কুসংস্কার এবং প্রতারণা। রোগব্যাধি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। যেকোনো রোগের জন্য হাসপাতাল রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঝাড় ফুঁকে তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হলেও রোগি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। এসব কবিরাজের কাছ থেকে বিরত থাকাই ভালো।