মাইদুল ইসলাম, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে মামলা দায়েরের প্রায় সাড়ে ৩ বছর অতিবাহিত হলেও সুবাস চন্দ্র দাসের মৃত্যু রহস্য নিয়ে এলাকায় এখনো থামছেনা আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। প্রশ্ন উঠেছে, এটি পরিকল্পিত হত্যা না অন্য কিছু?
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটী ইউনিয়নের দক্ষিণ মরুয়াদহ গ্রামের কবিতা রানীর স্বামী সুবাস চন্দ্র দাস পেশায় একজন জেলে ছিলেন।
গত ২৮-১০-২০১৮ ইং তারিখ রাত আনুমানিক ১১ টায় অন্যান্য দিনের ন্যায় মাছ ধরার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। রাত শেষে বাড়ি ফিরে না আসায় অনেক অনুসন্ধানের পর ০২-১১-২০১৮ ইং তারিখ বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩ টায় জনৈক মোজাফ্ফর হোসেনের বিলের পানির নীচ হতে সুবাস চন্দ্র দাস (৪২) এর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ গোপন করার অপরাধে কবিতা রানী বাদী হয়ে গত ০৩-১১-২০১৮ ইং তারিখে অজ্ঞাতনামা আসামী করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা (নং-০৩) দায়ের করেন।
এ দিকে, এ মামলা দায়েরের প্রায় সাড়ে ৩ বছর অতিবাহিত হলেও সুবাস চন্দ্র দাসের এ মৃত্যু রহস্য নিয়ে এলাকায় এখনো থামছেনা আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। দায়েরকৃত এ মামলার অভিযোগে উত্থাপিত বিষয়বস্তু নিয়েও চলছে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। প্রশ্ন উঠেছে,এটি পরিকল্পিত হত্যা না অন্য কিছু?
অনেকেই বলছেন,মামলার অভিযোগে বাদী কবিতা রানীর দাবী মতে বিলের মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে জনৈক সাকা মিয়া,সিরাজুল,রাঙ্গা,মতিনগণের সাথে যদি সুবাস চন্দ্র দাসের বিলের মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে মনোমালিন্য হয়ে থাকে তা কবে কত মাস বা কত বছর পূর্বে ঘটেছিল মামলার অভিযোগে তা উল্লেখ করা উচিত ছিল।
এ ঘটনার জের ধরে যদি হত্যা করার হুমকী দিয়ে থাকে তবে সুবাস চন্দ্র দাসের উচিত ছিল থানায় সাধারণ ডায়েরি কিংবা স্থানীয়ভাবে ইউপি চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে অবগত করা। তিনি এসবের কিছুই করেননি। এ কারণে হুমকী-ধামকীর বিষয়টি নিয়েও রয়েছে সংশয়। গত ২৮-১০-২০১৮ ইং তারিখ রাতে সুবাস চন্দ্র দাস বাড়ি হতে বের হয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে জনৈক মোজাফ্ফর হোসেনের বিলে মাছ ধরতে যান এরপর আর বাড়ি ফিরে যাননি। এ কারণে বাদী কবিতা রানীর লোকজন সুবাস চন্দ্র দাসের সন্ধান চেয়ে মাইকিং প্রচারসহ জনৈক মোজাফ্ফর হোসেনের বিলের সমস্ত পুকুর ও পানিবন্দি জলাশয় গুলো তল্লাসী করেন। এতে করেও সন্ধান মিলাতে পারেননি। এর এক পর্যায়ে গত ০২-১১-২০১৮ ইং তারিখ বিকেল আনুমানিক ৩ টায় মামলার বাদী কবিতা রানী লোকমুখে জানতে পারেন জনৈক মোজাফ্ফর হোসেনের বিলের পানির মধ্যে একজন লোকের লাশ পড়ে আছে। এমন খবরের ভিত্তিতে বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩টায় লোকজনসহ বিলে গিয়ে স্বামী সুবাস চন্দ্র দাসের লাশ সনাক্ত করেন। এতে করে প্রশ্ন উঠেছে, সুবাস চন্দ্র দাস কি করে রাত ১১ টায় বাড়ি হতে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে জনৈক মোজাফ্ফর হোসেনের বিলে মাছ ধরতে এলেন? বিলে তল্লাসী চালানোর পর কি করেই বা বিলের পানির নীচে সুবাস চন্দ্র দাসের লাশ এলো? ঘটনাস্থলের আশেপাশের লোকজন জানার আগেই প্রায় ২ কিলোমিটার দূর থেকে বাদী কবিতা রানী কোন লোকের মুখে লাশের খবর পেলেন বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। প্রশ্ন উঠেছে, যেহেতু সুবাস চন্দ্র দাস একজন জেলে এবং মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন এ কারণে রাতে যখন মাছ ধরতে বের হন তখন তার হাতে কি ধরণের আলোর ব্যবস্থাসহ মাছ ধরার সরঞ্জাম ছিল মামলার তদন্তের স্বার্থে এগুলো খতিয়ে দেখা উচিত। সুবাস চন্দ্র দাসকে যদি পিটিয়ে,কুপিয়ে,শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়ে থাকে তবে শরীরে জখমসহ আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা। মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে সুরতহাল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন মতে লাশের মাথা হতে পা পর্যন্ত যৌনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গের চামড়া ছেলার কারণে জখমের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়নি। গলার সামনে একটি কালচে দাগ পরিলক্ষিত হয়েছে। সচেতন মহলের মন্তব্য, সুবাস চন্দ্র দাস মাছ ধরতে বিলের মাছের কোন প্রজেক্টের বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন কি না খতিয়ে দেখা উচিত। সঠিক তদন্ত করা না হলে এ মৃত্যুর নেপথ্য রহস্য অন্তরালেই থেকে যাবে।হয়রানির শিকার হবে নিরাপরাধ ব্যক্তি আর সহজেই পাড় পেয়ে যাবেন আসল অপরাধী।
এলাকার সর্বস্তরের জনগণসহ ভুক্তভোগী মহলের দাবী, পুলিশ প্রশাসন তৎপর হলে সঠিক তদন্তে বেড়িয়ে আসবে সুবাস চন্দ্র দাস হত্যার আসল নেপথ্য রহস্য। সেই সাথে মিলবে বিতর্কিত সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান।
৭৮ views