জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ১১ দিনের সংঘর্ষের পর গাজায় মানবিক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবার পর ফিলিস্তিনিরা এখনো রাস্তাঘাট থেকে ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলোর ইট-পাথর পরিষ্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার (২২ মে) থেকে যুদ্ধবিরতি বলবৎ হবার পর দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকে সেই সমঝোতা ভঙ্গের অভিযোগ ওঠেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার ইসরায়েল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীর সফরে যাবেন বলে জানা গেছে। গাজায় অবকাঠামো পুননির্মাণে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
গাজায় ১১ দিন পর এই প্রথম শুক্রবার রাত ছিল শান্ত। বিবিসির সংবাদদাতারা বলছেন, ফিলিস্তিনিরা শান্তিপূর্ণভাবেই এই রাতটি পার করেছে, ইসরায়েলের দিক থেকে কোনো বিমান হামলা চালানো হয়নি। ইসরায়েলি শহরগুলো লক্ষ্য করে হামাসও কোনো রকেট নিক্ষেপ করেনি।
গাজায় ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়ির বাইরে বের হয়ে এসেছেন, দেখছেন কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়া হাজার হাজার মানুষ যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিনে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।
গতকালও ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বেশ কয়েকটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সংঘর্ষে ২৪৮ জন ফিলিস্তিনি এবং ১২ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। আহত লোকজনকে সরিয়ে আনার জন্য করিডোর তৈরি করার আহবান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
জাতিসংঘ বলছে, সর্বশেষ এই যুদ্ধে ৮০ হাজারের মতো মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ এখনও নিজেদের বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরে আসার চেষ্টা করছে।
তবে গাজায় ইতোমধ্যেই মানবেতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই কয়দিনের যুদ্ধে গাজায় পানির অনেক পাইপলাইন ধ্বংস হয়ে গেছে, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ইসরায়েল সীমান্তের একটি অংশ আংশিক খুলে দেওয়ার পর ৫০টির মতো লরি জরুরি খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে গাজায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে।
সাহায্য সংস্থাগুলো অনুমান করছে, ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘরও অবকাঠামো পুনরায় নির্মাণ করতে কোটি কোটি ডলার খরচ হবে এবং এই কাজটি করতে লেগে যাবে কয়েক বছর।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, করোনাভাইরাস স্থানীয় অর্থনীতির জন্য বড়ধরনের বিপর্যয় তৈরি করেছে। গাজা এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় সবে মাত্র কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিল। ফলে এই লড়াই সেই ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বড়ধরনের একটা ধাক্কা দিয়েছে।
গাজা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় আটটি শিবিরে গাদাগাদি করে বাস করেন প্রায় ৬ লাখ শরণার্থী। গাজা সিটিতে এক বর্গ কিলোমিটারে বাস করেন ৯ হাজারের অধিক মানুষ। যা সাধারণত এক বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গড়ে বসবাসের চেয়ে অনেক বেশি।
এই যুদ্ধের কারণে গাজার কয়েকশ’ বসতবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে। অনেক বাড়ি মাটিতে মিশে গেছে। জাতিসংঘ বলছে, প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে বেশ সময় লেগে যাবে।
জাতিসংঘের হিসাবে গাজায় দশ লাখের ওপর মানুষ মাঝারি থেকে গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে। ত্রাণের খাদ্যবাহী গাড়ির বহর যাবার জন্য সীমান্ত চৌকিগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু গোলাবর্ষণের কারণে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খাদ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।
গাজার বেশিরভাগ মানুষ পানির সঙ্কটে দিন কাটান। কলের পানি লবণাক্ত এবং দূষিত এবং পানের উপযোগী নয়। পরিবারগুলো কলের পানি পেত প্রতি চার দিন অন্তর মাত্র ৬ থেকে ৮ ঘন্টার জন্য। এর কারণ ছিল পানি পাম্প করার জন্য বিদ্যুতের অভাব। সাম্প্রতিক এই লড়াইয়ের ফলে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। পানির সরবরাহ আরও কমে গেছে বিদ্যুতের অভাবে।
এদিকে জাতিসংঘ গাজার জন্য অতিরিক্ত ৪.৫ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা ঘোষণা করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক শুক্রবার এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘দখলকৃত ফিলিস্তিন ভূখন্ডের জন্য এই সপ্তাহের শুরুর দিকে মানবিক সহায়তা হিসেবে জরুরি তহবিল সরবরাহের জন্য ১৪.৫ মিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণার পর জরুরি ত্রাণ সরবরাহ সমন্বয়ক শুক্রবার অতিরিক্ত আরও ৪.৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার কথা জানান।’
খবর বিবিসি
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]