গাজীপুর প্রতিনিধি :
গাজীপুরের নাওজোড় এলাকায় দিগন্ত সোয়েটার কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কিছু সময়ের জন্য মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করেছে। শ্রমিকদের অবরোধের ফলে কিছু সময়ের জন্য মহাসড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও পুলিশ জানায়, দিগন্ত সোয়েটার কারখানায় জ্যাকার মেশিন বসানোকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মধ্যে সম্প্রতি ছাঁটাই আতঙ্ক দেখা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকরা শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। গতকাল মালিকপক্ষ পুলিশের উপস্থিতিতে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়। কিন্তু আজ সকালে শ্রমিকরা দিগন্ত কারখানায় কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সেকশনে মেশিনের লাইট, মেশিন ভাঙচুর অবস্থায় দেখতে পান।
পরে তারা আন্দোলনে নেমে নির্বিচারে ভাঙচুর চালায় এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা মিছিল সহকারে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী কোস্ট টু কোস্ট কারখানায় হামলা চালায়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ভবনের কাঁচ, আইটি সেকশনের কম্পিউটার, মেশিনপত্র ভাঙচুর করে এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি বাইরে ফেলে দেয়।
এছাড়া ভাঙচুর করা হয় মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, পিকআপসহ অন্তত ১০টি গাড়ি। শ্রমিকদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনায় পথচারীসহ অন্তত ১০জন আহত হন। আহতদের হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
খবর পেয়ে বাসন থানা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করে এবং তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। শ্রমিকরা সরে গেলে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
শ্রমিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আশপাশের কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে মেশিনপত্র তছনছ করেছে। এ ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সকাল আটটার দিকে তারা আন্দোলনে নামেন। এসময় শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে।
দিগন্ত সোয়েটার কারখানার নিটিং সেকশনের শ্রমিক মোরশেদ আলম বলেন, মালিকপক্ষ কারখানায় জ্যাকার মেশিন বসিয়ে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পায়তাঁরা শুরু করে। এক পর্যায়ে কারখানার ১৮শ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই জের ধরে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলনে নামে। পরে গতকাল পুলিশের উপস্থিতিতে মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের সমঝোতা হয়।
কিন্তু সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়ে তাদের মেশিনপত্র ভাঙচুর অবস্থায় দেখতে পান। মালিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষ মেশিনপত্র ভাঙচুর করে শ্রমিকদের ফাঁসিয়ে দিচ্ছে এবং মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবরে শ্রমিকদের মধ্যে ফের উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় তারা বিক্ষোভ মিছিল করে সড়কে এসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার একটি বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেয়। এতে বলা হয়, ‘যে ফ্লোরে যেদিন কাজ শেষ হবে তার একদিন পর চলতি মাসের পাওনাদি পরিশোধ করা হবে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর কাজের অর্ডার পাওয়া যাবে। তখন সকলকে কাজে যোগদানের জন্য ফোন করা হবে।
ছুটিকালীন শ্রমিকদের আইনানুযায়ী বেতন দেয়া হবে ২৫ নভেম্বর ও ২৭ ডিসেম্বর। ছুটির পর কাজে যোগ দেয়ার সময় শ্রমিকদের আইডি কার্ড হস্তান্তর করা হবে। প্রত্যেককে কারখানা খোলার সময় যোগদানের নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে। কর্মরত শ্রমিকদের নাম ও কার্ড নম্বরের তালিকা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে জমা দেয়া হবে’।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, দিগন্ত সোয়েটার কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের ঝামেলার কারণে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]