রাকিব হাসান আকন্দ, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি : গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালা এলাকায় এস এম নীট ওয়্যারস লিমিটিড কারখানার শ্রমিকেরা ২৩ হাজার টাকা বেতন বৃদ্ধির দাবীতে আন্দোলন করেছে। সকালে শ্রমিকেরা কারখানা অভ্যন্তরে কাজ বন্ধ করে উৎপাদন ফ্লোরে শান্তিপূর্ণভাবে বসে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ফ্লোর থেকে কারখানার নিচে নেমে অ্যাসেম্বলী পয়েন্টে এসে জড়ো হয় এবং বিক্ষোভ শুরু করে। শনিবার (০৪ নভেম্বর) সাড়ে ৯ টায় ওই কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার একজন শ্রমিক জানান, বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পোশাক কারখানায় আন্দোলন শুরু হয়। ওইদিন সকাল ১০ টায় কারখানার পরিচালক আলী হোসেন সকল শ্রমিককে ডেকে আন্দোলন না করার জন্য অনুরোধ করে এবং তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেয় সেটা কারখানা কর্তৃপক্ষ মেনে নিবে বলে তাদের জানিয়ে দেয়। পরে বেলা ১১ টায় ওই দিনের জন্য কারখানা ছুটি ঘোষনা করে। দুপুররের পর কারখানা কর্তৃপক্ষ কিছু শ্রমিককে (ডায়িং সেকশনের) ডেকে এনে কাজ করায়।
শনিবার (০৪ নভেম্বর) শ্রমিকরো বৃহস্পতিবার শ্রমিকদেরকে দুপুরের পর কাজ করানোর কথা জানতে পেরে তারা কারখানায় প্রবেশ কওে কাজ বন্ধ করে উৎপাদন ফ্লোরে শান্তিপূর্ণভাবে বসে থাকে। এক পর্যায়ে তারা নিচে নেমে কারখানা অভ্যন্তরে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ গেইট খুলে দিলে শ্রমিকেরা সকাল সাড়ে ১০ টায় বিক্ষোভ নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উঠে পাশের এসরোটেক্স পোশাক কারখানার শ্রমিকদেরকে তাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিতে বলে। কিছু শ্রমিক তাদের সাথে একাতœতা প্রকাশ করে বিক্ষোভ সহকারে শ্রীপুর উপজেলার মাস্টারবাড়ী এলাকার মেঘনা নীট কম্পোজিট পোশাক কারখানার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় এক দুই শ্রমিক আহত হয়। গুরুতর আহত সুইং সেকশনের অপারেটর (পরিচয় পত্র নং-২৬০৮-১০১১৭) মোছা: রাশিদা খাতুনকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। অপর আহত পুরুষ শ্রমিকের পারচিয় পাওয়া যায়নি।
তবে আন্দেলরত শ্রমিকেরা দাবী করছে পাশের এসরোটেক্স পোশাক কারখানার শ্রমিকদেরকে নিয়ে তারা মহাসড়ক দিয়ে মেঘনা কারখানার দিকে যাচ্ছিল। এসময় পুলিশ তাদেরকে গুলি করলে একজন নারীর চোখ বা মাথায় এবং পুরুষ শ্রমিকের পায়ে গুলি লাগলে তারা আহত হয়। গুরুতর আহত নারী শ্রমিককে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পায়ে গুলিবিদ্ধ পুরুষ শ্রমিককে স্থানীয় বাঘের বাজার এলাকার একটি ক্লিনিকে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) মিরাজুলইসলাম বলেন, শ্রমিকেরা হঠাৎ করে মহাসড়কে কেন আসলো তা বুঝতে পারিনি। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল মহাসড়কে এসে তারা গাড়ী বন্ধ করে দিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি করার চেষ্টা করার ইচ্ছে ছিল। আমরা কোনো শ্রমিককে হামলা করিনি। তবে অনেকে বলতেছে একজন মারা গেছে, এটা সম্পূর্ণ গুজব। পোশাক কর্মীরা আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়েছে। আমরা জানতে পেরেছি তাদের’ই ইটের আঘাতে একজন নারী শ্রমিক আহত হয়েছে। পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ৯ জনকে আটক করার কথা স্বীকার করলেও তাদের পরিচয় জানাতে পারেনি।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার (এসপি) সারোয়ার আলম বলেন, এস এম নীট ওয়্যারস লিমিটিড কারখানার শ্রমিকেরা কাজ না করে বাইরে এসে আন্দোলন করার চেষ্টা করছিলো। পুলিশ তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করে। তারা পাশের অন্য একটি শ্রমিকদেরকে সাথে নিয়ে মহাসড়কে উঠে গেলে পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় বিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে একজন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এবং একজন ইন্সপেক্টর আহত হয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।