শেখ তোফাজ্জেল হোসেন খুলনা সিটি প্রতিনিধিঃ
করোনাকালীন মহামারীর কঠোর লকডাউনের মধ্যে ফুলতলা উপজেলার সহকারি কমিশনার(ভূমি) রুলী বিশ^াসের স্বাক্ষরিত গিলাতলা মহাজন কলোনীর সরকারি ভুমি অবৈধ দখল উচ্ছেদের নোটিশে উত্তোপ্ত হয়ে উঠেছে গিলাতলার ২নং কলোনী। দীর্ঘ কয়েক যুগ যাবত বসবাসকারী কলোনীর প্রায় ১১৮জনকে গত ২৫ এপ্রিল এক যোগে একই স্বারকে দেওয়া হয় উচ্ছেদ অভিযানের এ নোটিশ। কোন কারণ ছাড়াই সাত দিনের সময় বেধে দিয়ে হঠাৎ করে এই নোটিশের পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে গোটা কলোনীবাসী। এরই প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার আছরবাদ সর্বস্থরের কলোনীবাসীর উদ্যোগে আয়োজন করা হয় সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভা। গিলাতলা ২নং কলোনীর সবুজ পল্লীতে সবুজ পল্লীর সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে এবং খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বেগ আব্দুর রাজ্জাকের পরিচালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা করেন খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন, ফুলতলা উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ফারজানা ফেরদৌসি নিশা, আটরা গিলাতলা ইউনিয়নের স্বর্ণপদক প্রাপ্ত সাবেক চেয়ারম্যান শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন, ৩৬নং ওয়ার্ড আওয়মীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কিসমত আলী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সরদার আলী আহম্মেদ, ৩৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল হক, ওয়ার্ড মেম্বর নবীরুল ইসলাম রাজা, হাফেজ মোঃ আলীয়া, মোঃ বায়জিত হোসেনসহ স্থানীয় কলোনীর গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। প্রতিবাদ সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে মানবিক কারণে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে এদেশে স্থান দিয়ে তাদের দেখা শুনার দায়িত্ব নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে গৃহহীনকে গৃহ প্রদান করছে সেখানে কাউকে গৃহহীন করে উচ্ছেদ করবে এটা হতে পারেনা। নেতৃবৃন্দ বলেন দীর্ঘ ৩০ বছরের অধিক সময় বসবাসকারীদের হঠাৎ করে উচ্ছেদ সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করার জন্য একটি মহলের ষড়যন্ত্রের অংশ এটি। বক্তারা আরো বলেন যাদের জন্য জমি অধিকগ্রহণ তাদের উচ্ছেদ কার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত তা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। নেতৃবৃন্দ আগামী দুই দিনের মধ্যে নোটিশ প্রত্যাহার করা না হলে জেলা প্রশাসক এবং প্রধানমন্ত্রীকে স্বারকলিপি প্রদানসহ এ সকল পরিবারের অস্থিত্ত রক্ষায় আইনী প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আন্দোলন কর্মসুচি ঘোষনা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে, ১৯৬৪ সালে ত্রাণ ও পূনবাসন মন্ত্রণালয়ের অধিনে জমি অধিক গ্রহণ করে কিছু পরিবারকে ১৯৬৪ সালে এখানে পুনবাসনের সুযোগ করে দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পালিয়ে যাওয়া অর্ধেক পরিবার কলোনীতে পুনরায় ফিরে এসে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। সেই থেকে গিলাতলা ১ ও ২নং কলোনীতে প্রায় ৫শ পরিবার কেহ ৫৬ বছর যাবত এবং কেহ ৩০ বছর যাবত এখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করে আসছে। এদের মধ্যে গিলাতলা ১নং কলোনী প্রায় ৪৮জনকে এবং ২নং কলোনীর প্রায় ৭০জনকে মোট ১১৮টি পরিবারকে হঠাৎ করে গত ২৫ এপ্রিল উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান করা হয়। ফুলতলা উপজেলা সহকরি কমিশনার(ভূমি) রুলী বিশ^াস স্বাক্ষরিত পৃথক পৃথক নোটিশে বলা হয়েছে ফুলতলা উপজেলার গিলাতলা মৌজার সরকারি ভূমি/ইমারত বা এর অংশ বিশেষের বেআইনী দখল ত্যাগ এবং তদুপরিস্থ স্থাপনা অপসারণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। ৭দিনের মধ্যে উচ্ছেদ করা না হলে পরে উচ্ছেদসহ নির্মিত স্থাপনা অপসারণক্রমে বর্ণিত ভূমি খাস দখল গ্রহন করা হবে। নোটিশ প্রাপ্তির পর থেকে কলোনীবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। তারা এই উচ্ছেদের নোটিশ প্রত্যাহার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের হস্থক্ষেপ কামনা করেন। অন্যথায় কলোনীর স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় ১ হাজার পরিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গসহ এলাকাবাসীদের নিয়ে আইনী প্রক্রিয়ার পাশাপাশি কঠোর আন্দোলন সংগ্রামের ঘোষনা দেন।