আশিক ইসলাম, রাবি প্রতিনিধিঃ
বেশ কয়েকবছর ধরে আলোচনার পর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন-ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রথম সারির পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় তা নাকচ করে দিয়ে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং পরিচালনায় স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি নেবে। ফলে ভর্তিচ্ছুদের নিতে হচ্ছে আলাদা আলাদা প্রস্তুতি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ হাজার আসনে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান উচ্চ মাধ্যমিক পার হওয়া শিক্ষার্থীরা। ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে সরে আসলেও বাকি ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে সম্মতি দিয়েছে। যার ফলে গুচ্ছ পদ্ধতি থাকা সত্ত্বেও ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভর্তিচ্ছুদের নিতে হচ্ছে আলাদা আলাদা প্রস্তুতি। ফলে গুচ্ছ পদ্ধতি থাকা সত্ত্বেও এর যথাযথ সুফল পাচ্ছে না দাবি ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদের।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে না আসায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ফলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়। আলাদা আলাদা আবেদন ফরম কিনতে হয়। এতে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি অভিভাবকদের আর্থিক ব্যয় হয়। একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়। আবার এক দিনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার তারিখ পড়লে শিক্ষার্থীকে যে কোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে হয়। এছাড়াও ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের ভর্তি পরীক্ষায় থাকার জায়গার সমস্যাতে পড়তে হয়। অনেকে মসজিদে রাত কাটিয়েছে এমন কথাও শুনা যায়।
ভর্তিচ্ছু সাব্বির হোসেন বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসা উচিত ছিলো। ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয় যদি গুচ্ছতে যায় তারপরও আমাদের বাকিদের জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। যদি গুচ্ছ পদ্ধতিতে হতো তাহলে এক প্রস্তুতিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য হয়ে যেতো। সামনে করোনা পরিস্থিতি কেমন হবে সেটাও আমাদের অজানা। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভবনা তো রয়েছেই।
আরেক ভর্তিচ্ছু তন্নিমা তাসনিম বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে খুব ভালো হতো। একটা পরীক্ষার মাধ্যমে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কভার হয়ে যেতো। আর মেয়েদের জন্য বিশেষ অসুবিধা হলো যাতায়ত ও থাকার ব্যবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া আমাদের জন্য খুব কষ্টকর হবে। কিছু গুচ্ছ আর কিছু আলাদা তাতে আমাদের ভোগান্তি কোনভাবেই কমছে না।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, করোনাভাইরাসের গণপরিবহন এক আতঙ্কের নাম। যদি সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আসতো তাহলে ভোগান্তি অনেক কমে যেতো। ভর্তিচ্ছুরা নিজ জেলা বা বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা দিতে পারতো। সবগুলো গুচ্ছতে না আসায় বাকিদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতেই হচ্ছে। গুচ্ছ পদ্ধতি তখনই সফল হবে যখন সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করবে।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর আরেক অভিভাবক বলেন, অনেক সময় দেখা যায় একদিনের ব্যবধানে দুইটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। চলে যাতায়ত সমস্যার কারণে একটা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য হয়েই বাদ দিতে হয়। গুচ্ছ পদ্ধতিতে হলে কোন প্রতিষ্ঠান মিস হওয়ার সুযোগ থাকতো না। তাছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্নভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। আলাদা আলাদা ফরম কিনতে হয়, যা অতিরিক্ত খরচ।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]