নিজস্ব প্রতিবেদক
অবশেষে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) সেই ধর্ষক বাবা শফিকুল ইসলামকে মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) গ্রেফতার করেছে। তবে তিনি নিজেকে একজন সাধক দাবি করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমার বড় অপরাধ হয়েছে। আমাকে গুলি করে মারেন। যতবড় পাপ করেছি, তার শাস্তি চাই আমি।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজির শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘১৬ বছর বয়সী তার মেয়েকে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন করতেন শফিকুল। মেয়েটি প্রথমে দাদা-দাদীকে বিষয়টি খুলে বললে, তারা তাকে চুপ থাকতে বলেন। এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর মেয়েটি তার মা ও নানীকে বিষয়টি জানালে তারা এসে তাকে উদ্ধার করে।
ডিআইজি বলেন, দুই বছর আগে শফিকুল ইসলাম সন্ন্যাস বেশ ধারণ করে। এরপর তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। মেয়েটিও মায়ের সঙ্গে নাটোরের দীঘাপতিয়া পূর্ব হাগুরিয়া গ্রামে নানার বাড়িতে চলে যায়। শফিকুলের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রামে। সে ঈদুল আযহার ৬ দিন আগে মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়িতে আনার পর সে মেয়েটির ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে মেয়েকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আটকে রাখে। এ সময়কালে বাড়িতে লোকজন এলে মেয়েটির সঙ্গে কাউকে দেখা বা কথা বলতে দেয়নি।
শেখ নাজমুল আলম বলেন, নির্যাতিত মেয়েটি কৌশলে তার নানা-নানির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরবর্তী সময়ে মা ও নানি মেয়েটিকে উদ্ধার করেন। পরে মেয়ে বাদী হয়ে বাবার বিরুদ্ধে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শরিফুল মেয়েকে নিয়মিত ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, মেয়েটির ওপরে শারীরিক নির্যাতনের কথা তার দাদা-দাদিকে জানালে, বিষয়টি সমাজের কাউকে বলতে নিষেধ করেন তারা।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ নাজমুল আলম বলেন, আমরা শরিফুলের সঙ্গে কথা বলেছি। সে মানসিকভাবে অসুস্থ কোনো ব্যক্তি নন। সুস্থ মস্তিষ্কে সে তার মেয়েকে এভাবে নির্যাতন করেছে।
মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ থেকে কথিত এই সাধক শরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে সিআইডি। শফিকুল ইসলাম জানান, দুই বছর আগে তিনি বগুড়ার মহাস্থানগড়ের পীর মাইজভান্ডারি চিশতিয়া নিজামীর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। এরপর তার হয়ে বিভিন্ন জেলায় মুরিদ বানানোর কাজ করে বেড়ান। স্ত্রী আরেকজনকে বিয়ে করেছে। এ ঘটনার পর তিনি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল বসন্তপুরে অবস্থান করেন। পরে সিআইডি পুলিশ সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
সিআইডির অপারেশন কর্মকর্তা পরিদর্শক আরিফ হোসাইন বলেন, ২৫ ঘণ্টার অপারেশনের পর শফিকুল ইসলামকে (সাধক বাবা) গ্রেফতার করা হয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সে ওই এলাকায় পালিয়ে আসে। মুখে দাঁড়ি ছিল তা কেটে ফেলে। এই এলাকায় সে এর আগেও এসেছে। আস্তানা ছিল এক মহিলার বাসায়। পুলিশও মাথায় গামছা পেঁচিয়ে সাধক সেজেই তাকে গ্রেফতার করে।
স্থান শনাক্তের বিষয়ে সিআইডি একজন কর্মকর্তা বলেন, সে তার মোবাইল সিম ফেলে দিয়ে তার মায়ের সিম মোবাইলে ভরে দুর্গম চরে যায়। এরপর সেখানে সেটিও ফেলে দিয়ে আরেকটি নতুন সিম কার্ড ক্রয় করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাকে শনাক্ত করা হয়।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]