টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর দশ টাকা কেজি দামের ফেয়ার প্রাইজের চাল কিনতে গিয়ে গলাধাক্কা খাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন এক বিত্তহীন নারী। চাল না দিয়ে তার ফেয়ার প্রাইজের কার্ডও রেখে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এক ভাই মীর আল মামুন ডিলার অপরভাই মীর মোখলেস চাল ব্যবসায়ী, তাদের নিকট চাল বিক্রি না করলে নানা হয়রানী করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ কার্ডধারী ও স্থানীয় ইউপি সদস্যদের।
জানা যায়, মির্জাপুর ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডে ফেয়ার প্রাইজের ডিলার মীর আল মামুনের চাল বিক্রির মোকাম হলো দৌলতপুর মিয়া মার্কেটে। কিন্তু তিনি নির্ধারিত মোকামে চাল না তুলে দুই কিলো দূরে নিজ বাড়িতে তোলেন। ফলে তিন চার কিলো পথ মাড়িয়ে ক্রেতাদের সেখান চালের জন্য যেতে হয়।
উত্তর মান্দিয়া গ্রামের সাদেক হোসেনের স্ত্রী রীপা বেগম জানান, গত বুধবার সকাল দশটায় তিনি চালের জন্য দৌলতপুর গ্রামে ডিলার মীর আল মামুনের বাড়িতে গেলে তাকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। তার সাথে আরো জনাপঞ্চাশেক গ্রাহক সেখান বসা ছিলেন। ঘন্টা তিনেক পর অসুস্থ রীপা বেগম বাড়িতে বাচ্চা রেখে আসায় তার চাল দেয়ার অনুরোধ জানান। তখন ডিলার মীর মামুনের বড় ভাই মোখলেস তেড়ে আসেন। গালিগালাজের পর এক পর্যায়ে রীপাকে গলা ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। রীপা কান্নাকাটি শুরু করলে মোখলেস তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
চাল নিতে আসা অপর দিনমজুর এবং মান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা চানু মিয়া জানান, সবার সামনে গালিগালাজ এবং অসুস্থ রীপাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার প্রতিবাদ করায় মোখলেস তাকেও হয়রানি করেছে।
দিনমজুর স্বপা বেগম জানান, ওই দিন চালের জন্য গেলে তাদেরকে টানা চার ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়। ডিলার মামুনের বড় ভাই মোখলেছ দীর্ঘদিন ধরে ফেয়ার প্রাইজের চাল কেনার ব্যবসা করেন। কেউ তাদের বাড়িতে চাল কিনতে গেলেই তার টিপসহি রেখে চালের বিনিময়ে টাকা দেয়া হয়। কেউ চাল বিক্রি করতে না চাইলে তাকে হয়রানি করা হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়। ওই দিন অসুস্থ রীপা বেগম মানবিক কারণে আগেভাগে চাল দেয়ার অনুরাধ জানালে তাকে মারপিট করা হয়।
আরেক দিন মজুর একাব্বর জানান, সবার সামনে এভাবে রীপাকে নির্যাতন করায় এবং চাল বিক্রিতে রাজি না হওয়া অন্যান্যদের গালিগালাজ ও মারপিটের হুমকি দেয়ায় ভয়ে চাল না নিয়ে অনেকেই ফিরে আসে।
মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য সানোয়ার হোসেন জানান, এদের এক ভাই চালের ডিলার আরেক ভাই চাল ব্যবসায়ী। এজন্য মোকামে চাল না তুলে নিজ বাড়িতে চাল তোলেন।
৯নং ওয়ার্ডের সদস্য ফজলুল হক জানান, ডিলারের বাড়িতে গরীব মানুষ চাল কিনতে গেলে তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে চাল বিক্রি করতে হয়। দুই ভাই মিলে এ সিন্ডিকেট। কাউকে চাল দেয়া হলেও ৩০ কেজির স্থলে ২৬/২৭ কেজি দেয়া হয়। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে বহুবার অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিকার মিলেনি। এখন গরীব মানুষ ওদের বাড়িতে চালের দাবিতে গেলে মারপিট করা হয়।
৭ নং ওয়ার্ডর সদস্য হায়দার আলী জানান, দীর্ঘ দিন ধরে ডিলার মামুন ও তার ভাই মোখলেস গরীব মানুষকে চাল দিতে হয়রানি করছেন। গালিগালাজের পর এখন মারপিট আরম্ভ করেছেন। প্রতিকার চেয়ে আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা নিবার্হী অফিসার এবং খাদ্য কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হালিমুজ্জামান তালুকদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
ডিলার মীর মামুন জানান, কাউকে গলা ধাক্কা দেয়া হয়েছে কিনা তিনি জানেন না। সব নিয়ম মেনেই চাল বিতরণ করা হচ্ছে।
ডিলার মীর মামুনের ভাই মীর মোখলেস চাল ব্যবসার কথা অস্বীকার করে, প্রমান দিতে বলেন। তবে অনেক মহিলা মারার রেকর্ড আছে, এমন বাক্য বীরদর্পে স্বীকার করেন মীর মোখলেস।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা হোসাইন আবদুল্লাহ মোহাম্মদ জানান, ওই ডিলারকে আর বাড়িত নয় মোকামে চাল বিক্রি করতে বলা হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া ইসলাম সীমা জানান, লিখিত অভিযোগ তিনি এখনো পাননি। অভিযোগ পেলে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।