মোঃ রুবেল আহমেদ (বিশেষ প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল)
ইংরেজি নববর্ষের দিন মায়ের হাত ধরে ৬ বছরের শিশু রাণু সূতি ভিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল বই উৎসবে হাজির হয়ে নতুন পাঠ্য বইয়ের ঘ্রাণ নিতে। কিন্তু বাসা থেকে বেরিয়ে শহরের তামাকপট্রি এলাকায় পৌঁছা মাত্র বালুভর্তি ট্রাকের কড়কড়ে উড়ন্ত বালু রাণুর দুচোখে গিয়ে লাগলো। হাউমাউ করে কান্না আর গড়াগড়ি দিতে থাকলো পিচডালা সড়কে। আশপাশের মানুষ জল নিয়ে এসে চোখে ছিটাতে লাগলো। রাণুর আর বই উৎসবে যাওয়া হয়নি। কামদেববাড়ী গ্রামের গৃহবধূ বানেছা বেগম নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রাবিকে নিয়ে আজ রবিবার সকাল নয়টায় হাসপাতালে যাচ্ছিলো। কোনবাড়ী মোড়ে আসামাত্র বালুভর্তি একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা দিলে মাবেটি দুজনেই আহত হয়।
গুরুতর আহত বানেছাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে ঢাকাস্থ পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তার একটি পা কেটে ফেলার সুপারিশ করে। এমন ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে গোপালপুর পৌরশহরে।
গোপালপুর মেহেরুন্নেসা গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ মাফরুহা পারভীন অভিযোগ করেন, দেড়শতাব্দী প্রাচীন এ শহরের প্রধান সড়কসহ সব সড়ক একদম সরু। একটি ট্রাক ঢুকলে আরেকটি ট্রাক সাইড় দিতে পারেনা। তখন পুরো শহর জুড়ে শুরু হয় যানজট। বিরক্তিকর যানজট ছাড়াও প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। চাইল্ডহেভেন স্কুলের শিক্ষক হাবিবুর রহমান অভিযোগ করেন, যানজট কখনো না থাকলে বালুবাহী ট্রাক রকেট গতিতে ছুটে চলে। এসব ট্রাক ত্রিপল দিয়ে ঢেকে না দেয়ায় বাতাসে বালু উড়ে এসে পথচারিদের চোখেমুখে লাগে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুরা প্রতিদিনই উড়ন্ত বালুতে আক্রান্ত হচ্ছে।
মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, কয়েকদিন আগে মোটর সাইকেল চালিয়ে বাসায় ফেরার পথে বালু ভর্তি ট্রাকের বালু চোখে যাওয়ায় তিনি দুর্ঘটনায় আহত হন। প্রতিদিন শত শত ট্রাক ভ‚ঞাপুরের যমুনা ঘাট থেকে বালি নিয়ে গোপালপুর পৌরশহর পাড়ি দিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহে গিয়ে থাকে। পৌরশহরের বাইরে এসব বালু ভর্তি ট্রাকের বেপরোয়া গতিতে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে।
আলমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবংউপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মোমেন দুর্ভোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান, বালুবাহী ট্রাকের ওজন ৪০ থেকে ৫০ টন। আর সড়কের ওজন ধারণ ক্ষমতা ২০ টন। ফলে প্রতিদিন পিপিলিকার সারির মতো ছুটে চলা বালুভর্তি ট্রাক পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ করছে। এলজিইডি ও সওজের সড়ক ও ব্রীজ ধ্বংস হচ্ছে। প্রাণহানি ঘটছে। কোন প্রতিকার মিলছেনা। উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, এসব বালুবাহী ট্রাক নতুন সড়ক ও সেতু ধ্বংস করছে। অনেক ব্রিজ ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বালুবাহী ট্রাক বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
ওসি মোশারফ হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট শত কোটি টাকার এ বালু ব্যবসার সাথে জড়িত। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পৌরশহর পাড়ি দিয়ে বালু পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের তদবীর ও চাপ থাকায় এরা স্থানীয় প্রশাসনকে পাত্তা দিতে চায়না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ মল্লিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বেশ কয়েকবার বালু ট্রাক আটক ও জেল জরিমানা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]