জামালপুরের দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কারখানার একটি বন্ধ এবং অপরটি নামে মাত্র চালু থাকায় টাঙ্গাইলের ৭ লাখ গ্রাহক টানা আট দিন ধরে বিদ্যুৎ এর সংকটে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ২৪ ঘণ্টায় চার-পাঁচ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। জানা যায়, টাঙ্গাইলের গোপালপুর, মধুপুর, ধনবাড়ী, ভূঞাপুর ও ঘাটাইল উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৭ লাখ গ্রাহক রয়েছে।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। পিকআওয়ারে গ্রাহক প্রান্তে প্রায় ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যায় ৮-১০ মেগাওয়াট। দিনের বেলায় লোড ম্যানেজমেন্ট করে বিভিন্ন ফিডারে দুই-এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর ধনবাড়ী, গোপালপুর ও মধুপুর পৌরসভা বাদে সব গ্রামে বিদ্যু্ৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। সারা রাত ৩ হাজার গ্রাম অন্ধকারে ডুবে থাকে। টানা আট দিন ধরে চলছে এমন অসহনীয় পরিস্থিতি।
গ্রাম হবে শহর, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, তাছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, এই দুইয়ের সঠিক বাস্তবায়ন ঘটাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিকল্প নেই , গোপালপুরের বিভিন্ন গ্রামে ইতিমধ্যেই লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া,গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। টিভি, ফ্রিজ এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যায় । লকডাউনে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখন টিকে আছে একমাত্র অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা ।
তাই গ্রামের মানুষের বর্তমান প্রধান মৌলিক চাহিদা বিদ্যুৎ, গ্রামকে আলাদা করে দেখে এভাবে দীর্ঘ সময় সময় লোডশেডিংয়ে রাখা কোন ভাবেই সমীচিন নয় বলে মনে করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
এছাড়া শুক্রবার সারাদেশ থেকে গোপালপুর উপজেলার দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে নির্মাণাধীন ২০১ গম্বুজ মসজিদে আনুমানিক ৩০/৪০হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে, এখানে অনুষ্ঠিত হয় দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ।
জুমার নামাজের সময় অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায় দুরদুরান্ত আসা মুসল্লিদের ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জামালপুরে দুইটি বেসরকারি পাওয়ার প্ল্যান্ট ২১৫ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। জামালপুর পিডিবি লোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় বিতরণ করে।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কর্মীরা অভিযোগ করেন, জামালপুর ও শেরপুর জেলার চাহিদা পূরণের পর পিডিবি জামালপুর গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ৩৩ কেভি লাইনের মাধ্যমে টাঙ্গাইল অংশে যৎসামান্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জ্বালানি, গ্যাস সংকট এবং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি বেসরকারি পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। আর অন্যটি আংশিক উৎপাদনে আছে। ঘাটতি পূরণের জন্য ময়মনসিংহ আরপিসিএল থেকে বিদ্যুৎ আনার কথা থাকলেও সেখানেও গ্যাস সংকটে উৎপাদন কমে যাওয়ায় সংকটের দায়ভার পুরোটাই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে টাঙ্গাইল প্রান্তের গ্রাহকের ওপর।
গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, পল্লী বিদ্যুতের ৭ লাখ গ্রাহক টাঙ্গাইল জেলার। বিদ্যুুুুৎ সরবরাহ করে জামালপুর জেলা। আর গ্রাহকদের সেবা দেন ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এ যেন এক ত্রিশঙ্কু অবস্থা।
ময়মনসিংহে অভিযোগ দিলে সমিতির কর্মকর্তারা আঙুল তোলেন জামালপুর গ্রিডের বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষের দিকে। আবার সেখানে ফোন দিলে তারা ফিরতি আঙুল তোলেন ময়মনসিংহ পিবিএসের দিকে।
আলমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মোমেন জানান, টাঙ্গাইলের এসব উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি এসব উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়ন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। তিনি এসব উপজেলা নিয়ে একটি পৃথক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গঠনের দাবি জানান। পল্লী বিদ্যুৎ মধুপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম বিল্পব কুমার সরকার জানান, তীব্র বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় গ্রাহকদের ধৈর্য ধারণ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। গোপালপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম মুজিবুল হক দুর্ভোগের সত্যতা স্বীকার করেন।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুতের জিএম আখতার হোসেন জানান, দুই-চার দিনের মধ্যে সংকট কেটে যাবে। তাছাড়া টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাকুটিয়ায় পিডিবির একটি গ্রিড সাবস্টেশন হচ্ছে। এটির নির্মাণ শেষ হলেই টাঙ্গাইলের গ্রাহকরা আর জামালপুরের ওপর নির্ভরশীল থাকবেন না। আর টাঙ্গাইলের একটি পৃথক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি হলে তো ভালোই হবে।