মো. রুবেল আহমেদ, (বিশেষ প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল)
একাধিক সরকারি নির্দেশনা ও নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হলেও টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইট তৈরির কাজ শুরুই করতে পারেনি। ২০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জিএম ফারুক।
বাজেট স্বল্পতায় সময়মতো ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়নি বলে জানিয়েছেন একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অভিভাকরা বলছেন এতে প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরতদের স্বদিচ্ছার অভাব রয়েছে।
গোপালপুর সরকারি কলেজের সাবেক জিএস মারুফ হাসান জামী বলেন, স্বদিচ্ছা নিয়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুত ওয়েবসাইট তৈরি করা দরকার, এতে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার্থীরা তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞানলাভ করবে, এতে করে প্রতিষ্ঠানই বেশি লাভবান হবে।
অভিভাবক আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরতদের স্বদিচ্ছার অভাবেই সরকারি নির্দেশনা এভাবে ঝুলে রয়েছে। এখন অধিকাংশ অভিভাবকদের স্মার্টফোন রয়েছে, বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থাকলে অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের সকল তথ্যাদি ঘরে বসেই পেতেন, ভর্তি সহ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফি অনলাইনে পরিশোধ করা ও বিভিন্ন সুযোগ তৈরি হবে। সন্তানের বিদ্যালয়ের হাজির থাকার তথ্য, বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল সহজেই আমরা অভিভাবকরা জানতে পারতাম।
হেমনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামিদা বেগম জানান, আমার বিদ্যালয়ের ফান্ড সংকটের কারণে সময়মতো ওয়েবসাইট তৈরির কাজ শুরু করতে পারিনি। এখন কাজ চলতেছে।
জয়নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমার বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ওয়েব ইউআরএল বা লিংক কি জানতে চাইলে বলেন আমি এটা জানি না।
খামারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ সাদী বলেন আমার বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিবেদককে লিংক পাঠানো হবে বললেও তিনি পাঠাননি ।
মাহমুদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, আমার বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট তৈরির করতে আলোচনা চলমান রয়েছে।
রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে আমাদের নিকট হস্তান্তর করবে।
গোপালপুর মেহেরুন্নেছা মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খ. আব্দুল মালেক বলেন, ডোমেইনের জন্য আবেদন করেছি, ডোমেইন পেতে দেরি হওয়ায় দেরি হয়েছে, তবে ওয়েবসাইটের কাজ শীঘ্রই শেষ হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জিএম ফারুক বলেন, সকল প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে ইতিমধ্যেই মিটিং করেছি। ২০শতাংশ বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে,অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষা অফিস থেকে কঠোর চাপ না থাকার কারণেও শতভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বাজেট স্বল্পতাও এর একটি কারণ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জুলফিকার হায়দার বলেন, বাজেট স্বল্পতা কথাটা ঠিক না, আগ্রহটাই বড় কথা। আমি গোপালপুরে তিনদিন হয়েছে যোগদান করেছি, ডিজিটালের সাথে তাল না মেলালে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাওয়া যাবে না। আমি তো নতুন যোগদান করলাম, সবাইকে তাগিদ দিয়ে শতভাগ বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট নিশ্চিত করবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটাইলেশনের লক্ষ্যে ২০১৫সালে প্রতিটি সরকারি, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে edu.bd ডোমেইনে ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরি ও হালনাগাদ করতে নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই নির্দেশ দিয়ে গত আগস্ট মাসে পরিপত্র জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), সেখানে বলা হয় ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তৈরিকৃত বা হালনাগাদকরণ ওয়েবসাইটের ওয়েব ঠিকানা মাউশি অধিদপ্তরের ইএমআইএসের আইএমএস মডিউলে জমা দিতে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পাসপোর্ট আবেদন,ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন, অনলাইনে ব্যাংকিং, ভাতা আবেদন, ভূমি সেবা সহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি সেবার ডিজিটাইলেশন শুরু হয়েছে। যার সুফল ইতিমধ্যেই নাগরিকরা ভোগ করতে শুরু করেছে। ঘরে বসেই পাচ্ছেন ভূমি, ব্যাংকিং সহ বিভিন্ন সেবা। এতে মানুষের সময় সাশ্রয় হচ্ছে তেমনি কমে এসেছে ভোগান্তি।
অনুসন্ধানকালে উপজেলার দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গোপালপুর সরকারি কলেজ ও সুতি ভিএম পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট লাইভ পাওয়া গেছে।