জাতীয় পতাকা সব নাগরিকের জন্য আবেগের বিষয়। বিশেষ করে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস, জাতীয় শোক দিবস অথবা অন্য যে কোন দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও এর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের বিধিবদ্ধ নিয়ম রয়েছে। জাতীয় পতাকা ইনডোর এবং আউটডোর এ দুভাবেই উত্তোলনের নিয়ম রয়েছে। এমনকি পতাকা দন্ড কেমন হবে তারও বিধিবদ্ধ নিয়ম রয়েছে। ভূমি থেকে দন্ডের
উপরের প্রথম অংশকে বলা হয় নিষিদ্ধ অঞ্চল। এ অংশে জাতীয় পতাকা নামানো নিষেধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ। নিষিদ্ধ অঞ্চলের উপরের অংশের নাম অপেক্ষা। এ অংশে পতাকা উত্তোলনের রশির দুই প্রান্তের সাথে পতাকার দুই প্রান্তের ফিতা পাল গেরো দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়। এ অংশেই রশির বর্ধিত অংশ দিয়ে জাতীয় পতাকা দন্ডের সাথে বড়শী গেরো দিয়ে রাখা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলনের অপেক্ষায় পতাকা এখানে প্রস্তুত রাখা হয়। অপেক্ষা অংশের উপরের অংশের নাম জাতীয় সঙ্গীতাঞ্চল। এ অংশে পতাকা টেনে তোলার পর জাতীয় সঙ্গীত শুরু করতে হয়। জাতীয় সঙ্গীতাঞ্চলের উপরে দন্ডের অংশের নাম কৃতজ্ঞতা। এখানে পতাকা পৌঁছানোর সাথে সাথে বুক টান করে মুখোমন্ডল ভূমির সাথে ১৩৮ কোণে পতাকার দিকে তাকানো এবং দেশ মাতৃকার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হয়। দন্ডের কৃতজ্ঞতা অংশের পর নাম শোক অঞ্চল। জাতীয় শোক দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ মোতাবেক পতাকা সম্পূর্ন উত্তোলন করে দন্ডের সাথে এ অংশ নামিয়ে বেঁধে রাখা হয়। দন্ডের শোক অংশের উপরের নাম সম্মান। এ অংশে পতাকা উত্তোলনের পর পতাকাকে সম্মান প্রদর্শন করতে হয়। দন্ডের সম্মান অংশের উপরের নাম শোভা। শোভা ও সম্মান অংশের সংযোগস্থলে একটি পুলি থাকে। পুলির মধ্য দিয়ে রশি টেনে পতাকা উত্তোলন ও নামানো হয়। পতাকা উত্তোলনের পর রশি দন্ডের সাথে বড়শি গেরো দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। আজ ছিল জাতীয় শোক দিবস। এ দিবস পালনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করণে সরকারি বিধিবদ্ধ নিয়ম পালন করেনি ময়মনসিংহ পবিস- ১ এর আওতাধীন গোপালপুর জোনাল অফিস। ওই অফিস গাছ থেকে আম পাড়ার একটি কোটার উপর নিয়মবহির্ভূতভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। এ বাঁশ দন্ডের শোভা অংশে আম পাড়ার কোটার শীর্ষে আটকি আটকে রয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীরা এ লম্বা বাঁশ দন্ড দিয়ে গাছের আম পাড়ার কাজ করে। কখনোসখনো এ বাঁশ দন্ড দিয়ে বিদ্যুৎ লাইনের গাছপালা পরিস্কারের সময় কোটা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পবিস কর্মীরা এ কোটার আগায় জাতীয় পতাকা দায়সারাভাবে আটকে দিয়ে শোক দিবসের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরা জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা এবং দিবসটির প্রতি যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে অবহেলা করেছেন। জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর শাহাদৎ বার্ষিকী উদযাদন যথাযথভাবে পালন করার জন্য গত ৩ আগষ্ট উপজেলা পরিষদ হল রুমে এক প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয় এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: পারভেজ মল্লিক। সভায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। এতে আহবায়ক ছিলেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাসতুরা আমীনা। সদস্য সচিব হলেন অফিসার ইনচার্জ মোশারফ হোসেন। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন যুবলীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম তালুকদার, যুবলীগ সম্পাদক আসাদুজ্জামান সোহেল, ছাত্রলীগ আহবায়ক শফিকুল ইসলাম শফিক, ছাত্রলীগের যুগ্মআহবায়ক আলমগীর কবীর রাণা ও ইকবাল হোসাইন । কমিটির দায়িত্ব ছিল জাতীয় পতাকা সঠিকভাবে উত্তোলন করা হয়েছে কিনা তা মাঠে সরেজমিন তদারকী করে দেখা। কিন্তু কমিটির সদস্যরা কেউ ই মাঠে খোঁজ খবর নেয়নি বলে খবর পাওয়া গেছে। পৌরবাসীরা জানান, প্রশাসন ছাড়াও সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনের চার নেতা এ কমিটির সদস্য থাকলেও কোন নেতাই পতাকা উত্তোলনের খোঁজখবর নেননি। এ ব্যাপারে যুবলীগ সম্পাদক আসাদুজ্জামান জানান, শোক দিবসে অনুষ্ঠান নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম। তাই কমিটির সদস্য হলেও কোন খোঁজখবর নিতে পারেননি। পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মাজহারুল ইসলাম জানান, অফিসে পতাকা উত্তোলন করেছেন এনফোর্সমেন্ট কোঅর্ডিনেটর শহীদুল ইসলাম। হয়তো তিনি ভুল করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ পারভেজ মল্লিক জানান, বিষয়টি তিনি খোঁখবর নিয়ে দেখবেন।