গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি:নিজের ও ছেলেদের অপকর্ম ঢাকতে গোয়াইনঘাটের ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে আদালতে। পুরো অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেটের গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন গোয়াইনঘাট উপজেলার ২ নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মামলার স্বাক্ষী মদরিছ আলী।
তিনি বলেন, স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারী সিলেটের সিনিয়র স্পেশাল দায়রাজজ আদালতে গোয়াইনঘাট থানাধীন জাফলং নয়াবস্তি গ্রামের মামলাবাজ ইনছান আলী গোয়াইনঘাট থানার ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদিও অভিযোগটি এখনো আমলে নেয়নি সিলেটের সিনিয়র স্পেশাল দায়রাজজ আদালত। অভিযোগপত্রে ইনছান আলী অনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষী হিসেবে আমাদের (মদরিছ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, ফয়জুল ইসলাম) স্বাক্ষি হিসেবে নাম ব্যবহার করা হলেও আমরা অবগত নই। জাফলংয়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী আলিম উদ্দিন ও তার পিতা ইনছান আলীর উপর গোয়াইনঘাটের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সফিক মিয়া হত্যা মামলা, নারী ও শিশু নির্যাতন সহ সর্বমোট ৯টি মামলা বিদ্যমান রহিয়াছে। তার মধ্যে দুটি মামলায় সে পলাতক। এছাড়া ইনছান আলী এলাকার চিহ্নিত মামলাবাজ, দখলবাজ ও সন্ত্রাসী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। আলিম উদ্দিন ১২ বছর বয়স থেকেই তার বাবা ইনছান আলীর সাথে বারকী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে এখন সে কোটিপতি। তার এখন অঢেল সম্পত্তি। ভাইদের নামেও গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়। আর এসব হয়েছে জাফলংয়ের কোয়ারীর কারণে। জাফলং নয়াবস্তির যুবক সালামকে প্রকাশ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়ার পরেই ইনছান আলীর পরিবার।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আলিম উদ্দিনের পাথর লুটপাটের ঘটনায় স্থানীয় মামার বাজারে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সালেক নামের এক ট্রাক চালককে। আলিম উদ্দিন ছিলো বারকি শ্রমিক। নয়াবস্তির বাসিন্দা হওয়ার গ্রামের ওপারে জাফলং চা বাগান এলাকার লুটপাট করা পাথর সে নৌকা দিয়ে বহন করতো। এরপর থেকে শুরু হয় তার রাজত্ব। কিছু দিনের মধ্যে আলিম উদ্দিনই হয়ে ওঠে জাফলংয়ের মূল নিয়ন্ত্রক। এখন আলিম উদ্দিন ও তার ভাইরা প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় করে নিজেদের গ্রামে তিনটি আলাদা বাড়ি তৈরি করেছেন। এর মধ্যে আলিম উদ্দিনের বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে। অপর দু’টি বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। নিজের নামে জাফলংয়ে অনেক জমি কিনেছেন আলিম উদ্দিন। তিনি গত বছর স্থানীয় লক্ষীপুর গোরস্থানের কাছে তোফাজ্জুলের কাছে থেকে ২৫ শতক জমি ক্রয় করেছেন। দলিলে এই জমির মূল্য ৭৫ লাখ টাকা দেখানো হলে মালিককে দেয়া হয়েছে দেড় কোটি টাকা। পূর্বের মালিকপক্ষ সূত্র জানিয়েছে- আলিমউদ্দিন নিজের নামেই ওই ভূমি ক্রয় করেন এবং টাকা পরিশোধ করেন। পরে তিনি জাফলং বল্লাঘাটের পুঞ্জিতে উডি খাসিয়ার কাছ থেকে কোটি টাকা দিয়ে ৬১ শতক জমি ক্রয় করেছেন। এখনো দলিল রেজিস্ট্রি না হলেও স্ট্যাম্পে দস্তখত করে রেখেছেন। ক্রাশার মিল স্থাপন করতে এই জমি ক্রয় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তানিশা স্টোর ক্রাশার মিল রয়েছে তার। প্রায় কোটি টাকার পাথর তার স্টোন ক্রাশার মিলে স্টক করা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মদরিছ আলী আরও বলেন, গোয়াইনঘাট থানা ওসি আব্দুল আহাদ যোগদানের পর জাফলং নয়াবস্তি এলাকার ইনছান আলী তার ছেলে আলিম উদ্দিনসহ তাদের পোষা বাহিনীদের নিয়ে জাফলং কোয়ারী এলাকা থেকে অবৈধভাবে বোমা মেশিন, বিলাই মেশিন ও সেইভ মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের জন্য ওসির সাথে রফা দফা করতে আসেন। কিন্তু ওসি আব্দুল আহাদের বিরোধীতা ও তাদের সাথে আতাঁত করতে অপারগতা প্রকাশ করিলে তারা তার বিরুদ্ধে ইনছান আলী ও তার পোষা বাহিনী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে ব্যর্থ হন। এছাড়া সম্প্রতি জাফলং এলাকার জনৈক কলেজ পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও ছবি ভাইরালের বিষয়ে মামলা রুজু করা হলে ওসি আহাদের বিরুদ্ধে চওড়া হয়ে উঠেন আলীম উদ্দিনের পরিবার। পাশাপাশি পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক সফিক মিয়ার সাথে প্রকাশ্যে মারামারি ও এঘটনায় সফিক মিয়া হত্যায় আলিম উদ্দিন পরিবারের উপর মামলা গ্রহণ করা হলে আরো চওড়া হয়ে উঠেন ইনছান আলী। তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ প্রকাশ ও শেষপর্যন্ত উল্টো আদালতে ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মলেন উপস্থিত ছিলেন মামলার ৭ নং সাক্ষী মো. ফয়জুল ইসলাম ও ২৪ নং সাক্ষী মুক্তিযুদ্ধা আব্দুল জলিল। মোবাইল ফোনে একাত্মতা পোষণ করেন ৫ নং সাক্ষী রিয়াজ উদ্দিন, ১৪ নং সাক্ষী বাহার উদ্দিন ও ২০নং সাক্ষী জাকির হোসেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রমুখ।