আব্দুল গনি বারদারইয়ের হাতেই মুলত এখন আফগানিস্তান। কিন্তু কে এই বারদারই? আজ থেকে টিক এগারো বছরে আগে এই আব্দুল গনি বারদারইকে হাতে হাতকড়া পরিয়ে শিকল দিয়ে টেনে নেওয়া হচ্ছিল। আজ সেই বারদারইকে হিসাব করা হচ্ছে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে।
২০১০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির একটি ছবিতে দেখা যায় আব্দুল গনি বারদারইকে শিকল দিয়ে টেনে নেয়া হচ্ছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের করাচিতে এক লোককে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হাতে শিকল, কোমরে ডান্ডাবেড়ি। রয়টার্সের তোলা ওই ছবিটি বিশ্বব্যাপী এখন ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।
রয়টার্সের ক্রেডিট দিয়ে প্রকাশিত ওই ছবির ক্যাপশনে ভয়েস অব আমেরিকা জানায়, পাকিস্তানি পুলিশ তাকে বাজাউর অঞ্চলের কমান্ডার আবদুল্লাহ হিসেবে তাকে গ্রেফতার করে। পরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা নিশ্চিত হন তিনি আসলে আফগান তালেবানের শীর্ষ কমান্ডার মোল্লা আবদুল গনি বারদার।
এদিকে ফ্রান্স টুয়েন্টিফোরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত বাহিনীকে হটানোর সময় আমেরিকার সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে ছিলেন বারাদার। এরপর অবশ্য তালেবানের হয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধেই লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে পড়েন তিনি। পথ পরিক্রমায়, শীর্ষ তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের ডান হাত হয়ে উঠেন। মোল্লা ওমরের বোনকে বিয়ে করে গড়েন আত্মীয়তার সম্পর্ক। ২০১০ সালে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র যৌথ অভিযানে পাকিস্তানের করাচি শহরে ধরা পড়েন বারাদার। তবে, আমেরিকার অনুরোধেই নাকি ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।
মূলত, আফগানিস্তান ছাড়ার নীতি নেওয়ায় সমঝোতার অংশ হিসেবে বারাদারকে মুক্তি দেয় তারা। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর বারাদারের ছাড়া পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল তালেবান।
জীবনের দীর্ঘ সময়ে সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন বারাদার। শুধুমাত্র তালেবান শাসনামলে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কিছুটা স্থিতি পেয়েছিলেন তিনি। এই সময়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন বারাদারা। তিনি হেরাত আর নিমরোজের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন বলে জানা গেছে। সে সময় পাকিস্তান, সৌদি আরব আর সংযুক্ত আরব আমিরাতই কেবল তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু করেন বারাদার। তখন থেকেই তার কূটনৈতিক দক্ষতা আলোচিত হতে থাকে।
ফ্রান্স টুয়েন্টিফোরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র সাথে বৈঠক করেন বারাদার। জুলাই মাসে যান চীন সফরে। সেখানে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সাথেও ফলপ্রসূ আলোচনা হয় তার।
আফগানিস্তানের ওরুজগান প্রদেশের দেহ রাহওয়াদ জেলার উইটমাক গ্রামে ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করা ৫৩ বছর বয়সী এই নেতাকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আমেরিকার সাথে তার সম্পর্ক আগামী দিনে কেমন থাকে সেটিই এখন দেখার বিষয়।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]