চরফ্যাশন (ভোলা)প্রতিনিধি: চরফ্যাসনে বহুল আলোচিত শাশ্বতী রায় চৈতির ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে ময়নাতদন্তে ব্যাপক ত্রুটির অভিযোগ উঠার পর চরফ্যাসন থানার উপ-পরিদর্শক ও চৈতি রায় আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেছেন-ময়নাতদন্ত রিপোর্টে কোন ত্রুটি থাকলে তার দায় ময়নাতদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের নিতে হবে। পুলিশের দিকে পাল্টা অভিযোগ তুলে ভোলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা.মোহাম্মদ আবদুল হাকিম বলেছেন, ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিষক্রিয়া কিংবা চেতনানাশক প্রয়োগের কোন ইঙ্গিত পুলিশ রিপোর্টে ছিল না। পুলিশ রিপোর্টের ত্রুটির কারণেই ময়নাতদন্তের সংশ্লিষ্টরা ভিসেরা রিপোর্ট করানোর সুযোগ ছিল না। পুলিশ রিপোর্টে পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি পরিবার কিংবা পাড়া প্রতিবেশীর অভিযোগগুলো আমলে নিতে হয় এবং সে অনুযায়ী ইঙ্গিতসহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। কিন্ত চরফ্যাসন থানা থেকে পাঠানো পুলিশ রিপোর্টে সেরকম কোন ইঙ্গিত ছিল না। বরং থানা থেকে পাঠানো ওই রিপোর্টে আত্মহত্যার ধরন নির্দিষ্ট করা ছিল। পাশাপাশি চৈতির পরিবার স্পষ্ট হত্যাকান্ডকে ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ তুলে তদন্তের ভার পিআইবি কিংবা সিআইডিতে স্থানান্তরের দাবী তুলেছেন। গত ৫ মার্চ রাতে চরফ্যাসন পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের শ্বশুড়ালয়ে শয়নকক্ষে সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত চৈতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। চৈতির বাবা চরফ্যাশন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র রায় অভিযোগ করেন, ২০২১ সনের ১ ফেব্রুয়ারি চরফ্যাসন পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের সমীর চন্দ্র মজুমদারের ছেলে মানস মজুমদারের সাথে বরিশাল বিএম কলেজের গণিত বিভাগের ছাত্রী চৈতি রায়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক নির্যাতনের মধ্যে ছিল চৈতি। যার ধারাবাহিকতায় চেতনা নাশক খাইয়ে অজ্ঞান করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হয়। শুরু থেকে চৈতির পরিবারের এই অভিযোগ পাত্তা দিচ্ছে না পুলিশ। চৈতির বাবা সুভাষ রায় আরো অভিযোগ করেন, আসামীপক্ষকে সাথে নিয়ে পুলিশ সুরতহাল করেছে। সুরাতহাল করার সময় চৈতির স্বজনের কাছে যেতে দেয়া হয়নি। চৈতির বাবা হত্যা মামলা নেয়ার জন্য এজাহার দিলেও পুলিশ তা আমলে না নিয়ে পুলিশের সাজানো আত্মহত্যার প্ররোচনার এজাহারে স্বাক্ষর নিয়ে তা মামলায় রুপ দেয়া হয়েছে। এসব ধারাবাহিক অন্যায় কর্মের পর পুলিশ চৈতির ময়নাতদন্তে ভিসেরা করানোর বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। মূলতঃ পরিকল্পিত হত্যাকান্ডকে ধামাচাপা দিতে ময়নাতদন্তে ভিসেরা রিপোর্টকে এড়ানো হয়েছে। হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য লাশের পুনঃ ময়না তদন্ত সহ মামলার তদন্তের ভার পিবিআই কিংবা সিআইডিতে স্থানান্তরের দাবী তুলেছেন চৈতির পরিবার। চরফ্যাশন থানার ওসি মো. মনির হোসেন মিয়া জানান, তাদের আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। নিহতের লাশ উদ্ধারের প্রথমে পরিবার এমন কোন অভিযোগ তুলেনি। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে নেয়া মামলাটি তদন্ত চলছে।
৫ views