চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম রক্ষায় নৌ-পুলিশ এবং ফোর্সের যৌথ অভিযান চলাকালে দস্যু জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংঘবদ্ধ হামলায় নারী এএসপিসহ ১২ নৌ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছে। ২৫ অক্টোবর রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর শিলারচর এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ প্রায় ৪৭ রাউন্ড শটগানের গুলি ও ১৫ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করেছে।
এছাড়াও অভিযানে মা ইলিশ ধরার প্রায় দুই'শ নৌকা ফুটো করে দেয়া হয় এবং প্রায় ৪৯ লক্ষ মিটার জাল পুড়িয়ে ফেলা এবং ৭ জেলেকে আটক করা হয়। আহত পুলিশ সদস্যরা চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
আহতরা হলেন, নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ঢাকা হেডকোয়ার্টার) ফরিদা পারভীন (৩৬), ইন্সেপেক্টর মুজাহিদুল ইসলাম( ৪১), এসআই ইলিয়াস (৩০), নায়েক ইকবাল (৪০), নায়েক শাহজালাল (২৫), নৌ-পুলিশ ককনস্টেবল প্রসেনজিৎ (২৪), নিলয় দেব (২৫), হেলাল উদ্দিন( ৫০), আল মামুন (২৮), ফেরদৌস শেখ (২৬), আল আলামিন (২৫), কাউসার (৩০), মোনায়েম (২৬)।
এছাড়াও আরো বেশ কিছু নৌ পুলিশ কমবেশি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, হামলার ঘটনার খবর পেয়ে চাঁদপুর জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহতদের কাছ থেকে ঘটনার সম্পর্কে খোঁজখবর নেন এবং তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে
সহযোগিতা করা হয়।
অভিযানে আটক ৭ জেলে হলঃ ওমর ফারুক (১৫), কামিল হোসেন (১৮), মোঃ রুবেল (২২), খলিল (২২), শাহজালাল (২৫, নবীর হোসেন (২৫), মাহফুজ আলম (১৪)। তারা সবাই হামলার আগে আটক হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের বাড়ি মতলবের আমিরাবাদ এলাকায় বলে তারা জানিয়েছে।
নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ঢাকা হেডকোয়ার্টার) ফরিদা পারভীন জানান, সরকার ঘোষিত মা ইলিশ রক্ষায় অভয়াশ্রম সফল করতে শনিবার ভোরে তারা ঢাকা নৌ পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে নৌ পুলিশের। অতিরিক্ত ডিআইজিসহ বিশাল একটি টিম নদীতে অভিযানে নামেন। তারা মেঘনা নদীর মুন্সিগঞ্জ ক্যানেল থেকে রাতভর মেঘনা নদীতে অভিযান চালান। অভিযানে এয়ার ফোর্সের একটি টিমও আকাশ পথে অংশ নেয়। যৌথ অভিযানের টিম শরিয়তপুর ও চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে মা ইলিশ ধরার প্রায় ২০০ নৌকা ফুটো করে দেয়া হয়। প্রায় ৪৯ লাখ মিটার কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ফেলা এবং ৭ জেলেকে আটক করা হয়। তারা সকালে অভিযান শেষ করে ফেরার জন্যে প্রস্তুতি নিতে গেলে চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্ব ইনিয়নের লক্ষ্মীর চর ও শিলারচর এলাকায় বিপুল পরিমান জেলে নৌকা মাছ ধরার জন্যে প্রস্তুতি নিতে দেখেন।
এসময় নৌ-পুলিশের টিম জেলেদের বাঁধা দিতে গেলে ওই এলাকার সকল জেলে এবং নারী-পুরুষে একজোট হয়ে তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। এসময় আত্মরক্ষার্থে তারাও প্রায় ৪৭ রাউন্ড শটগানের গুলি ও ১২ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করেছেন। পরে অভিযানে থাকা অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এএসপি ফরিদা পারভীন জানান, জেলেরা যে এতটা ভয়ঙ্কর তা আমাদের জানা ছিল না। তারা রাষ্টের আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রশাসনের উপর হামলা করেছে। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুক ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
আহত ইন্সপেক্টর মুজাহিদ, কনস্টেবল প্রসঞ্জিত ও নীলয় দেব জানান, জেলেরা জালের সাথে ব্যবহৃত পোড়া মটির চাক্কি, ইটপাটকে, লাঠি-৭সোটা নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। আমরা অভিযান শেষ করে ফিরে যাবার পথে আতর্কিতভাবে এই হমলা করা হয়েছে।
নৌ পুলিশের যৌথ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা, হেডকোয়ার্টারের এডিশনাল ডিআইজি নজরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম, বসু মিয়া, ফরিদুল ইসলাম, মিনা মাহমুদা, এএসপি ফরিদা পারভিন।
এদিকে এর আগেও মা ইলিশ রক্ষা অভিযান চলাকালে রাজরাজেশ্বরী ইউনিয়নে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ জেলা ট্রাস্কফোর্সের উপর জেলেরা হামলা চালিয়েছে। ওই ঘটনার সাথে স্থানীয় একটি শক্তিশালী চক্র জড়িত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা না নেয়ার ফলে আজকের এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বলে জানান রাজরাজেশ্বরের স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিবর্গ।তারা শিলারচরে পুলিশের উপর হামলার সাথে জড়িতদেরকে
চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও দাবী জানান।
তাদের দাবি রাজরাজেশ্বরী ইউনিয়নে মা ইলিশ নিধন জেলেদের মদদদাতা মৌসুমী আড়ৎদার ও দাদনদারদের তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিলে রাজরাজেশ্বরসহ অন্য ইউনিয়নের নদী এলাকার ইলিশ নিধনের উৎসব কমে আসবে বলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার চেয়ারম্যানের স্টেশন, গৌরঙ্গ বাজার, কাচিকাটা,
চাঁদপুর শহরের যমুনা রোড়, পুরাণবাজার হরিসভা,রণাগেয়াল, সদরের দোকানঘর, রামদাসদী, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুর হরিণা, অাখনের হাট খাল,তরপুরচন্ডির আনন্দবাজার,বিষ্ণুপুরের কানুদী ইব্রাহিমপুরের আলুরবাজার,মতলবের আমিরাবাজ সহ বিভিন্ন পয়েন্টে রাতভর ইলিশ বিক্রির মহোৎসব চলে। এসব এলাকায় একশ্রেণীর মৌসুমি আড়ৎদার সরকার দলের প্রভাব খাটিয়ে জেলেদের জাল নৌকা দিয়ে মা ইলিশ নিধনে নদীতে নামতে সুযোগ করে দেয়। তাদের সাথে প্রশাসনের কারো কারো সাথে যোগসাজোশ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর আগেও রাজরাজেশ্বর চরে লক্ষীপুর ইউনিয়নের বহরিয়া খালে এবং হরিনা ফেরিঘাট এর আশেপাশে পুলিশের উপর জেলেদের
হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
সোহাঈদ খান জিয়া,চা্ঁদপুর /০১৮৬৭৮৮৬৫৯৯
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]