চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। টোল আদায় বন্ধে চালকরা মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।
টোল আদায় বন্ধে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন চালকরা। রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় এ সেতুটির টোল আদায় বন্ধ হচ্ছে না বলে একটি সূত্র জানায়। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দুর্বল মনিটরিংয়ের জন্যে দায়ী বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।
চাঁদপুরের অন্যান্য সেতুর টোল আদায় বন্ধ হলেও এ সেতুটির টোল আদায় বন্ধ না হওয়ার রহস্য কী তা জানতে চাচ্ছে কৌতূহলী মানুষ। ।
দিন যতো যাচ্ছে এ সড়কটিতে যানবাহনের সংখ্যা ততো বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে টোল আদায়ও বেশি হচ্ছে। আর ইজারাদাররাও বেশি লাভবান হচ্ছে। গরিব চালকদের কান্না ইজারাদারদের লাভ ও লোভের নিচে চাপা পড়ছে। অনেক সিএনজি অটোরিকশা চালক টোল দেয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্যে নূতনবাজার-পুরাণবাজার সেতু হয়ে চাঁদপুর শহরে প্রবেশ করে। অনেকে বাগাদী চৌরাস্তা পর্যন্ত আসা-যাওয়া করে। তবে গাড়িতে গ্যাস ভর্তির জন্যে ঐ সকল চালক উপায়ান্তর না পেয়ে টোলের টাকা দিয়েই চাঁদপুর শহরে এসে থাকে। প্রতিদিন এ সড়কটি দিয়ে অটোবাইক, সিএনজি অটোরিকশা, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, যাত্রীবাহী বাস, ট্রলি গাড়ি, প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য কয়েক শ’ যানবাহন আসা-যাওয়া করে।
এ সেতুটির টোল আদায় বন্ধ না হলে এসব যানবাহনের চালকরা সড়ক অবরোধ ও গাড়ি চালানো থেকে বিরত থেকে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করে নিরীহ যাত্রীদেরকে হয়রানি করতে পারে বলে প্রায়শই হুমকি দিয়ে চলছে। অপরদিকে টোল আদায়কারীরা প্রায়শই যাত্রী ও চালকদের সাথে খারাপ আচরণ করে থাকে। এমনকি চালকদের মারধর করার জন্যে তেড়ে যায়।যাএীরা ডাক দিলে লান্চিত ও অপমানিত করে।আর চালক ও টোল আদায়কারীদের সাথে ঝগড়া লেগেই থাকে। সিএনজি অটোরিকশা চালক সোহাগ, দেলু, এমরান, কালু, শরীফ, মুরাদ, লিটন, বাচ্চু, রুবেল, আতিক জানান, যতোবারই সেতু দিয়ে আসা-যাওয়া করা হয় ততোবারই তাদেরকে ১০ টাকা করে দিতে হয়। প্রতিবার আসা-যাওয়াতে টাকা দিতে গিয়ে পথের খরচ ও মালিকের জমা শেষে সংসারের চাল, ডাল কিনতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। তাদের একটাই দাবি, সেতুর টোল আদায় বন্ধ করা। তারা মনে করেন, চাঁদপুরের মন্ত্রী-এমপিরা চাঁদপুরের অন্যান্য সেতুর টোল আদায় বন্ধ করে দিলেও তাদের মনে হয় অজানা রয়ে গেছে যে, চাঁদপুর সেতুটির টোল আদায় বন্ধ হয়নি। না হলে এতোদিনে টোল আদায় বন্ধ হয়ে যেতো। ফিরোজ ও জহির নামে ট্রাক চালক জানান, চাঁদপুর সেতুর চেয়ে বড় সেতুর টোল কম নেয়া হয়।অনেক সেতুতে তো টোল আদায় বন্ধই রয়েছে।
এ সেতুর টোল বন্ধ হলে আমাদের খরচ অনেক কম হতো। মনির নামে এক যাত্রীবাহী বাসচালক জানান, যতবারই আসা-যাওয়া করে থাকি ততবারই টোলের টাকা গুণতে হয়। এতে আমাদের খরচটা বেশি পড়ে যায়। টোল আদায় বন্ধ হওয়া দরকার। প্রাইভেট কার চালক বশির, রাসেল জানান, যাত্রী নিয়ে গেলে টোলের টাকা যা দিতে হয়, খালি গাড়ি নিয়ে আসলে ঐ টাকাই দিতে হয়। টোলের টাকাটা বন্ধ হওয়া দরকার।
যাত্রী হাছান, রুবেল, স্বপ্না, আকলিমা, কলেজ ছাত্রী লতা, কলমী, ছাত্র নাজমুল, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ব্যাংক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ জানান, ভাড়া বেশি আদায় করার বিষয়টি নিয়ে প্রায় চালকরা খারাপ আচরণ করে থাকে।
তাদের ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করার বিষয়টির সপক্ষে তারা বলেন, দেখেন না টোলের টাকা দিতে হয়। টোলের টাকার কারণেই আমরা ভাড়া বেশি নিয়ে থাকি। ভাড়া বেশি নিলেই আমাদের দোষ। আর টোলের টাকা নিচ্ছে যে সেটা কোনো দোষের না। জানা যায়, চাঁদপুর শহরে বিদ্যমান নূতনবাজার-পুরাণবাজার সেতুটির দৈর্ঘ্য ২৬০ মিটার।
এটির টোল আদায় বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ তার চেয়ে ছোট ২৪৮ মিটার ‘চাঁদপুর সেতু’র টোল আদায় বন্ধ না হওয়াটা নিশ্চয়ই স্থানীয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিগণের উদাসীনতারই পরিচায়ক।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]