আবুল হাসনাত রিন্টু, ফেনী প্রতিনিধিঃ- প্রায় ১৪ বছর পর ফের কর্মমুখর হবে ফেনীর খেটে খাওয়া মানুষগুলো।দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিলস ফের চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকারের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি।বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সকালে ফেনী সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় স্থানীয় ব্যাবসায়ী সহ নেতাদের পরামর্শক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেন।উক্ত কর্মশালায় জেলা প্রশাসক
আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসানের সভাপতিত্বে, প্রধান অতিথি ছিলেন টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাকির হোসেন। উপস্থাপনার দায়িত্বে পিপিপি কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক আবুল বাশার।প্রধান অতিথি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জাকির হোসেন বলেন, সরকারের মালিকানাধীন চার টেক্সটাইল মিলস চালুর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম তিনবছর উন্নয়নের সময়কালীন সরকার কোনো টাকা গ্রহণ করবে না বরং সরকার প্রতিস্ঠানকে দাড় করাতে আরো সহযোগীতা করবে।
সভাপতির বক্তব্যে ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, আমি ফেনীতে আসার পর থেকে নিজও চিন্তা করতে শুরু করছি এটাকে কিভাবে চালু করা যায়? তার ভিতরে পিপিপিএ নিজেই মিলটি চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে এটি আমাদের সৌভাগ্যের ব্যাপার। এতে ফেনীর বহু কর্মজীবনের ব্যাবস্থা হবে এবং এর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও বড় অবদান রাখবে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯০৩ সালে ১১ একর জায়গার উপর কাজিরবাগ বাজার ও রানীর হাট এলাকার মাঝামাঝি স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় দোস্ত টেক্সটাইল মিল। পরে ১৯৬৫ সালে মিলটি সম্প্রসারণ করে ২৩ একর জায়গা জুড়ে বৃহৎ আকারে উৎপাদনে যায় মিলটি। তৎকালীন সময়ে এখানে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করতো। শিপ্টিং ডিউটির কারনে প্রায় সব শ্রমিকই আশপাশের এলাকায় পরিবার-স্বজন নিয়ে বসবাস করতো। এতে করে মিলটির আশপাশে গড়ে ওঠে শতশত দোকানপাট। সৃষ্টি হয় হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। বিশেষ করে স্থানীয় লোকজনের মাঝে কর্মচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় মিলটির মাধ্যমে।স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রয়ত্ত্ব কারখানাগুলো লোকসান দিতে শুরু করলেও দোস্ত টেক্সটাইল মিলটি ছিল লাভজনক। ২০০০ সালের পর এটিও ধীরে ধীরে লোকসানের মুখে পড়তে শুরু করে। তখন বিভিন্ন মেয়াদে ঠিকাদারি চুক্তির ভিত্তিতে মিল চালানো হয়। ওই সময়ে ঠিকাদাররা মিলে তুলা সরবরাহ করে উৎপাদিত সুতা বিক্রি করে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতেন। লোকসান শুরু হলে ২০০৬ সালে মিলটি একবার এবং ২০০৮ সালে আরও একবার বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্বল্প পরিসরে চুক্তিভিত্তিতে ২০১১ সালে ফের মিলটি চালু হলেও অল্প কিছুদিন পরই স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয় মিলটিকে।উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের পর মিলটি অনিয়মিত হওয়ায় একটি অসাধু চক্র মিলটির সম্পত্তি লুটে খাওয়ার পায়তারা শুরু করে। ওই মহলের যোগসাজশে ২০০৫ সালের শেষের দিকে কর্তৃপক্ষ দোস্ত টেক্সটাইল মিলের ২১.৪৭ একর জমির মধ্যে ১২.৭১ শতক জমি তিনভাগে বিভক্ত করে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে দরপত্র আহ্বান করে। বিক্রি যোগ্য ভূমির উপর শতবর্ষী অন্তত ২ কোটি টাকা মূল্যের গাছ, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের আবাসিক দালান কোঠা ও নানা স্থাপনা সহ তৎকালিন সময়ে ওই দরপত্রের মূল্য অন্তত ৭০ কেটি টাকার উপরে ছিলো। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্রাদার্স ফ্লাওয়ার্স মিলস লি., গ্রেটস টোন লি. ও মীর অ্যান্ড কোং নামে ৩টি প্রতিষ্ঠান মাত্র একটি করে ৩টি দরপত্র জমা দেয়। প্রক্রিয়া শেষে প্রায় ৭০ কোটি টাকার সম্পত্তি মাত্র ২ কোটি ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৮ টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়। বিষয়টি জানা জানি হলে কারখানাটির শ্রমিক-কর্মচারীরা মিলের জমি বিক্রির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। একপর্যায়ে বিটিএমসি দরপত্র বাতিল করে। এরপর দরপত্রদাতারা ২০০৭ সালে হাইকোর্টে মামলা করলে আদালত তাদের পক্ষে রায় দেয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে শ্রমিক কর্মচারীরা আপিল করলে ২০১৩ সালে দরপত্রটি বাতিল করার আদেশ দেয় আদালত।