চীনের উত্থান বিশ্বকে বদলে দিচ্ছে। চীন স্মার্টলি কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক হাতিয়ারকে ব্যবহার করেছে সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে গভীর করতে। আর এটা করা হয়েছে তাদের নিজেদের জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করতে। যেসব দেশ স্বেচ্ছায় তাদেরকে ভূ-কৌশলগত সুবিধা দিতে পারবে তাদের সঙ্গে তারা প্রাথমিকভাবে যুক্ত হয়েছে। পশ্চিম সীমানা অতিক্রম করে, মধ্য এশিয়ায়, চীনের প্রভাব শান্তভাবে প্রসারিত হচ্ছে।চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৩ সালে মধ্য এশিয়া সফরের সময় কাজাখস্তানের নজরবায়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ সেপ্টেম্বর দেওয়া এক ভাষণে ‘ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড ওয়ান রোড’-এর ধারণা দেন। পরে প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’। এটি মূলত দুই হাজার বছর আগে চীনের জিয়ান প্রদেশ থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত যে বাণিজ্যিক পথ গড়ে উঠেছিল, তার আধুনিকতম সংস্করণ। তখন এই পথটি পরিচিত ছিল রেশম পথ বা সিল্ক রোড নামে। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে গড়ে ওঠা এই সিল্ক রোড দশম শতাব্দীতে বন্ধ হয়ে যায়। চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এই পথটিকে আরও বড় পরিসরে নতুন করে নির্মাণ করতে চাইছেন।বিশ্ব পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রতিবেশী শক্তিগুলোকে মোকাবিলা করে চীন ঠিক কতদূর যেতে পারে এখন সেটিই দেখার বিষয়। বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে চলছে চীন। কিন্তু ভারত মহাসাগরে চীনের উপস্থিতি সহজে মেনে নিতে চাইবে না মহাসাগরের পার্শ্ববর্তী শক্তিশালী দেশগুলো। কিন্তু অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলোতে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে সেখানে নিজেদের একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে পেরেছে চীন। এখানেই যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার সঙ্গে চীনের পার্থক্য। চীন রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে না, বিশ্ব শাসন করতে চাইছে অর্থনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে।চীনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে সামরিক ও অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় অর্থনীতিই এখন গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় কূটনীতিক ও পর্যবেক্ষকদের সামনে এখন বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান।