1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : বরিশাল ব্যুরো প্রধান : বরিশাল ব্যুরো প্রধান
  3. [email protected] : cmlbru :
  4. [email protected] : চট্রগ্রাম ব্যুরো প্রধান : চট্রগ্রাম ব্যুরো প্রধান
  5. [email protected] : ঢাকা ব্যুরো প্রধান : ঢাকা ব্যুরো প্রধান
  6. [email protected] : স্টাফ রিপোর্টারঃ : স্টাফ রিপোর্টারঃ
  7. [email protected] : ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান : ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান
  8. [email protected] : সম্রাট শাহ খুলনা ব্যুরো প্রধান : সম্রাট শাহ খুলনা ব্যুরো প্রধান
  9. [email protected] : ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান : ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান
  10. [email protected] : আমজাদ হোসেন রাজশাহী ব্যুরো প্রধান : রাজশাহী ব্যুরো প্রধান
  11. [email protected] : রংপুর ব্যুরো প্রধান : রংপুর ব্যুরো প্রধান
  12. [email protected] : রুবেল আহমেদ : রুবেল আহমেদ
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন

চীনের বাঁধ বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে

ক্যাপ্টেন রেদওয়ান সিকদার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫

চীনের বাঁধ বাংলাদেশের কৃষি,প্রাণ,প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।হিমালয়ের কৈলাস শৃঙ্গের কাছে মানস সরোবর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদীটি গলিত হিমবাহ এবং পাহাড়ের ঝর্ণা থেকে উৎপত্তি। হিমালয়ের ওই অংশটি পড়েছে তিব্বতের পশ্চিমাঞ্চলে, সেখানে এ নদের নাম ইয়ারলুং জ্যাংবো।এরপর পূর্বদিকে এগিয়ে নদের জলধারা ভারতের অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছে সিয়ং নাম নিয়ে।তারপর দিহাং নামে আসামের ওপর দিয়ে এসে এ নদ বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে প্রবেশ করে ময়মনসিংহের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে ভৈরববাজারের দক্ষিণে পড়েছে মেঘনায়। উৎপত্তিস্থল থেকে তিন দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলা নদীটি বঙ্গোপসাগরে পতিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য ১৭৬০ মাইল। বাংলাদেশে যমুনা নদী হিসেবেই বেশি পরিচিত ব্রহ্মপুত্র এশিয়া মহাদেশের অন্যতম প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ নদী হিসেবে বিবেচিত।আন্তঃসীমান্ত নদীটি পানি প্রবাহের দিক দিয়ে বিশ্বের ৯ম ও দৈর্ঘ্যে ১৫তম। ব্রহ্মপুত্রের সাড়ে পাঁচ লাখ বর্গ কিলোমিটার অববাহিকার মধ্যে ২ লাখ বর্গকিলোমিটার পড়েছে ভারতে, আর বাংলাদেশে পড়েছে ৩৯ হাজার বর্গকিলোমিটার।ভারত উপমহাদেশে সম্প্রতি ভূরাজনৈতিক সংঘাতের বড় কারণ হয়ে উঠেছে এই নদ।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে সবমিলিয়ে মোট ৩১০টি নদী রয়েছে। এরমধ্যে আন্তঃসীমান্ত বা আন্তর্জাতিক নদীর সংখ্যা ৫৭টি। বাংলাদেশের প্রাণ,পরিবেশ, প্রকৃতি ও কৃষি প্রধান অর্থনীতি সবদিক দিয়ে আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ তথা যমুনা নদীর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।

বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী পরাশক্তি চীন বিকল্প জ্বালানি হিসাবে জলবিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে। ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় নিজেদের ইয়ারলাং স্যাংপোতে সম্প্রতি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দেবার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি।চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত জলবিদ্যুৎ কোম্পানি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়নার দেয়া হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধটি হল চীনের মধ্য অঞ্চলে অবস্থিত থ্রি গর্জেস ড্যাম। এখান থেকে বছরে ৮৮.২ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। নতুন এই বাঁধের উৎপাদন ক্ষমতা থ্রি গর্জেস ড্যামের চেয়ে তিনগুণের বেশি।

২০১৫ সালের পর অন্তত আটটি বাঁধ নির্মাণ করেছে বেইজিং। যার মধ্যে কয়েকটি এরইমধ্যে চালু হয়ে গেছে। বাকিগুলোর কাজ প্রক্রিয়াধীন। এখানেই শেষ নয়, চীন ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল যে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়েছে, ওই পরিকল্পনায় তিব্বতের লিঞ্জি প্রদেশের মটুও (মেডোগ) কাউন্টির গ্রেট বেন্ড (নামচা বারওয়া) -এ ৯ নম্বর বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেগুলোর সবই ইয়ারলুং জ্যাংবোর (ব্রহ্মপুত্র) উজানে উচ্চ ও মাঝের গতিপথে। কিন্তু চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত জলবিদ্যুৎ কোম্পানি পাওয়ারচায়নাকে এই প্রথম নদের নিম্ন গতিপথে বাঁধ নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।

ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ব্রহ্মপুত্র নদের অনেক ভাটিতে। ফলে এসব বাঁধ নির্মাণ হলে বাংলাদেশের প্রাণ, পরিবেশ, প্রকৃতি ও কৃষির জন্য বিপর্যয়কর এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বাঁধের ফলে নদীর পানি প্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে আসবে। আর তাতে করে ব্রহ্মপুত্রের ওপর নির্ভরশীল নদীপাড়ের কোটি কোটি মানুষ বড় সংকটে পড়বে এবং
মানুষের জীবন ও জীববৈচিত্রে ব্যপক প্রভাব ফেলবে।
এই প্রভাব বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে।

তিব্বতের শান্নান জেলায় হতে থাকা বাঁধে ব্রহ্মপুত্রের পানি আটকিয়ে জলাভাবে থাকা উত্তর-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে নেওয়ার কথা। তা হলে ভারত এবং বাংলাদেশের কে ভুক্তভোগী হতে হবে।মূলত সাউথ-নর্থ ওয়াটার ট্রান্সফার প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্পের আওতায় ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিব্বতের অন্যান্য নদীগুলোর পানি রেড ফ্লাগ ক্যানেল দিয়ে চীন তার উত্তর-পশ্চিমে অনুর্বর অঞ্চলগুলোতে নিয়ে যাচ্ছে। এই প্রকল্প নিয়ে অবশ্যই তাই সন্দেহ ও উদ্বেগ বাড়ছে।

তিব্বতে চীনের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে ভারত আগে থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে। তবে চীন তাতে কর্ণপাত করেনি। এখন চীনের নতুন বাঁধের পাল্টা হিসেবে অরুণাচলে ভারতও একটি বাঁধ নির্মাণের কথা ভাবছে।

ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর চীনের বাঁধের ফলে ভাটির দেশগুলো তথা ভারত ও বাংলাদেশ কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তার একটা দৃষ্টান্ত হতে পারে মেকং নদীর বর্তমান অবস্থা। মেকং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। তিব্বত মালভূমিতে উৎপন্ন হয়ে নদীটি লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

এসব দেশের কৃষি ও মৎস্য বিশেষ করে অর্থনীতি অনেকাংশে এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। এসব বাঁধ প্রতিবেশী দেশগুলোতে নদীটির পানি প্রবাহকে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। ব্যাপকহারে বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীতে নাব্য সংকট তৈরি হয়েছে। এর ফলে যেমন পানিপ্রবাহ কমে যাচ্ছে, তেমনি উর্বরতা হারাচ্ছে চাষাবাদের জমি। সেইসঙ্গে কমে যাচ্ছে মৎস্যসম্পদ।একই পরিণতি হতে পারে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাটি অঞ্চলের দেশগুলোর। নদীটির ওপর নির্ভর করে টিকে আছে এরই মধ্যে ভঙ্গুর এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য, বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণির আবাসস্থল। কিন্ত একে প্রতিবেশী দেশগুলোর অভিন্ন পরিবেশ ও প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে রাখার পরিবর্তে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে ‘কৌশলগত সম্পদ’ হিসেবে বিবেচনা করছে বেইজিং।

এরই মধ্যে ভয়াবহ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ব্রহ্মপুত্র বা যমুনা নদীর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু চীনের বাঁধ নির্মাণ, ভূমিধস ও মূল্যবান ধাতুর উত্তোলনের কারণে নদীতে পালি জমার ফলে নদীর মান এবং ভাটিতে পানি প্রবাহের হার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনটাই সম্প্রতি দেখা গেছে সিয়াং ও কামেং শাখা নদীতে।

বাংলাদেশের যখন পানির প্রয়োজন হবে না- তখন পানির প্রবাহ অতিরিক্ত হতে পারে। আবার যখন শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রয়োজন হবে তখন পানি পাওয়া যাবে না। কারণ চীন তাদের সুবিধা অনুযায়ী পানি আটকে রাখবে ও ছাড়বে।এর ফলে অর্থাৎ ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ বিপাকে পড়তে পারে। সেই পরিস্থিতি এড়াতে সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকদের এখনই আলোচনার উদ্যোগ নেয়ার ওপর জোর দিতে হবে।

চীনের এই ধরনের কোনো বাঁধ তৈরির আগে এ ব্যাপারে বহুপক্ষীয় আলোচনার ব্যবস্থা করা উচিৎ। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সঠিক মনোভাব, সমান হিস্যা প্রদান, আঞ্চলিক সহযোগিতা টেকসই সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলো দিয়ে এই নদ বয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ-ভারত ও চীনের মধ্যে পানি বণ্টন নিয়ে কোনো ধরনের চুক্তি নেই। আর এই নদের ব্যবস্থাপনা দুঃখজনকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। স্থানীয় মানুষ ও বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদে চীনের বাঁধ নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয়কর হবে এবং জীববৈচিত্র্যর জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠতে পারে।এই নদের ওপর চীনের বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ বানানো মানে ভারতের অরুণাচল থেকে আসাম হয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত প্রতিবেশগত ঝুঁকি তৈরি হওয়া এবং এটি অন্যতম গুরুতর ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। ২০০৮ সালের সিচুয়ান ভূমিকম্পে ৮৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। অঞ্চলটি তিব্বত উপত্যকার পূর্ব বলয়ে অবস্থিত। সে সময় ওই ভূমিকম্পের জন্য সেখানকার বড় বাঁধ ও জলাধারকে দায়ী করা হয়েছিল। ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ ও জলাশয় তৈরি হলে, তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়াবে।

পদ্মার উজানে গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধ দিয়েছে ভারত। তিস্তার পানিবঞ্চনার দুঃখ বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছে। এখন কাঁদাতে আসছে চীনের বাঁধ।

ক্যাপ্টেন রেদওয়ান সিকদার
স্টেট কাউন্সিলর, সাউথ এশিয়ান স্ট্রাটেজিক কংগ্রেস।

Facebook Comments
no views

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২২ দৈনিক শিরোমনি