চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি, দৈনিক শিরোমণিঃ যশোর মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের সন্তান মাহফুজুর রহমান মাফুজ (১৭)-কে অমানবিক নির্যাতন এবং হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫শে মে) সকাল ১০টার সময় জীবননগর পৌরশহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে জীবননগর উপজেলার সর্বশ্রেণি-পেশার নারী ও পুরুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে মাহফুজ হত্যার সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। জীবননগর পৌরশহরের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনিরুজ্জামানের ছেলে মাহফুজ ছোটবেলা থেকেই খুবই চঞ্চল প্রকৃতির ছিলো। অনেক চেষ্টা করেও তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে না পারায় গত ২৬শে এপ্রিল তাকে যশোর মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে আসে তার পরিবার। শনিবার (২২শে মে) দুপুরে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের কয়েকজন ব্যক্তি মাহফুজকে যশোর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে পালিয়ে যায়। বিষয়টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অপরিচিত নাম্বার থেকে তার পরিবারকে জানানো হয়। পরিবারের সদস্যরা যশোর সদর হাসপাতালের যাওয়ার পর মর্গে ছেলের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মাহফুজের মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে মনে করা হলেও ময়না তদন্তের রিপোর্ট ভিন্ন কথা বলে। রিপোর্টে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়ে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় মাদক নিরাময় কেন্দ্র (রিহ্যাব) এর সিসিটিভি ফুটেজ। সেখানে মাহফুজকে নির্মমভাবে হত্যার ফুটেজ দেখে হতবাক হয় সকলেই। গ্রেফতার করা হয় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকসহ মোট ১৪জনকে। তাদের মধ্যে ৩জন হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মাদকাসক্তদের পাঠানো হয় সুষ্ঠু স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু সেখানের চিত্র একেবারেই বিপরীত। অন্যায় কাজ থেকে বের হওয়া তো দূরের কথা সেখানেই আরও বেশি অন্যায় কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে মনে হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কোন ভরসায় মানুষ তাদের সন্তান ও আত্মীয় স্বজনদের মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করবে তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। মাদক সেবন করে সন্তানের বেঁচে থাকা নাকি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে গিয়ে তাদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হওয়া কোনটা ভালো? এমন প্রশ্ন বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে জীবননগর উপজেলাবাসীর মনে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন প্রত্যেক পিতা-মাতার উচিৎ ছোটবেলা থেকেই সন্তানের উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা। তাহলে কোন সন্তানই বিপথগামী হওয়ার সুযোগ পাবেনা।
৬ views