মো: শাহিন আহমেদ, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: অসংখ্য চা গাছে এই একই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। ফলে দূর থেকে দেখা যায় পত্রশূন্য বৃক্ষের সম্মিলিত সারি।
শীতকাল এলেই কাটা পড়ে চা গাছ। দেখা যায় সেকশনব্যাপী চা বাগানের গাছগুলোর মাথা কাটা।
এভাবে মাথা কেটে ফেলার নাম- প্রুনিং (Pruning)। বাংলায় যাকে ছাঁটাই বলা হয়।
বাণিজ্যিক চায়ের গাছে এভাবেই চলে মাথা-ছাঁটাই। দেশের প্রায় প্রতিটি চা বাগান এখন চলে এসেছে প্রুনিংয়ের আওতায়।
এ ব্যাপারে জঙ্গলবাড়ী চা বাগানের ম্যানেজার কাদের সিদ্দিকী ও সহকারী ম্যানেজার বিল্লাল উদ্দিন দৈনিক শিরোমণিকে বলেন, চা বাগানের ভাষায় প্রুনিংয়ের আরেকটি অর্থ কলম করা। এ ধরনের প্রুনিংয়ের নাম ব্রিদার। এই পদ্ধতিটি হচ্ছে মাটি থেকে যে গাছগুলো ২৪ ইঞ্চি ছাঁটাই করা হয় সে গাছগুলোতে অতিরিক্ত একটি ডাল রাখা হয়।
চা গাছের স্বাস্থ্য ও উৎপাদন ক্ষমতার দিক বিচেনায় এনে এমন পদ্ধতি বাংলাদেশের ১৬৭টি চা বাগানের প্রায় সবগুলোতেই প্রয়োগ করা হয়। কয়েকটি পদ্ধতিতে প্রুনিং হয়। যেমন- চা গাছের বয়স হিসাবে করে একেকটি চা গাছের মাথা বেশি পরিমাণে ছাঁটাই, মাঝারি পরিমাণে ছাঁটাই এবং কম পরিমাণে ছাঁটাই। এগুলো কোনোটাই গাছের ক্ষতিসাধনের জন্য নয়, বরং চা গাছের অধিকতর উপকারিতার জন্য। সম্প্রতি জঙ্গলবাড়ী চা বাগানের সেকশনগুলোতে দেখা গেলো নতুন পদ্ধতির ছাঁটাই। পুরো চা গাছ ছাঁটাই না করে প্রতিটি চা গাছে একটি করে ডাল রেখে দেওয়া হচ্ছে।
প্রুনিং রয়েছে নানা ধরনের। যেমন- কলার প্রুনিং (গলাকাটা ছাঁটাই), মিডিয়াম প্রুনিং (মধ্যম ছাঁটাই), লাইট প্রুনিং (হালকা ছাঁটাই), লো প্রুনিং (নিচু ছাঁটাই), ক্লিন প্রুনিং (পরিষ্কার ছাঁটাই)। গাছের বয়স, মাটির উর্বরতা প্রভৃতি দিক বিবেচনা করে প্রতিটি সেকশনের জন্য আলাদা আলাদা প্রুনিং নির্বাচন করা হয় বলে জানান এ অভিজ্ঞ টি-প্ল্যান্টার।
এর উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্রিদারের আরেকটি অর্থ হচ্ছে শ্বাস নেওয়া। অর্থাৎ, এই ডালের ফলে চা গাছগুলো সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে সূর্যোলোক থেকে তার প্রয়োজনীয় খাদ্য-পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে।
চা গাছে প্রুনিং মানেই হলো নবজীবন দান। এজন্য প্রয়োজনীয় সেচের ব্যবস্থা, মাটিতে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য উপাদান প্রভৃতি বিষয়গুলো প্রুনিং পরবর্তী সময়ে নজরে রাখতে হয় বলে জানান।
মাসখানেক পর যখন বুশ থেকে (কাটা ডালগুলোর অংশ) কুঁড়ি আসতে শুরু করে তখন সেই আগে থেকে রাখা বাড়তি ডালটি কেটে ফেলা হয়। তাতে এই কম বয়সী চা গাছগুলো মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তারা পরিপূর্ণভাবে নতুন পাতা গজিয়ে বড় হওয়ার সুযোগ পায়।