করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আবারও বসছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন। এতে যোগ দিতে এরই মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধানরা পৌঁছাতে শুরু করেছেন নিউইয়র্কে। এবারের অধিবেশন উপলক্ষে শহরটিতে যাওয়া বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান ও প্রতিনিধিদের করোনারোধী টিকা নেওয়ার প্রমাণপত্র দেখানোর দাবি জানিয়েছিল নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ। তবে জাতিসংঘের নিয়মবিরোধী হওয়ায় সেই দাবি ধোপে টেকেনি। ফলে অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারছেন টিকা না নেওয়া ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারোও।
করোনার কারণে গত বছরের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল পুরোপুরি ভার্চুয়ালি। এবারও সংক্রমণ শতভাগ নিয়ন্ত্রণে না আসায় জাতিসংঘের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য দেশ ভিডিওবার্তা পাঠানোর মাধ্যমে অংশ নিতে পারে। তবে বাকি সদস্য দেশগুলোর প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সশরীরেই হাজির থাকবেন নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন যেন করোনার ‘সুপার স্প্রেডার’ অনুষ্ঠান না হয়ে ওঠে, এ জন্য বিশ্বনেতাদের নিউইয়র্কে যাওয়া আটকানোর চেষ্টা করেছিল মার্কিন প্রশাসন। যদিও দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই সশরীরে অধিবেশনে যোগ দেবেন। ক্ষমতাগ্রহণের পর জাতিসংঘে এটাই প্রথমবারের মতো পা রাখতে চলেছেন তিনি।
বৈশ্বিক সংস্থাটির তথাকথিত সম্মান ব্যবস্থা বলছে, অধিবেশন কক্ষে প্রবেশের অর্থ সেই ব্যক্তি নিজেকে টিকাগ্রহীতা হিসেবে ঘোষণা করছেন। তবে এর জন্য তাকে কোনোধরনের প্রমাণ দেখাতে হবে না।
কিন্তু এবারের অধিবেশনে প্রথম দেশটি কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। কারণ এতে প্রথম বক্তব্য রাখবেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো। তিনি বরাবরই টিকাবিরোধী। করোনায় আক্রান্ত হলেও আজও টিকা নেননি এ নেতা। বোলসোনারোর দাবি, করোনায় একবার আক্রান্ত হওয়ায় তার আর সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নেই।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে যদি ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্টের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসে, তাহলে জাতিসংঘেই টিকা নিতে পারবেন তিনি। সংস্থাটির সদর দপ্তরের বাইরে জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের করোনা টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখছে নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ। থাকছে বিনামূলে করোনা পরীক্ষার সুবিধাও।
জাতিসংঘ অধিবেশন সামনে রেখে সম্প্রতি সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, আমরা কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে বলতে পারি না যে, টিকা নেওয়া না থাকলে তিনি জাতিসংঘে প্রবেশ করতে পারবেন না।
ম্যানহাটনে অবস্থিত জাতিসংঘের সদরদপ্তরটি আন্তর্জাতিক ভূমি হিসেবে স্বীকৃত। ফলে সেখানে মার্কিন আইনের বাধ্যবাধকতা প্রযোজ্য নয়। তবে মহামারি প্রশ্নে আগেই স্থানীয় ও জাতীয় নির্দেশনা মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জাতিসংঘ কর্মকর্তারা।
গুতেরেস বলেছেন, আমাদের টিকা নেওয়া লোক সবচেয়ে বেশি কীভাবে নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে শহর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। নিউইয়র্ক মেয়রের কার্যালয় আমাদের টিকা দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে। তাই আগত লোকজন (জাতিসংঘেই) টিকা নিতে পারবেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মতে, আগত কূটনীতিকদের কতজন টিকাগ্রহীতা হতে পারেন, তা বিশ্বজুড়ে টিকা বিতরণে অসমতার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারে। যদিও তিনি আশা করছেন, নিউইয়র্কে যাওয়া বেশিরভাগ প্রতিনিধিই টিকা নেওয়া থাকবেন।
বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৭০ কোটি ডোজ টিকা বিতরণ করা হয়েছে। এর বেশিরভাগই পেয়েছে পশ্চিমা ও ধনী দেশগুলো। বিতরণ হওয়া টিকার মাত্র দুই শতাংশ পেয়েছে আফ্রিকা।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]