চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি ,দৈনিক শিরোমণিঃ চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলো ইটভাটার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে সড়কের উপর পুরু আস্তরণ তৈরি হচ্ছে। যার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই ওই সমস্ত সড়কগুলো চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। কাদায় স্লিপ কেটে সড়কের উপর যাচ্ছে বেশীরভাগ মোটরসাইকেলের চালক, হচ্ছেন মারাত্মক আহত। তারপরেও এ বিষয়ে টনক নড়ছে কারোরই। গত রবিবার রাতে চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর আঞ্চলিক মহাসড়কের উথলী গ্রামের মোল্লাবাড়ি নামক স্থানে সড়কের উপর কাঁদামাটিতে স্লিপ কেটে পড়ে যায় অসংখ্য মোটরসাইকেল। বিষয়টি সমাধানের জন্য এগিয়ে আসে উথলী গ্রামের কিছু উঠতি বয়সের যুবক। পুলিশকে জানানোর পর তাদের সাথে রাস্তা পরিষ্কার কাজে যোগদেন জীবননগর থানা পুলিশের টহল দল। কোদালের সাহায্যে রাস্তার উপরের মাটি কেটে সরিয়ে ফেলে কোনরকমভাবে রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়। পরেরদিন অর্থাৎ সোমবার (১০ই মার্চ) জীবননগর থানার ওসি মোঃ সাইফুল ইসলামের হস্তক্ষেপে সেখানে ইটভাটা থেকে কয়েকজন শ্রমিক এসে স্থানীয় যুবকদের সহায়তায় রাস্তা থেকে আবারও মাটি সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার আগ পর্যন্ত এ ধরনের উদ্যোগ নিতে তেমন কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়না। রাস্তা থেকে মাটি সরিয়ে তা পরিষ্কার করার কাজ পুলিশের না হলেও কাজটি তাদেরই করতে হচ্ছে। তাহলে যাদের জন্য এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেনা? এমন প্রশ্ন বার বারই ঘুরপাক খাচ্ছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, জীবননগর উপজেলার মাটি ও বালুদস্যুদের কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছেনা। সবধরনের নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা ঠিকই তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যার কারনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা রাস্তাগুলো নিমিষেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পুকুর খননের নামে এলাকার ভাটামালিকদের যোগসাজশে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে উপজেলার প্রতিটি ইটভাটায়। কিসের লকডাউন? কিসের রোজা? জনগণেরই বা কি সমস্যা? এসবে তাদের কোনপ্রকার মাথাব্যথা নেই। সবকিছুকে উপেক্ষা করে মাটি তাদের লাগবেই। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিনিয়ত লেখালেখির পর বিষয়টি প্রশাসনের উপর মহল পর্যন্ত পৌঁছালেও আইনের কঠোর ধারা প্রয়োগের অভাবে মাটি ও বালুদস্যুরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। দু-এক জায়গায় মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনা হলেও অল্প একটু বিরতি দিয়ে তারা আবার তাদের কাজ শুরু করছে পুরোদমে। আর বাঁকা চোখে তাকাচ্ছেন এ সমস্ত বিষয় নিয়ে লেখালেখি করা সাংবাদিকদের দিকে। অনেক সময় আবারও দেখে নেওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন। চোরের মায়ের যে বড়গলা তার উদাহরণ তারা হাতেনাতে দেখিয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই আবার বলছেন, ইট তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে মাটি ও বালু যা ছাড়া ইট তৈরি করা সম্ভব না। ভাটামালিকরাও তো সরকারকে কর দিয়েই তাদের ব্যাবসা পরিচালনা করছেন। আর এ সমস্ত ইটভাটায় কর্মসংস্থান হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের। কিন্তু মাটি না পেলে তো ভাটা বন্ধ করে দিতে হবে, তখন বেকার হয়ে পড়বে হাজার হাজার শ্রমিক। এজন্য সবদিক ভেবেচিন্তে তারপর কথা বলতে হবে। তবে ভাটামালিকদের উচিৎ মাটিবহন শেষে নিজ দায়িত্বে সড়কের উপর থেকে মাটি পরিষ্কার করে দেওয়া। তাহলে আর কাউকেই কথা শুনতে হবেনা। রাস্তার উপর মাটি পড়ার কারণে ঘটবেনা কোন দুর্ঘটনা।
৪ views