দারিদ্রতাকে জয় করে নিজের প্রতিভা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ ৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও মুখে হাসি ফুটেনি কানাইঘাটের জুলফা বেগমের। পরিবারের অভাব-অনটন ও আর্থিক সমস্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা লাভের এই সুযোগ অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়া দরিদ্র পিতার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছিলনা।
এদিকে, মেয়ের আগ্রহ ও স্বপ্ন অস্বচ্ছল পিতার বুকে যন্ত্রণার পাহাড় ছিল। এমতাবস্থায় গরীব এই মেধাবী শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসেন কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জী। তিনি মানবতার হাত প্রসারিত করে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যাবতীয় ব্যবস্থা করেন এবং যথাসাধ্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
জানা যায়, কানাইঘাট উপজেলার চতুল ইউনিয়নের ডুংরা গ্রামের আব্দুর রবের মেয়ে জুলফা বেগম এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সবক’টিতে ভালো নম্বর পেয়ে কৃতকার্য হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৮০.৭৫ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন এবং নিজের পছন্দের বিষয় উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হওয়ার সিদ্বান্ত নেন। শুভাকাঙ্খী অনেকেও পরামর্শ দেন।
জুলফা বেগম জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার খবরটি শুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি ও সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. জিলানী আমার পিতার সাথে যোগাযোগ করেন। আমার পিতার দারিদ্রতার বিষয়টি জেনে ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার যাবতীয় বিষয়ে আমাকে সহযেগিতার আশ্বাস দেন। এই দুই কর্মকর্তার সহযোগিতায় ঢাবিতে ভর্তি হয়েছি এবং আবাসিক হল ‘কবি সুফিয়া হলে’ আসন পাওয়ার সৌভাগ্য হয়। সারাজীবন আমি এবং আমার পরিবার তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। আমাদের ইউএনও মহোদয় মানবতার দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছেন। জুলফা আরো জানান, ২০১৮ সালে দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করি। স্কুলের শিক্ষক ও স্থানীয় অনেকে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। এরপর সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হই। লেখাপড়ার প্রতি আমার আগ্রহ দেখে কলেজের অধ্যক্ষ হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জি এবং উপাধ্যক্ষ ফাহিমা জিন্নুরাইন লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করেন এবং তাদের সার্বিক সহযোগিতায় ২০২০ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতকার্য হই।
জুলফা বেগমের পিতা আব্দুর রব বলেন, আমি একজন গরীব কৃষক। আট সদস্যের পরিবারে আমিএকমাত্র উপার্জনকারী। প্রায় চার বছর আগে পরপর তিনবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শরীর দুর্বল হয়েগেছে। এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারিনা। পরিবারের অন্ন যোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছি। এছাড়া এমন কোন সম্বলও নেই যেটা বিক্রি করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাবো। এমতাবস্থায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানাজি সাহায়্যের হাত বাড়িয়েছেন।
এছাড়া আরো অনেকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন সবার কাছে কৃততজ্ঞ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি বলেন, মানবিক দৃষ্ঠিকোণ থেকে দারিদ্র এই মেধাবী শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার পর মেয়েটিকে টিউশনিরও ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যথাসাধ্য এই শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করে যাব। তিনি আরো বলেন, আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়েন সেজন্য এখন থেকে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।