শিরোমণি ডেস্ক রিপোর্ট: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বেশিরভাগ শরিক। দলগুলোর অভিযোগ, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই এর দায় তারা নেবে না। তাদের মতে, এ সরকার তো জোট সরকার নয়। ফলে এ দায় সরকারি দল হিসাবে আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে।
দাম বৃদ্ধিকে ‘জনস্বার্থবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদে মাঠের কর্মসূচিতে নেমেছে কোনো কোনো দল। আবার বিবৃতি দিয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বানও জানানো হয়েছে। শরিকদের মতে, রাজনীতি মানুষের জন্য। সাধারণ মানুষের কষ্ট হয় এমন কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা একমত নন। এ বিষয়টি নিয়ে জোটের বৈঠকেও আলোচনা করবেন তারা। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দাম বাড়ালেও একসঙ্গে এতটা বাড়ানো ঠিক হয়নি।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি শনিবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জোটের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলবে দলটি।
জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন যুগান্তরকে বলেন, দাম বাড়ানোর বিষয় নিয়ে তো আমাদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। কোনো আলোচনা না করেই তারা সবকিছু করছে। সুতরাং এ দায় আমাদের ঘাড়ে বর্তাবে কেন? আমরা তো এ সিদ্ধান্তের কোনো আলোচনার অংশীদার নই। তিনি বলেন, এটা আওয়ামী লীগ সরকার। জোট সরকার নয়। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে আছি। কিন্তু তারা তো বলছে না যে, এটা জোটের সরকার। সুতরাং আওয়ামী লীগ সরকারের দায় আওয়ামী লীগ সরকারকেই নিতে হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা তো অবশ্যই ভোটে প্রভাব ফেলবে। কারণ মানুষ অসম্ভব রকমের ক্ষুব্ধ। আমি মানুষকে এরকম ক্ষুব্ধ হতে খুব কমই দেখেছি। তাই আমরা আমাদের কথা বলেই যাব।
জোটের একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেন, এটা আসলে ‘জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত।’ কোনো একটি মহলের কথা শুনে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের ঠিক হয়নি। এর খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে। দিনশেষে কিন্তু আমাদের ভোটের জন্য সেই জনগণের কাছেই যেতে হবে। এটা মাথায় রাখতে হবে।
‘ইউরিয়া সার ও পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন, কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে জোটের আরেক শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। বুধবার ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে দলটি। এছাড়া জাসদের যুব সংগঠন জাতীয় যুব জোট একই দাবিতে আজ ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে। এ বিষয়ে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এক বিবৃতিতে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণ হতবাক ও সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির সহায়ক হিসাবে ভূমিকা রাখবে। মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা এবং পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান তারা। নেতৃদ্বয় বলেন, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমছে, সেই মুহূর্তে প্রায় ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধির পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।
ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, এই যে মূল্যবৃদ্ধি, এটা মানুষ চাচ্ছে না। এটা মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। জোটের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি-জনগণের স্বার্থ পরিপন্থি কোনো কাজের সঙ্গে আমরা নেই। আমরা এর প্রতিবাদ করি, করব।
কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, আইএমএফের পরামর্শে দাম বাড়াবে এটা তো ঠিক হয়নি। ১৪ দল একটি আদর্শিক জোট। আমরা দল একটি স্বতন্ত্র দল। আমরা আমাদের রাজনীতি বিকিয়ে দিয়ে ১৪ দল করি-বিষয়টা তা নয়। আমরা এ ধরনের সিদ্ধান্ত সমর্থন করি না।
জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা বলেন, খুব শিগগিরই ১৪ দলের সভা হবে। ওই সভায় আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব।
তবে অন্য শরিকদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন মত বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের। দলটির চেয়ারম্যান আলহাজ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, আমরা যেহেতু আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে আছি, আমি একজন সংসদ-সদস্য। সূতরাং সরকারের ভালো-মন্দ দুটোরই অংশীদার আমি। ‘আমি সরকারে নেই’ এটা বলে ১৪ দলের অনেকেই পার পেয়ে যেতে চায়। কিন্তু আমি মনে করি সেই সুযোগ আমাদের নেই। সরকারে হয়তো আমরা নেই; কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে তো আছি। তিনি বলেন, তবে একসঙ্গে দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে যেহেতু বেড়েছে, তাই এটা ধাপে ধাপে বাড়ানো যেত। মানুষের কাছে আমাদের তো উত্তর দিতে হবে। আমরা এ বিষয়ে ১৪ দলের সভায় কথা বলব।
একই ধরনের মত দেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান। তিনি বলেন, আমরা দাম বাড়ানোর পক্ষে নই। কিন্তু সরকার তো ঘরের থেকে দেশ চালায় না। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সরকারের তো সব অবস্থান ঠিক রেখে দেশ চালাতে হবে।