বিল্লাল হোসেন সোহাগ,শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন শেষ হয়েছে গত ৯ মে। কমিটি ঘোষনা হয়নি এখনও। জেলা আওয়ামীলীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটি ঘোষনা করা হবে বলে ওইদিন সম্মেলনের কাজ শেষ করা হয়। এদিকে এ কমিটি ঘোষনা একটু থেমে থাকার সুযোগে উপজেলার নৌকা বিদ্রোহীরা এবং অব্যহতি প্রাপ্তরা সোচ্চার হয়ে উঠেছে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে। এজন্য আওয়ামীলীগের দুর্দিনের কান্ডারী ও ত্যাগী নেতাদের সাথে নৌকা বিরোধীদের চলছে মিথ্যা ভিত্তিহীন অপপ্রচার ও পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ নৌকার টিকেট না পেয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে এবং অপর বিদ্রোহী প্রার্থী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফারুক আহম্মেদ নৌকার টিকেট না পেয়ে মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেন। কিন্তু নাইম সব বাঁধা পেরিয়ে ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। সেইসাথে ওই দুই বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। কিন্তু তার পরও থেমে নেই নৌকা বিদ্রোহীরা।
এদিকে ওই দুইজনের সাথে যোগ দেয় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক নেতা একেএম বেলায়েত হোসেন ও গোলাম মোস্তফা। উল্লেখিত বিদ্রোহীরা সম্প্রতি একাট্টা হয়ে সদ্য সাবেক সভাপতি ও এসএমএ ওয়ারেজ নাইমকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
সম্প্রতি ওই নৌকা বিদ্রোহীরা বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান নাইমের বিরুদ্ধে, বিগত সময় তিনি জাসদের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা নিয়ে এবং তৎকালে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতা ভোলা হত্যার ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা আসামী হওয়া নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন। এদিকে ওইসব সংবাদের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে ২৩ মে সংবাদ সম্মেলন করে নাইম। ওই নৌকা বিদ্রোহীরা প্রকাশ্যে এসে নাইম এর সংবাদ সম্মেলনের বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন গত ২৫ মে।
তবে এবিষয়ে সরিজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জানায়, নাইম ঝিনাইগাতি উপজেলায় দলের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই ওই গুটিকয়েক নৌকা বিদ্রোহীরা নানা ভাবে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠে। তারা গত ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনকে ঘিরে তৎকালীন সভাপতি প্রার্থী এসএমএ ওয়ারেজ নাইমের উপর হামলা চালায়। এসময় নাইমসহ ৩০ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়।
এবিষয়ে সদ্য সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. কামাল হোসেন জানায়, আমাদের সম্মেলন সম্প্রতি শেষ হয়েছে। দলের প্রধান বাছাই করে যাকেই দলের সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্ব দিবেন আমরা তার সাথেই আছি। তবে আমাদের সাবেক তিন বারের সভাপতি নাইম ভাইয়ের বিরুদ্ধে দলের ভিতরে কিছু কুচক্রি মহল নানা কুৎসা রটিয়ে যাচ্ছে তা ঠিক নয়।
সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম জানায়, দীর্ঘ দিন থেকে দলকে সু-সংগঠিত করা এবং দুর্দিনেও দলের হাল ধরে রেখে টানা ২৩ বছর ধরে দলের সভাপতি পদে থাকা নাইম ভাইয়ের বিরুদ্ধে দলের ভিতর কিছু কুচক্রি মহল কেবলমাত্র ঈর্ষান্বিত হয়ে যড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। যাতে অবহেলিত ঝিনাইগাতি উপজেলার মাটি ও মানুষের কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে নাইম বিদ্রোহী সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানায়, বিগত কমিটি গঠনের সময় নাইম একটি মিথ্যে মামলা দিয়ে আমাকে জেল খাটায়। তখন ওই কমিটিতে প্রকৃত আওয়ামীলীগের কেউ ছিলেন না।
সাবেক যুবলীগ সভাপতি ও উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ জানায়, তৎকালে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করেছি ঠিক কিন্তু সেসময় বিএনপি মাঠে ছিলেন না বলে কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেত থাকায় আমরা নির্বাচন করি এবং পরবর্তিতে দল থেকে শোকজ করলে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে আমাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও উপজেলা নির্বাচনের নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহম্মেদ জানায়, নাঈম এর বিপক্ষে আমরা তার ক্ষমতার কাছে না কুলাতে পেরে নির্বাচনে হেরেছি। সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদেরের সম্মতিতেই আমরা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিলাম। আমরা ষড়যন্ত্র করতে নয়, প্রকৃত আওয়ামীলীগকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই মাঠে নেমেছিি।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম জানান, আমি দলের দুর্দিনসহ টানা ২৩ বছর যাবত উপজেলা আওয়ামীলীগের শুধু সভাপতিই নই দলের এবং এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। ৫২ বছর যাবত ঝিনাইগাতী উপজেলা থেকে এমপি না থাকায় অধিকার বঞ্চিত মানুষের প্রাণের দাবি তারা এমপি চায়। ২০০১ সাল থেকে আমি মনোনয়ন চেয়ে আসছি, মানুষ আমাকে ভালোবাসে এটাই আমার বড় অপরাধ।এদিকে আওয়ামী লীগের প্রতি আমার এই একনিষ্ঠতার জন্য বিভিন্ন সময়ে কিছু সংখ্যক নৌকা বিদ্রোহী সোচ্চার হয়েছে এবং আমার প্রতি ইর্ষান্বিত হয়ে নানা মিথ্যাচার ও প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে, আমি যেন পুনরায় সভাপতি না হতে পারি। তবে আমার বিশ্বাস প্রধান মন্ত্রী আমাকে পুনরাই সভাপতি নির্বাচিত করে এলাকার জনগনের উন্নয়ন এবং দলকে আরো শক্তিশালী করতে সঠিক সিদ্ধান্তই নিবেন।