মোঃ আতিকুর রহমান শৈলকুপা ঝিনাইদহ প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ
ছিল পাঁকা রাস্তা, হয়ে গেছে মাটির। শুধু মাটির নয় রীতিমত কাঁদা-হাঁবড় তৈরী হয়েছে। গত ১ দশকের বেশী সময় ধরে সংষ্কার না হওয়ায় রাস্তাটির পিচ-পাথর উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন আর বোঝার উপায় নেই এখানে এক সময় পাঁকা রাস্তা ছিল।বর্তমান অবস্থা এতোটাই খারাপ, যানবাহন কেন পথচারীরা পাঁয়ে হেটেও যাতায়াত করতে পারে না। এই অবস্থা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দূর্গাপুর আর শৈলকুপা উপজেলার পিড়াগাতি গ্রামের মাঝের ২ কিলোমিটারের।স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তাটি এলজিইডি’র আওতাভুক্ত। দুই উপজেলার মাঝে হওয়ায় কোনো দপ্তরই সংষ্কারের উদ্যোগ নেন না। তাই বছরের পর বছর কাঁদায় নিমজ্জিত থাকে রাস্তাটি। মাত্র এই ২ কিলোমিটার ভাঙ্গাচুরা রাস্তা দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে দীর্ঘদিন।স্থানীয়রা বলছেন, সামান্য এই রাস্তাটির জন্য শৈলকুপা উপজেলার শেষ প্রান্তের মানুষগুলোর ঝিনাইদহ শহরে যেতে হয় ৩০ কিলোমিটার ঘুরে। দুই পাশে ৩২ কিলোমিটার পিচঢালা রাস্তা থাকলেও মাঝের মাত্র ২ কিলোমিটার চলাচলের একেবারেই অযোগ্য। তারা বিষয়টি নিয়ে সরকারের এলজিইডি দপ্তরে একাধিকবার চেষ্টা করেও রাস্তা ভালো করার কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। ফলে পার্শবর্তী কমপক্ষে ১০ টি গ্রামের মানুষকে কষ্ট করে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে।সরোজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কের ঝিনাইদহ অংশের পাঁচমাইল নামক স্থান থেকে উত্তর দিকে আরেকটি পিচঢালা রাস্তা চলে গেছে। এই রাস্তাটি ঝিনাইদহের বিজয়পুর, দুর্গাপুর, শৈলকুপার পিড়াগাতি, ফাদিলপুর হয়ে শৈলকুপা শহরে পৌচেছে। শৈলকুপা শহর থেকে ফাজিলপুর হয়ে পিড়াগাতি গ্রাম পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার পিচঢালা রাস্তা রয়েছে। আর দূর্গাপুর থেকে ঝিনাইদহ শহর পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার রাস্তাও পিচঢালা। কিন্তু দূর্গাপুর ও পিড়াগাতি গ্রামের মাঝে ২ কিলোমিটার রয়েছে ভাঙ্গাচুরা। সেখানে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। এই গর্ত পেরিয়ে ভারী যানবাহন, ভ্যান-রিক্সা দুরের কথা এখন আর পাঁয়ে হাটাও যায় না।দূর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর জানান, রাস্তাটি ১৫ থেকে ১৬ বছর পূর্বে পাঁকা করা হয়েছিল। সেই সময় পিচঢালা রাস্তা তৈরী করা হয়। এরপর আনুমানিক ১০ বছর পূর্বে ঝিনাইদহ এলজিইডির পক্ষ থেকে দূর্গাপুর গ্রামের বসতি এলাকার শেষ পর্যন্ত আর শৈলকুপা অফিসের পক্ষ থেকে পিড়াগাতি গ্রামের বসতি এলাকার শেষ পর্যন্ত মেরামত করা হয়। কিন্তু উভয় অংশে মাঠের মাঝে ২ কিলোমিটার কেউ মেরামত করেনি। ফলে ওই দুই কিলোমিটার ভেঙ্গেচুরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তিনি জানান, ওই স্থানটি এতোটাই ভেঙ্গেচুরে গেছে যে সেখানে তৈরী হওয়া গর্ত পেরিয়ে চলাচল সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন মাটি বেরিয়ে থাকায় গোটা রাস্তায় কাঁদায় নিমজ্জিত হয়েছে। এখন আর রাস্তাটি দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে এক সময় পাঁকা রাস্তা ছিল। যে রাস্তা দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতো। শৈলকুপা উপজেলার পিড়াগাতি গ্রামের আলিনুর রহমান জানান, ফাজিলপুর বাজারটি শৈলকুপা উপজেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত। এটি একটি বড় বাজার। এই বাজারের দোকানীরা অভিযোগ করেন এই সামান্য রাস্তাটির জন্য তারা ঝিনাইদহ শহরে মোকাম করতে পারছেন না। যারা করছেন তাদেরও শৈলকুপা শহর হয়ে ঝিনাইদহ যেতে হচ্ছে। এতে তাদের অতিরিক্ত ৩০ কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে। তারা দূর্গাপুর হয়ে ঝিনাইদহ গেলে মাত্র ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই যেতে পারে। এছাড়া তাদের এলাকায় উৎপাদিত কৃষি পন্যও সহজে বাজারজাত করতে পারছেন না এই ২ কিলোমিটার রাস্তার জন্য। এ বিষয়ে তারা একাধিকবার ঝিনাইদহ এলজিইডি অফিসে যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু রাস্তাটি সংষ্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।ওই সড়কের পাশের বাসিন্দা ইউনুচ আলী জানান, তারা এতোদিন কষ্ট করে পাঁয়ে হেটে মাঠে গরু-ছাগল নিয়ে যেতেন। এখন আর সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, প্রায়ই শোনা যায় এবার রাস্তাটি পাঁকা হবে, কিন্তু হয় না। দুই উপজেলার মাঝামাঝি হওয়ায় কেউ রাস্তাটির দায়িত্ব নিতে চান না। রাস্তায় চলাচলকারী একটি লাটা গাড়ির চালক আব্দুস সাত্তার জানান, তারা দূর্গাপুরের শেষ প্রান্তে যেখানে পাঁকা শেষ হয়েছে সেই পর্যন্ত যান। এরপর যাত্রীরা কষ্ট করে পাঁয়ে হেটে পিড়াগাতি গ্রামে পৌছান। সেখানে অপেক্ষায় থাকা অন্য গাড়িতে উঠে গন্তব্যে যান। মাঝে মধ্যে যাত্রীরা কাঁদায় হাটতে গিয়ে কাঁদামাটি মেখে আসেন। দূরত্ব কম হওয়ায় তারা কষ্ট হলেও এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন জানান, এই রাস্তাটি সংষ্কারের জন্য কয়েকদফা উচ্চ পর্যায়ে লিখেছেন। কিন্তু এখনও বরাদ্ধ পাননি। আবারো বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করবেন বলে তিনি জানান। বরাদ্ধ পেলেই দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
৭ views